সিলেট মিরর ডেস্ক
মে ০৩, ২০২০
০৬:২২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মে ০৩, ২০২০
০৬:২২ পূর্বাহ্ন
গণস্বাস্থ্যের ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’ প্রকল্পের কিট তৈরির জন্য অবশেষে ইংল্যান্ড থেকে এলো রিএজেন্ট। লকডাউন শিথিল হওয়ায় শনিবার (২ মে) একটি বিশেষ ফ্লাইটে লন্ডন থেকে ঢাকা হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরে পৌঁছে এ রিএজেন্ট। যা দিয়ে আরও অন্তত এক লাখ কিট তৈরি করতে পারবেন গণস্বাস্থ্যের বিজ্ঞানীরা।
রিএজেন্ট আসার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ট্রাস্টি ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ড থেকে আমরা যে রিএজেন্ট আনতে চেয়েছিলাম, সেটি আজ সকালে ঢাকায় এসে পৌঁছেছে। এগুলো দিয়ে আমরা অন্তত এক লাখ কিট বানাতে পারব। তবে আমাদের টার্গেট দশ লাখ কিট বানানো।’
‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’ প্রধান বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল বলেন, লকডাউন শিথিল হওয়ায় আমরা ইংল্যান্ডের রিএজেন্টগুলো হাতে পেয়েছি। অন্য দেশের রিএজেন্টগুলোও একটু একটু করে আমাদের হাতে আসতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ ওষুধ প্রশসানের কাছ থেকে গত ১৮ মার্চ রিএজেন্ট আমদানির অনুমোদন পাওয়ার পরই ইংল্যান্ডের দ্যা নেটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানির (THE NATIVE ANTIGEN COMPANY) কাছ থেকে দশ প্রকারের ১০০ কেজি রিএজেন্ট আমাদানির জন্য এলসি খোলে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র এবং দ্রুততার সঙ্গে রিএজেন্টগুলো সরবরাহের জন্য ইংল্যান্ডের ওই কোম্পানিকে তাগিদ দেয় তারা।
বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্দি করে দ্যা নেটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানি ২৫ মার্চের মধ্যে রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পৌঁছে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু করোনাভাইরাসের কারণে বিশ্বযোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়ায় প্রথম দফায় একবার তারিখ পরিবর্তন করে ইংল্যান্ডের কোম্পানিটি।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রকে তারা জানায়, ৩০ মার্চের মধ্যেই রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পৌঁছে দেবে। কার্গো বিমানে আকাশপথে আসবে রিএজেন্টগুলো।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, ৩০ মার্চ রিএজেন্টগুলো হাতে পাওয়া যাবে— এমন হিসাব-নিকাশ মাথায় রেখে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা পুরো প্রস্তুতি নেন। বাংলাদেশের বাজারে থাকা প্রোডাক্টগুলো সংগ্রহের জন্য হোম কোয়ারেনটাইনে যাওয়া ব্যবসায়ীদের বাসা থেকে বের করে আনেন তারা।
গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের ল্যাবরেটরিতে কর্মরত এক্সপার্ট, সাধারণ কর্মী— সবার ছুটি বাতিল করে দিনরাত চলে কোভিড-১৯ টেস্ট পদ্ধতির ফর্মুলা আপডেটের কাজ। ড. বিজন কুমার শীলের নেতৃত্বে চলতে থাকে বিশাল কর্মযজ্ঞ। আর অভিভাবক হিসেবে সবাইকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ ও দিক-নির্দেশনা দিয়ে যান গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের প্রতিষ্ঠাতা ডা. জাফরুল্লাহ চৌধুরী।
কিন্তু ৩০ মার্চ বিকেলে ইংল্যান্ডের দ্যা নেটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানির কাছ থেকে খবর আসে, আকাশপথ যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ায় রিএজেন্টগলো তারা পাঠাতে পারছেন না। তারা চেষ্টা করছে, বিকল্প উপায়ে দ্রুত রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পৌঁছাতে।
সংশ্লিষ্ট সূত্রমতে, দ্যা নেটিভ অ্যান্টিজেন কোম্পানি চেয়েছিল নিয়মিত কার্গো বিমানে রিএজেন্টগুলো পাঠানো সম্ভব না হলে বিশ্বভিত্তিক ডাক পরিষেবা ‘ফিডেক্স এক্সপ্রেস’ (FedEx Express)- এর প্রাইভেট কার্গো বিমানে করে ৬ এপ্রিলের মধ্যে রিএজেন্টগুলো ঢাকায় পাঠাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত সেটাও করতে পারেনি তারা। উপায় না দেখে ৫ এপ্রিল চীন থেকে দশ কেজি রিএজেন্ট আমদানি করে গণস্বাস্থ্য।
চীন থেকে আমদানি করা রিএজেন্ট দিয়ে দশ হাজার কিট তৈরি করেছেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা। সেই কিট অনুমোদনের জন্য ওষুধ প্রশাসনের কাছে আবেদনও করেছে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র। এরই মধ্যে এক্সটার্নাল ভ্যালিডেশনের জন্য বিএসএমএমইউকে অনুমতি দিয়েছে ওষুধ প্রশাসন।
এদিকে শনিবার (২ মে) বিএসএমএমইউ’র ভিসির সঙ্গে বৈঠক করেছেন ‘জিআর কোভিড-১৯ ডট ব্লোট’ প্রকল্পের তিন বিজ্ঞানী ড. বিজন কুমার শীল, ডা. মুহিব উল্লাহ খন্দকার ও ড. নিহাদ আদনান।
আমলাতান্ত্রিক জটিলতা কাটিয়ে ওঠার জন্য গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীদের এই দৌড়া-দৌড়ির মধ্যেই শনিবার সকালে ইংল্যান্ড থেকে রিএজেন্ট এসে ঢাকায় পৌঁছেছে। যে রিএজেন্ট দিয়ে আরও এক লাখ কিট তৈরি করতে পারবেন গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রের বিজ্ঞানীরা।
বিএ-১৩