‘শাসকগোষ্ঠি শিক্ষা দিবসের শহীদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে’

সিলেট মিরর ডেস্ক


সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০
০৬:০১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১৮, ২০২০
০৬:০৬ পূর্বাহ্ন



‘শাসকগোষ্ঠি শিক্ষা দিবসের শহীদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে’

দেশের শাসকগোষ্ঠি শিক্ষা দিবসের চেতনা ও শহীদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে বলে শিক্ষা দিবসে আয়োজিত সমাবেশে মন্তব্য করেছেন বক্তারা।

সমাবেশে বক্তারা বলেন, মহান শিক্ষা দিবসের অঙ্গিকার আমাদের শাসক দল বাস্তবায়ন করেনি। এর মাধ্যমে আমাদের শাসকদল শিক্ষা দিবসের চেতনা ও শহীদদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করেছে। শিক্ষাকে করা হয়েছে বাণিজ্যিকীকরণ সাম্প্রদায়িক। বাণিজ্যিকীকরণের কারণে প্রাথমিক থেকে শুরু করে উচ্চ শিক্ষায় ঝরে পড়ছে অসংখ্য শিক্ষার্থী। সেই সঙ্গে কোনো শিক্ষা প্রতিষ্টানে নেই মুক্তবুদ্ধির চর্চাও।

গতকাল বৃহস্পতিবার শিক্ষা দিবস উপলক্ষে দিনব্যাপি বিভিন্ন ছাত্র সংগঠনের উদ্যোগে আয়োজিত কর্মসূচিতে বক্তারা এসব কথা বলেন।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট: মহান শিক্ষা দিবস উপলক্ষে সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট মহানগর শাখার উদ্যোগে বৃহস্পতিবার বিকেলে আম্বরখানা দলীয় কার্যালয়ের সামনে মানববন্ধন ও সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট মহানগর শাখার আহ্বায়ক সনজয় শর্মার সভাপতিত্বে সমাবেশে বক্তব্য দেন বাসদ নেতা প্রণব জ্যোতি পাল, ছাত্র ফ্রন্ট নেতা পল্লব শাহা, ঋত্বিক রোশান, ইমন আহমদ, তুহিন ইসলাম প্রমুখ।

সমাবেশে বক্তরা বলেন, শিক্ষা আজ সার্বজনীন না হয়ে বাণিজ্যের মাধ্যম হয়ে গেছে। শিক্ষা বাণিজ্যের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে।

সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট (মার্কসবাদী): সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট সিলেট নগর শাখা সকালে মিছিল সমাবেশ করে। মিছিলটি সিলেট শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে নগরের সিটি পয়েন্টে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়। নগর শাখার সভাপতি সঞ্জয় কান্ত দাসের সভাপতিত্বে ও সাধারন সম্পাদক সাদিয়া নোশিন তাসনিমের পরিচালনায় অনুষ্ঠিত সমাবেশে বক্তব্য দেন নগর শাখার দপ্তর সম্পাদক পলাশ কান্ত দাস, বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সংগঠক নিশাত কর সানি, মদনমোহন কলেজ শাখার সংগঠক মো. সাকিব রানা প্রমুখ।

বক্তারা বলেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠি শিক্ষাকে সাম্প্রদায়িক করতে চেয়েছিল। কিন্তু এদেশের সাধারণ শিক্ষার্থীরা তা মেনে নেয়নি। ৬২'র শিক্ষা আন্দোলনে শহীদদের রক্তে মূলত সবার জন্য বিনামূল্যে শিক্ষার দাবি উচ্চারিত হয়েছিল। শিক্ষা সংক্রান্ত সকল দাবির সঙ্গে বাস্তবে আইয়ুবের স্বৈরশাসনের বিরুদ্ধে ছাত্র জনতা রক্ত ঝড়েছে। অথচ আজ স্বাধীনতার ৪৯ বছর অতিক্রান্ত কিন্তু সর্বজনীন শিক্ষার অধিকার বাস্তবায়ন হয়নি,বরং টাকার বিনিময়ে শিক্ষা বিক্রি হয়েছে। স্বাধীনতার পর প্রণীত প্রতিটি শিক্ষানীতিতে বেসরকারিকরণ বাণীজ্যীকীকরণকে অবারিত করছে। এই করোনাকালীন সময়েও সরকার শিক্ষার্থীদের পক্ষে দাড়াঁয়নি। চলতি বছরের শিক্ষার্থীদের মেস ভাড়া ইত্যাদি মওকুফে কার্যকর কোনো উদ্যোগ নেয়নি। শুধুমাত্র ব্যবসায়িক স্বার্থে অনলাইন ক্লাস চালু করেছে।

বক্তারা, করোনার সময় শিক্ষার্থীর সকল প্রকার বেতন, সেমিস্টার ফি মওকুফের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানান।

সিলেট জেলা ছাত্র ইউনিয়ন: মহান শিক্ষা দিবসে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ করেছে বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন সিলেট জেলা সংসদ। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেলে সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধাঞ্জলি অর্পণ ও সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করে সংগঠনটি।

সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বক্তারা বলেন, পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী শিক্ষাকে বাণিজ্যিকীকরণের জন্য শরীফ কমিশন গঠন করেছিল। তৎকালীন ছাত্র সমাজ দেশের শ্রমজীবী, মেহনতি মানুষকে নিয়ে রক্তের বিনিময়ে সেই সময় শিক্ষার বাণিজ্যিকীকরণ রুখে দেয়। কিন্তু ২০২০ সালে দাঁড়িয়েও যখন দেখা যায় শিক্ষাকে পণ্যে রূপান্তরের ঘৃণ্য পাঁয়তারা চলমান, তখন বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন তার ইতিহাস অর্পিত দায়িত্বের কথা স্মরণ করে বলতে চায়, সবার জন্য বিজ্ঞানভিত্তিক, একই ধারার শিক্ষার সুযোগ সৃষ্টি না হওয়া পর্যন্ত ছাত্র ইউনিয়নের লড়াই অব্যাহত থাকবে।

সমাবেশে বক্তারা করোনাকালে সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীদের বেতন মওকুফ, সব শিক্ষার্থীদের জন্য সমান সুযোগ তৈরি না করে অনলাইন ক্লাস নেওয়া বন্ধ, জাতীয় বাজেটের ২৫ ভাগ শিক্ষাখাতে বরাদ্দ, সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র সংসদ নির্বাচন এবং শিক্ষা শেষে কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নিশ্চিত করণের দাবি জানান।

উল্লেখ্য, ১৯৬২ সালের এই দিনে পাকিস্তানি শাসন, শোষণ ও শিক্ষা সংকোচন নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করতে গিয়ে শহীদ হন গোলাম মোস্তফা, ওয়াজিউল্লা, বাবলু, সুন্দর আলীসহ নাম না-জানা অনেকেই। তাদের স্মরণে প্রতিবছর এই দিনকে শিক্ষা দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

আরসি-