শাবিপ্রবি প্রতিনিধি
জুন ২১, ২০২৫
১১:০৮ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ২১, ২০২৫
১১:০৮ অপরাহ্ন
আজকের পৃথিবী যখন নানা সংকটে জর্জরিত, তখন একটি প্রশ্ন সামনে এসে দাঁড়ায়: এই সমস্যাগুলোর সমাধানে নেতৃত্ব কে দেবে? উত্তর একটাই, তরুণরাই ভবিষ্যতের চালিকাশক্তি। ঠিক সেই জায়গা থেকেই কাজ করছে ইউপিজি (ইউনাইটেড পিপল গ্লোবাল ), একটি আন্তর্জাতিক উদ্যোগ, যার মূল লক্ষ্য হচ্ছে তরুণদের মেধা ও মানবিকতা বিকাশের মাধ্যমে সমাজে ইতিবাচক পরিবর্তন আনা।
‘ইউপিজি সাস্টেইনেবিলিটি লিডারশীপ ’ নামক বৈশ্বিক প্রকল্পটির আওতায় তরুণদের নেতৃত্বগুণ, সামাজিক দায়িত্ববোধ, পরিবেশ ও মানবিকতার ওপর বিশেষ প্রশিক্ষণ প্রদান করা হয়।
সুইজারল্যান্ডের জেনেভা ভিত্তিক ইউনাইটেড পিপল গ্লোবাল এবং আমেরিকার হারিকেন আইল্যান্ড সেন্টার ফর সাইন্স এন্ড লিডারশীপের যৌথ উদ্যোগে জাতিসংঘের ১৭টি এসডিজি নিয়ে কাজ করার জন্য সম্ভাবনাময় তরুণদের মধ্য থেকে নেতৃত্ব তৈরির লক্ষ্যে কাজ করছে ‘ইউপিজি সাস্টেইন্যাবিলিটি লিডারশীপ প্রোগ্রাম-২০২৫’। প্রতিবছরের মতো এবারও বিশ্বের ১২০টি দেশের প্রায় ১৪ হাজার শিক্ষার্থীদের অংশগ্রহণে ১ম রাউন্ড অনুষ্টিত হয়। যেখানে শর্টলিস্টের মাধ্যমে সিলেক্ট হওয়া শিক্ষার্থীদের প্রায় ৯ সপ্তাহের ট্রেনিং সেশন আয়োজিত হয়। ইউপিজি মূলত তরুণ নেতৃত্ব তৈরির মাধ্যমে প্রত্যেককে নিজ সম্প্রদায়ের সমস্যা যেমন: দারিদ্র্য, ক্ষুধা, লিঙ্গবৈষম্য এবং জলবায়ু পরিবর্তন ইত্যাদি সমাধানের জন্য যোগ্য করে তোলার লক্ষ্যে কাজ করছে। এটি টেকসই বিশ্ব নির্মাণে এসডিজি এর ১৭টি লক্ষ্য অর্জনের ভিত্তিতে এটি আগ্রহী তরুণদের নিয়ে কাজ করছে। নয় সপ্তাহের এই প্রোগ্রাম শেষে ৫০০জন শিক্ষার্থীকে সার্টিফিকেট প্রদান এবং ৬০জন শিক্ষার্থীকে আমেরিকার হারিকেন আইল্যান্ডে ফুল ফান্ডিংয়ে এক সপ্তাহের জন্য ট্রেইনিংয়ে নেওয়া হবে।
‘ইউপিজি সাস্টেইন্যাবিলিটি লিডারশীপ প্রোগ্রাম -২০২৫’ এ শর্টলিস্টে সিলেক্ট হওয়া শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের পলিটিক্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শামছুন্নাহার বলেন ‘আমার ডিপার্টমেন্টের সিনিয়র ভাই হাবিবুর রহমান মাসরুর ২০২৩ সালে এই প্রোগ্রামে অংশগ্রহণ করে আমেরিকার হারিকেন আইল্যান্ডে হওয়া ট্রেনিং সেশনে যোগদান করেছিলেন। পরবর্তীতে ২০২৪ সালে আমার ব্যাচমেট রাজু, জসিম এবং বান্ধবী নিহা এবং নুপুর খানমের মাধ্যমে এ প্রোগ্রাম সম্পর্কে জানতে পেরেছি। তাদের অনুপ্রেরণা, পরামর্শ ও দিকনির্দেশনায় আমি এই প্রোগ্রামে আমার অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে পেরেছি।’
তিনি আরো বলেন, এই প্রোগ্রাম শুধু একটি প্রশিক্ষণ নয়, এটি একটি জীবনবদলানো যাত্রা। যেখানে একজন তরুণ নিজের ভেতরের শক্তিকে আবিষ্কার করে, সমাজের জন্য কিছু করতে শেখে এবং নেতৃত্ব দিতে শেখে।
এছাড়াও তিনি আরো বলেন, ‘আমি আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের আবাসিক হলের ছাত্রীদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা নিয়ে আলোচনা করেছি। তাদেরকেও উৎসাহিত করেছি সবাই যেন নিজেদের জায়গা থেকে নিজেদের সম্প্রদায়, সমাজ ও দেশের জন্য উন্নয়নমূলক পরিবর্তন নিয়ে আসে।’
তিনি আরো বলেন যে, ‘আমি আমার সহপাঠী, সিনিয়র, জুনিয়র এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে মিনি ট্রেনিং সেশন আয়োজন করে সেখানে তাদের এইসকল বৈশ্বিক সমস্যা সম্পর্কে সতর্কীকরণ, প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টি সম্পর্কে অবগত করি। এছাড়া আমি বিভিন্ন শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে গিয়ে সেখানকার শিশুদের মাঝে গুণগত শিক্ষা অর্জনের প্রতি উৎসাহ প্রদান, শিক্ষার মাধ্যমে দারিদ্রতা দূরীকরণ, দূষণমুক্ত ও স্বাস্থ্যসম্মত পরিবেশ সৃষ্টি এবং তা বজায় রাখা, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে সকলের সহযোগিতায় টেকসই বিশ্ব নির্মাণে কাজ করার জন্য তাদের অবগত করি।’
শামছুন্নাহার বলেন, ইউপিজি এমন একটি প্লাটফর্ম যেখানে এসডিজি এর ১৭টি লক্ষ্য অর্জনে উৎসাহী তরুণদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি এবং সকলের মাঝে একটি সৌহার্দপূর্ণ শক্তিশালী সম্পর্ক সৃষ্টির মাধ্যমে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য প্রস্তুত করে তুলছে।
বাংলাদেশের জন্য এমন উদ্যোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ আমাদের দেশের ৬৫% জনসংখ্যাই তরুণ। এই বিশাল জনশক্তিকে যদি সঠিকভাবে নেতৃত্বের পথে পরিচালিত করা যায়, তবে আমরা শুধু উন্নয়নশীল নয়, একটি মানবিক, সচেতন এবং দায়িত্ববান জাতি হিসেবে গড়ে উঠতে পারব।
ইউপিজি যেভাবে তরুণদের মেধা ও মানবিকতাকে একত্র করে গড়ে তুলছে ভবিষ্যতের নেতৃত্ব, তা নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। এমন উদ্যোগ আরও বিস্তৃত হওয়া উচিত যাতে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলের তরুণরাও নিজেদের পরিবর্তনের অংশীদার হিসেবে গড়ে তুলতে পারে।
এএফ/১০