নিজস্ব প্রতিবেদক
অক্টোবর ০৮, ২০২৫
০৪:৪৭ অপরাহ্ন
আপডেট : অক্টোবর ০৯, ২০২৫
০৩:৫২ অপরাহ্ন
সুনামগঞ্জের বালুমহাল যাদুকাটা-১ ও যাদুকাটা-২ বিলুপ্ত ঘোষণা করে যাদুকাটা নদীকে প্রতিবেশ সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করার দাবিতে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে যাদুকাটা নদী রক্ষা আন্দোলন।
আজ বুধবার (৮ অক্টোবর) বিকাল সাড়ে তিনটায় সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।
যাদুকাটা নদী তীরবর্তী কয়েকটি গ্রামের লোকজন এবং সিলেটের নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা উক্ত মানববন্ধনে বক্তব্য রাখেন।
যাদুকাটা তীরবর্তী গ্রামের কয়েকজন বক্তা বলেন, ‘যাদুকাটা নদীর পাড় কাটার ফলে আমাদের ২০ টি গ্রামের বাড়িঘর হুমকির মুখে। ইতোমধ্যে অনেক বাড়িঘর, ফসলি জমি, রাস্তা ঘাট নদী গর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের ভিটামাটি রক্ষা করার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানাই। গ্রাম বাঁচাতে আমরা ইজারা প্রথা বাতিল করার দাবি জানাচ্ছি। মানববন্ধন আয়োজক কমিটির সদস্য এবং পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সভাপতি কাসমির রেজা বলেন, যাদুকাটা নদীর পরিবেশ রক্ষা করতে হলে এই নদীকে প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা ঘোষণা করতে হবে। একই সাথে স্থানীয় শ্রমিকদের ন্যায্য অধিকার আদায়ের জন্য সনাতন পদ্ধতিতে পরিবেশ সম্মত উপায়ে কমিউনিটিভিত্তিক বালু পাথর আহরণের সুযোগ করে দিতে হবে।’
যাদুকাটা নদী রক্ষা আন্দোলন এর আয়োজনে এবং পরিবেশ ও হাওর উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতায় আয়োজিত এ মানববন্ধনে সভাপতিত্ব করেন যাদুকাটা পাড়ের বাসিন্দা কলামিস্ট গোলাম সারওয়ার।
সভাপতির বক্তব্যে গোলাম সারওয়ার বলেন, ‘আমরা ইজারাদার বা শ্রমিক কারো প্রতিপক্ষ নই। আমরা সিস্টেমের বিপক্ষে দাঁড়িয়েছি। এই ইজারা প্রথায় সরকার হয়তো সামান্য কিছু টাকা পায়, কিন্তু আমাদের অস্তিত্ব বিলীন হয়ে যাচ্ছে।’
উল্লেখ্য বিগত বিশ বছর যাবত যাদুকাটা নদীর পাড় কাটার ফলে নদীর আয়তন কয়েকগুণ বেড়ে গেছে। আজ থেকে পঁচিশ বছর আগে এই নদী ছিল মাত্র ৫৭ ফুট প্রসস্থ। পাড় কাটার ফলে এখন কিছু জায়গায় নদীটি এক কিলোমিটারের চেয়েও বড় হয়ে গেছে। আশেপাশের অনেক ফসলি জমি ও বাড়ি ঘর নদী গর্ভে তলিয়ে গেছে। তাই পাড় কাটা বন্ধের জন্য এলাকার মানুষ দীর্ঘ দিন ধরে আন্দোলন করে আসছেন।
এ নদীতে দুটি বালুমহাল রয়েছে যা যাদুকাটা-১ এবং যাদুকাটা-২ বালুমহাল নামে পরিচিত। যাদুকাটা-১ বালুমহালটি তাহিরপুর উপজেলার চালিয়ারঘাট মৌজায় এবং যাদুকাটা-২ বালুমহালটি বিশ্বম্ভরপুর ও তাহিরপুর মৌজার চালিয়ারঘাট, লাউর এবং ইকরাটিয়া মৌজায় অবস্থিত।
এ বালুমহাল দুটি ইজারা প্রদানের ফল বালুমহাল ও বালুমহালের বাইরে থেকে যান্ত্রিক উপায়ে বালু উত্তোলনের ফলে পর্যটনকেন্দ্র শিমুল বাগান, বারেক টিলা, শাহ আরেফিন সেতু, বিজিবি ক্যাম্প, লাউড়েরগড় বাজার, বিন্নাকুলী বাজার, ইসকন মন্দির, অদ্বৈত আখড়া, ঘাগটিয়া, সাহিদাবাদ, লাউড়েরগড়, গড়কাটি, মোদেরগাঁও, পাঠানপাড়া, মানিগাও, কুনাটছড়া, সোহালা, মিয়ারচর ও সত্রিশ গ্রামের অসংখ্য ঘরবাড়ি ও ফসলি জমি নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে বলে এলাকাবাসীর অভিযোগ রয়েছে।
এ বছর নদী ইজারা না দেওয়ার জন্য উচ্চ আদালতে মামলা থাকায় বেশ কিছুদিন ইজারা কার্যক্রম স্থগিত ছিল। সর্বশেষ নদীর পাড় না কাটা ও ড্রেজার মেশিন, বোমা মেশিন ব্যবহার না করার শর্তে বালুমহাল দুটি ইজারা দেওয়া হয়। কিন্তু ইজারা শর্ত লঙ্ঘন করে এখন যাদুকাটা নদী থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে।
এএফ/০৩