সিলেট মিরর ডেস্ক
জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
০৭:২৬ অপরাহ্ন
আপডেট : জানুয়ারি ১৯, ২০২৫
০৭:২৬ অপরাহ্ন
সাংবাদিক ও কথাসাহিত্যিক, চিন্তক এবং বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও প্রধান সম্পাদক মাহবুব মোর্শেদ-কে ঘিরে সিলেটে অনুষ্ঠিত হলো ‘আলাপ আড্ডা’ অনুষ্ঠান। অনুষ্ঠানে মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘রাষ্ট্র পুনর্গঠনের সুযোগ যেন হেলায় নষ্ট না হয়।’
শুক্রবার (১৭ জানুয়ারি) রাতে নগরের সুবিদবাজারের সিনেমোনে ব্যক্তিক্রমী এই অনুষ্ঠান আয়োজন করে প্রকাশনা সংস্থা চৈতন্য। আড্ডায় সিলেটের লেখক-সাহিত্যিক, সাংবাদিক, উন্নয়নকর্মী, পেশাজীবী ও তরুণ প্রজন্মের বিভিন্ন পর্যায়ের লোকজন অংশ নেন।
আড্ডায় লেখক-সাহিত্যিকদের নানা প্রশ্নের জবাব দেন মাহবুব মোর্শেদ। বক্তব্যে তিনি বলেন, ‘জুলাই অভ্যুত্থান আমাদের সামনে রাষ্ট্র পুনর্গঠনের সুযোগ এনে দিয়েছে। এই সুযোগ কাজে লাগিয়ে ভবিষ্যত প্রজন্মের জন্য একটি উপযোগী রাষ্ট্র গঠন করতে হবে। এটা যেন আমরা হেলায় নষ্ট না করি।’
বাসস এমডি বলেন, ‘তরুণরা ২০১৮ সালে নিরাপদ সড়ক আন্দোলন থেকে রাষ্ট্রমেরামতে কথা বলে আসছে। বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বেতন ফি আন্দোলন, কোটা সংস্কার আন্দোলন সব জায়গায় তারা একই দাবি তুলেছিল। সবশেষ বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন ছিল বেকারত্বের বিরুদ্ধে আন্দোলন।’
তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ সরকারের ১৫ বছরে আমাদের অর্থনীতিকে ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছে, লুটপাট করা হয়েছে, রিজার্ভ ধ্বংস করা হয়েছে। এর আবশ্যিক ফল হিসেবে বিনিয়োগ বাড়েনি, কর্মসংস্থান বাড়েনি। এটাই সার্বিকভাবে সারাদেশের তরুণদের মাঝে ছড়িয়ে গেছে যে আমার চাকরি পাওয়ার সম্ভাবনা নেই।’
মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন সংকীর্ণ জায়গা থেকে দেখলে হবে না। এটা আসলে নতুনভাবে জাতিগঠনের সুযোগ করে দিয়েছে। দেড় হাজার বা তারও বেশি শিক্ষার্থী-জনতার মৃত্যু, অসংখ্য মানুষের আহত হওয়ার মধ্য দিয়ে এই অর্জন। এই সুযোগটাকে কাজে লাগিয়ে আমরা রাষ্ট্রকে নতুনভাবে গড়তে পারি।’
তিনি কবি-সাহিত্যিক ও সাংবাদিকদের উদ্দেশে বলেন, ‘পুরনো কর্তৃত্ববাদ ছিল একনায়কতান্ত্রিক শাসন, আমাদের গণতন্ত্র ও প্রতিষ্ঠানগুলোকে ধ্বংস দেওয়ার আয়োজন। অর্থনীতি ও কর্মসংস্থান ব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দেওয়া এই ফ্যাসিবাদে যেন আর আমাদেরকে ফেরত যেতে না হয়। এই জায়গায় সাংবাদিক-সাহিত্যিকদের দায়িত্ব অনেক বেশি।’
অযথা কিছু কালচারাল বিতর্কের মধ্যে ফেলে দেওয়ার নানা ষড়যন্ত্র হচ্ছে উল্লেখ করে মাহবুব মোর্শেদ বলেন, ‘এই বিতর্ক কখনও আমাদের ভালো ফল নিয়ে আসবে না। আমাদের বরং মূল জায়গায় একত্রিত থাকতে হবে যেন রাষ্ট্রকে তরুণদের উপযোগী করে গড়ে তুলতে পারি। ভবিষ্যত প্রজন্মের উপযোগী রাষ্ট্র করে গড়ে তোলার সুযোগ এবার আমাদের সামনে এসেছে। এই সুযোগটাকে আমরা যেনো হেলায় নষ্ট না করি।’
কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষক প্রশান্ত মৃধা বলেন, ‘কবিতা ও সাহিত্যের মাহবুব মোর্শেদ আরও যতবেশি শ্রম দেওয়ার কথা ছিল সেটা আমরা পাচ্ছি না। ‘ব্যক্তিগত বসন্ত দিন’ এখনও পর্যন্ত আমার পড়া বাংলা ভাষার গুরুত্বপূর্ণ ছোটগল্পের একটি। স্যোশাল মিডিয়ায় ভিজুয়্যাল ও ভার্চুয়াল মাধ্যমে মানুষের যে আন্তঃসম্পর্ক রচনা করে সেই বিষয় নিয়ে উপন্যাস হতে পারে এমন ধারণা বাংলাদেশ-পশ্চিমবঙ্গে তার আগে কেউ করতে পারেনি। তিনি এই নিয়ে প্রথম উপন্যাসের রচনা করেছেন।’
মাহবুব মোর্শেদ-এর সম্প্রতি প্রকাশিত উপন্যাস বুনো অল নিয়ে তিনি বলেন, ‘বইটি বের হওয়ার পরেই পড়েছিলাম। আমার পুরনো মুগ্ধতার জায়গা অনেক বেশি দাবি রাখে। সে হিসেবে তার উপন্যাসের ট্রিটমেন্ট অনেক বেশি স্থিরতা দাবি করে। নানা ব্যস্ততার কারণে সেটা থেকে সে হয়তো কিছুটা দূরে আছে। কিন্তু আগামী দিনে যে কোনো সময় সে নতুন লেখা নিয়ে হাজির হবে, এই ব্যাপারে আমি আশাবাদী সবসময়।’
প্রশান্ত মৃধা আরও বলেন, ‘সাংবাদিকতায় অবহেলার জায়গা দুটো। একটি কৃষি অপরটি সাহিত্য। বাংলাদেশ এখনও দুর্ভিক্ষে না পড়ার অন্যতম কারণ কৃষিভিত্তিক সমাজ। দেশে কোনো একটি ফসল সারাদেশে ঠিকমতো উত্তোলন হলে যে দলই ক্ষমতায় থাকুক শাসকপক্ষ হাঁফছেড়ে বাঁচে। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ, কিন্তু সংবাদপত্রে কারওয়ান বাজারের রাস্তা ছাড়া এই দেশে আর কোনো তৎপরতা থাকতে পারে সাংবাদিক-সমাজের মাথায় আসে না।’ তিনি কৃষকের প্রতি বৈষম্য ও কৃষির সংবাদগুলো সংবাদপত্রে সঠিকভঅবে তুলে ধরার আহ্বান জানান।
শাবিপ্রবির রেজিস্ট্রার ছলিম মোহাম্মদ আব্দুল কাদির মাহবুব মোর্শেদের কাছে দেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর খবর গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরার আহ্বান জানান এবং লেখক সমাজে ঝরেপড়া রোধে করণীয় উদ্যোগের আহ্বান জানান।
আড্ডার শেষ পর্যায়ে সবার প্রতি কৃতজ্ঞতা ও ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন চৈতন্য প্রকাশনীর স্বত্বাধীকারী রাজিব চৌধুরী। ভবিষ্যতেও কবি-সাহিত্যিক, লেখকদের নিয়ে এই ধরনের নিয়মিত আড্ডা আয়োজনের উদ্যোগ নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।
আড্ডা-আলোচনায় অংশ নেন, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) সৈয়দ ছলিম মোহাম্মদ আব্দুল কাদির, কথাসাহিত্যিক ও শিক্ষক প্রশান্ত মৃধা, সাংবাদিক ও লেখকদের মধ্যে সেলিম আউয়াল, মুক্তাদির আহমদ মুক্তা, উজ্জল মেহেদি, ফয়সল আলম, ইয়াহইয়া ফজল, সাঈদ নোমান, দ্বোহা চৌধুরী, আজহার উদ্দিন শিমুল, আহমেদ জামিল প্রমুখ।
এএফ/০১