সিলেট মিরর ডেস্ক
মে ১১, ২০২০
০৯:১১ অপরাহ্ন
আপডেট : মে ১১, ২০২০
০৯:১১ অপরাহ্ন
দেশে এক সপ্তাহ আগেও করোনাভাইরাসে মৃত্যু ও সুস্থ হওয়ার হার প্রায় সমান ছিল। করোনা রোগীর সুস্থতার মাপকাঠিতে পরিবর্তন আনার পর থেকে প্রতিদিন সুস্থতার হার বাড়ছে, কমছে মৃত্যুহার। গতকাল রবিবার পর্যন্ত সুস্থতার হার দাঁড়িয়েছে ৯২ দশমিক ১ শতাংশ। অর্থাৎ প্রতি ১০ জনের মধ্যে ৯ জনের বেশি সুস্থ হয়ে উঠছেন।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি সুস্থ হয়েছেন কিংবা মারা গেছেন—এমন মীমাংসিত ঘটনা (ক্লোজড কেস) বিশ্লেষণ করে এই তথ্য পাওয়া গেছে। মীমাংসিত ঘটনাগুলোতে দক্ষিণ এশিয়ায় বাংলাদেশের চেয়ে মৃত্যুহার বেশি শুধু ভারত ও আফগানিস্তানের। ভুটান ও নেপালে এখনও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে কেউ মারা যাননি। ফলে এই দুই দেশে সুস্থতার হার শতভাগ।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, গতকাল পর্যন্ত দেশে মীমাংসা হয়েছে এমন ঘটনার সংখ্যা ২ হাজার ৮৭৮। এর মধ্যে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৬৫০ জন। সুস্থতার হার ৯২ দশমিক ১ শতাংশ। আর মারা গেছেন ২২৮ জন। মৃত্যুর হার ৭ দশমিক ৯ শতাংশ।
তবে দেশে করোনা শনাক্ত রোগীদের তিন-চতুর্থাংশ বাসায় থেকে চিকিৎসা নিচ্ছেন। তাঁদের লক্ষণ মৃদু। বাকিরা হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। বাসায় থেকে চিকিৎসা নিয়ে কতজন সুস্থ হয়েছেন, সেটি স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হিসাবে নেই। এমন সুস্থ রোগীদের সংখ্যা পাওয়া গেলে সুস্থতার হার আরও বেশি হতো বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।
দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। এরপর থেকে ২ মে পর্যন্ত ৫৬ দিনে সুস্থ হয়েছিলেন ১৭৭ জন। অর্থাৎ গড়ে দৈনিক সুস্থ হয়েছেন তিনজনের মতো। ২ মে পর্যন্ত মারা যান ১৭৫ জন। ওই দিন পর্যন্ত সুস্থতার হার ও মৃত্যুহার প্রায় সমান ছিল।
৩ মে থেকে সুস্থ হওয়ার সংখ্যা হঠাৎ বেড়ে যায়। ওই দিন ৮৮৬ জন সুস্থ হওয়ার ঘোষণা আসে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে। সেদিন থেকে করোনা রোগীর সুস্থতার মাপকাঠিতে বদল আসে। নতুন চিকিৎসাবিধি (ট্রিটমেন্ট প্রটোকল) অনুযায়ী, লক্ষণ দেখে রোগীকে সুস্থ বলে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হচ্ছে।
আগে ২৪ ঘণ্টায় পরপর দুটি পরীক্ষায় শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত না হলে রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হতো। নতুন চিকিৎসাবিধি অনুযায়ী, পরপর তিন দিন অর্থাৎ ৭২ ঘণ্টা প্যারাসিটামল জাতীয় ওষুধ ছাড়াই জ্বর কমে গেলে এবং কাশি বা শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যার উল্লেখযোগ্য উন্নতি হলে রোগী ছাড়া পাচ্ছেন।
সুস্থতার মাপকাঠিতে বদল আসার পর ৩ মে থেকে গতকাল পর্যন্ত আট দিনে সুস্থ হয়েছেন ২ হাজার ৪৭৩ জন। এই সময়ে মারা গেছেন ৫১ জন। এর আগের আট দিনে অর্থাৎ ২৫ এপ্রিল থেকে ২ মে পর্যন্ত মারা যান ৩৫ জন।
আইইডিসিআরের সাবেক প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মুশতাক হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, আগে সুস্থতার ও মৃত্যুর হার অসামঞ্জস্যপূর্ণ ছিল। এখন যে হার এটিই স্বাভাবিকের কাছাকাছি চিত্র। অধিকাংশ ক্ষেত্রে ৩ থেকে ৫ দিনের মধ্যে আক্রান্ত ব্যক্তির উপসর্গ চলে যায়। কিন্তু রোগীকে কমপক্ষে ১৪ দিন হাসপাতালে রেখে পরপর দুটি পরীক্ষায় করোনা নেগেটিভ না হলে ছাড়পত্র দেওয়া হতো না। এখন সুস্থ রোগীর সংখ্যা বাড়ায় মৃত্যুহার কমে এসেছে।
পরিসংখ্যান নিয়ে কাজ করা ওয়েবসাইট ওয়ার্ল্ডোমিটার শুরু থেকে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের করোনাবিষয়ক হালনাগাদ তথ্য দিয়ে আসছে। গতকাল সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ওয়ার্ল্ডোমিটারের পরিসংখ্যানে দেখা যায়, মীমাংসিত ঘটনাতে মৃত্যুহারের দিক থেকে দক্ষিণ এশিয়ার আটটি দেশের মধ্যে বাংলাদেশ তৃতীয়।
ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য অনুযায়ী, মীমাংসিত ঘটনাগুলোর মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ায় মৃত্যুহার সবচেয়ে বেশি আফগানিস্তানে। দেশটিতে মৃত্যুহার সাড়ে ১৮ শতাংশ। ভারতে মৃত্যুহার ৯ দশমিক ৮ শতাংশ, পাকিস্তানে সাড়ে ৭ শতাংশ, মালদ্বীপে সাড়ে ৬ শতাংশ ও শ্রীলঙ্কায় ৩ দশমিক ৩৫ শতাংশ।
এনপি-০৩