শিপার আহমেদ, বিয়ানীবাজার
                        আগস্ট ১৮, ২০২০
                        
                        ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন
                        	
                        আপডেট : আগস্ট ১৮, ২০২০
                        
                        ০৬:১৬ পূর্বাহ্ন
                             	
 
                        
             
    আজ ১৮ আগস্ট ঐতিহাসিক নানকার বিদ্রোহের ৭১ বছরপূর্তি। সিলেট অঞ্চলে জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে গৌরবময় কৃষক আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত একটি দিন আজ। প্রতিবছর দিবসটি পালন করা হয় অধিকার আদায়ের চেতনাদীপ্ত প্রতীক হিসেবে। জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে বিদ্রোহের ধারাবাহিকতায় ১৯৪৯ সালের এই দিনে সিলেটের বিয়ানীবাজার উপজেলার শানেশ্বর গ্রামে পুলিশের গুলিতে শহীদ হন পাঁচ কৃষক। এরও আগে এই আন্দোলনে প্রাণ হারান আরেকজন কৃষক। নানকার বিদ্রোহ দিবসে আজ স্মরণ করা হবে এই ছয় শহীদকে। নানকার বিদ্রোহের রক্তাক্ত স্মৃতিবিজড়িত শানেশ্বর গ্রামের সুনাই নদী তীরবর্তী নানকার স্মৃতিসৌধে আজ মঙ্গলবার সকালে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানাবে বিভিন্ন সংগঠন। হবে আলোচনা সভা।
জানা যায়, ‘নান’ শব্দের অর্থ রুটি। রুটি দিয়ে অর্থাৎ খাবার দেওয়ার বিনিময়ে কেনা গোলামরাই নানকার। সামন্তবাদী এই ব্যবস্থা প্রচলিত ছিল সিলেট অঞ্চলে। নানকার প্রজারা জমিদারের দেওয়া বাড়ি ও সামান্য কৃষিজমি ভোগ করতেন। কিন্তু ওই জমি ও বাড়ির উপর তাদের কোনো মালিকানা ছিল না। এই ব্যবস্থার বিরুদ্ধে ক্ষোভ দানা বাঁধলে কমিউনিস্ট পার্টির পৃষ্ঠপোষকতায় আন্দোলন সংগঠিত করে কৃষক সমিতি। প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে ছিলেন কমিউনিস্ট নেতা কমরেড অজয় ভট্টাচার্য। আন্দোলন দমনের চেষ্টার একপর্যায়ে ১৯৪৯ সালের ১৮ আগস্ট সরকারের পুলিশ, ইপিআর ও জমিদারদের পেটোয়া বাহিনী শানেশ্বর ও উলুউরি গ্রামের মধ্যবর্তী সুনাই নদীর তীরে কৃষকদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে। সূচনা ঘটে এক রক্তাক্ত অধ্যায়ের। সরকারি বাহিনীর গুলিবর্ষণে নিহত হন উলুউরি গ্রামের ব্রজনাথ দাস চটই, দুই ভাই প্রসন্ন কুমার দাস ও পবিত্র কুমার দাস এবং মিয়ারী গ্রামের কটুমণি দাস। রামধন দাসের তরুণ পুত্র অমূল্য কুমার দাস সেদিন ঊরুতে গুলিবিদ্ধ হয়ে পুলিশের হাতে বন্দি হয়েছিলেন। তাঁকে জেলে পুরে রাখা হয়। দুইদিন পর সিলেটের জেলে বন্দি অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়। জমিদারি প্রথার বিরুদ্ধে গড়ে ওঠা আন্দোলনে এর আগে শানেশ্বর বাজারে পুলিশ ও জমিদার বাহিনীর হাতে প্রাণ হারান রজনী দাস। ১৮ আগস্টের ওই ঘটনায় আটক করে বিচারের মুখোমুখি করা হয় ৪৯ জন কৃষক ও আন্দোলনকারীকে। আন্দোলনের ধারাবাহিকতায় ১৯৫০ সালে সরকার জমিদারি প্রথা বাতিল করলে রদ হয় নানকার প্রথা আর কৃষকরা জমির মালিকানার স্বীকৃতি পান।
ঐতিহাসিক নানকার কৃষক বিদ্রোহ আন্দোলনের ৭১তম দিবস উদযাপন উপলক্ষে বিয়ানীবাজারে বিভিন্ন কর্মসূচি পালনের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এর অংশ হিসেবে আজ সকাল ১০টায় উপজেলার তিলপারা ইউনিয়নের সানেশ্বর-উলুউরি গ্রামের সুনাই নদী তীরবর্তী অবস্থিত নানকার স্মৃতিসৌধে পুষ্পার্ঘ অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হবে এবং সকাল ১১টায় অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা। পরে নানকার কৃষক বিদ্রোহ আন্দোলনের পটভূমি নিয়ে আব্দুল ওয়াদুদ রচিত নাটক ‘বিদ্রোহী নানকার’ মঞ্চায়ন করা হবে। এ কর্মসূচিতে উপস্থিত থাকার জন্য সকল শিক্ষা, সামাজিক-সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক সংগঠনকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন বিয়ানীবাজার সাংস্কৃতিক কমান্ডের সভাপতি আব্দুল ওয়াদুদ।
এছাড়া প্রতিবছরের মতো এবারও যথাযোগ্য মর্যাদায় ৭১তম ঐতিহাসিক নানকার কৃষক বিদ্রোহ দিবস পালন করবে বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বিয়ানীবাজার উপজেলা কমিটি। কর্মসূচির অংশ হিসেবে সকাল ৯টায় পঞ্চখন্ড গোলাবিয়া পাবলিক লাইব্রেরিতে জমায়েত হয়ে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদনে বিয়ানীবাজার উপজেলার তিলপাড়া ইউনিয়নের সানেশ্বর ও উলুউরি গ্রামের মধ্যবর্তী সুনাই নদীর তীরে নির্মিত শহীদ স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করা হবে। এরপর বিকেল ৩টায় পঞ্চখন্ড গোলাবিয়া পাবলিক লাইব্রেরির হলরুমে অনুষ্ঠিত হবে আলোচনা সভা।
সিপিবি আয়োজিত কর্মসূচিতে যোগদান করে দিবসটি যথাযোগ্য মর্যাদায় পালনের জন্য সবার প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি (সিপিবি) বিয়ানীবাজার উপজেলা কমিটির সভাপতি কমরেড এডভোকেট মো. আবুল কাসেম ও সাধারণ সম্পাদক কমরেড মো. আনিসুর রহমান।
এসএ/আরআর/বিএ-০২