সিলেট মিরর ডেস্ক
মে ০৫, ২০২০
০৩:৪০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ০৫, ২০২০
০৩:৪০ পূর্বাহ্ন
ওয়েবসাইটে দেখা যাচ্ছে, মৃতের সংখ্যা ১৭৭, সুস্থ হয়ে ফেরার সংখ্যাও ১৭৭, অথচ আগের দিন (রবিবার) প্রেসব্রিফিংয়ে মৃতের সংখ্যা ১৭৭ বলা হলেও রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া মানুষের সংখ্যা বলা হয়েছিল এক হাজার ৬৩।
এটা করোনা সংকট মোকাবিলায় সমন্বয়হীনতার একটা দৃষ্টান্ত মাত্র। এমন দৃষ্টান্ত আরো অনেক দেয়া যাবে।
অবশ্য বিষয়টাকে অন্যভাবেও দেখা যেতে পারে।
মনে হতেই পারে যে, দায়িত্বশীলদের অনেকে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষের সুনজরে থাকার খুব চেষ্টা করছেন, কিন্তু জাতীয় দুর্যোগ গুরুত্ব দিয়ে মোকাবেলার চেষ্টা ঠিক সেভাবে তারা করছেন না। তাদের কাছে মনে হয় ‘চাকরি বাঁচানো’ এবং ব্যক্তিগত উন্নতির ধারা অব্যাহত রাখাই ‘ফরজ’।
এই প্রবণতা নতুন কিছু নয়।
তবে মারণব্যাধি মোকাবিলা করার সময়ও প্রশাসনকে পুরনো এই ব্যাধি থেকে মুক্ত রাখতে না পারা সরকারের জন্য খুব বড় ব্যর্থতা।
বিজ্ঞানীরা এখনও জানেন না ঠিক কিভাবে কোভিড-১৯ এর উৎপত্তি হয়েছে। তবে সা¤প্রতিক বছরগুলোতে সোয়াইন ফ্লু এবং বার্ড ফ্লু শূকর এবং মুরগি থেকে ছড়িয়েছে এটা অন্তত নিশ্চিত। মহামারির ঝুঁকি বাড়তে থাকা এবং এর সঙ্গে প্রাণীদের সংযোগ পাওয়ায় খামারে পশুপালন নিয়ে নতুন করে শুরু হয়েছে চিন্তাভাবনা।
মূলত এ কারণেই বাংলাদেশের মানুষ বেশি ভুগছে। হ্যাঁ, করোনা সংকটেও ভোগান্তির মূল কারণ এটাই। ‘দায়িত্বশীলরা’ সব কাজ সততা নিয়ে, গুরুত্ব দিয়ে করলে দেশে ‘‘লকডাউন আছে এবং লোকজন নেই’’-এর মতো অদ্ভুত পরিস্থিতি কখনোই তৈরি হতো না।
যেসব দেশ করোনা সংকট মোকাবেলায় খুব দ্রুত ব্যবস্থা নেয়নি, তাদের জন্য সংকট ভয়াবহ হয়ে উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্র, ইটালি, স্পেন, ব্রিটেন, ইরান ইত্যাদি তার প্রমাণ। দেরিতে সক্রিয় হওয়া দেশগুলোর স্বাস্থ্যব্যবস্থাও উন্নত না হলে তো আরো মুশকিল।
আর বাস্তবতা হলো, করোনা সংকটকে বাংলাদেশ কার্যত অনেক দেরিতেই গুরুত্ব দিয়েছে এবং এ দেশের স্বাস্থ্যব্যবস্থা অর্থনীতির চেয়েও অনেক বেশি দুর্বল। সুতরাং লড়াইটা যে যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেন, ইরানের চেয়ে অনেক কঠিন হবে সে বিষয়ে কোনো সন্দেহ নেই। মৃতের সংখ্যা এখনো কম, সংক্রমণের হার খুব বেশি নয়- ইত্যাদি বলে যারা এখনো তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলছেন অচিরেই তারা লজ্জায় মুখ লুকালে খুব অবাক হবো না।
কার্যকর উদ্যোগের পাশাপাশি তথ্য পরিবেশনে স্বচ্ছতা, বিশ্বাসযোগ্যতা না বাড়ালে সংকট বাড়তেই থাকবে।
এ আশঙ্কা আরো বাড়িয়েছে সুস্থ হয়ে ফেরা রোগীর সংখ্যা নিয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের দেয়া তথ্য। রবিবার অধিদপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে জানানো হয়েছে, নতুন ক্লিনিক্যাল মানেজমেন্ট কমিটির গাইডলাইন অনুযায়ী, এ পর্যন্ত সুস্থ হয়ে ফেরা রোগীর সংখ্যা এক হাজার।
সংখ্যাটি হঠাৎ বেড়ে যাওয়ায় অনেকের মনে সংশয় দেখা দিয়েছে। বিশ্বাস করতে পারছেন না অনেকেই। গণমাধ্যমে অবশ্য সরকারের পক্ষ থেকে এর একটা ব্যাখ্যা দেয়া হচ্ছে। বলা হচ্ছে, অল্প সময়ের ব্রিফিংয়ে সব তথ্য বিস্তারিতভাবে দেয়া যায় না, মূলত এ কারণেই নাকি কিঞ্চিৎ অবিশ্বাস্য এই সংখ্যা বৃদ্ধি। আরো বলা হচ্ছে, করোনায় সংক্রমিত হলে সেরে উঠতে উঠতে ২৪ দিনও লেগে যায়, সুতরাং সুস্থ হয়ে ফেরার সংখ্যা নিয়ে প্রতিদিন নতুন তথ্য দেয়া সম্ভব নয়।
প্রতিদিন নতুন নতুন তথ্য দিতেই হবে এমন কোনো কথা নেই। তা প্রত্যাশিতও নয়।
তবে প্রেস ব্রিফিংয়ে বলা হবে এক কথা, ওয়েবসাইটে থাকবে আরেক তথ্য- এমনটি একেবারেই অপ্রত্যাশিত। করোনা সংকট ছেলেখেলার বিষয় নয়। যে-কোনো উপায়ে যা খুশি তথ্য দিলেই বিশ্বাস করতে কেউ বাধ্য নয়।
এজএসএস-০২/বিএ-০৮