সিলেট মিরর ডেস্ক
আগস্ট ১৯, ২০২৪
০৫:২৭ অপরাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ১৯, ২০২৪
০৮:১৩ অপরাহ্ন
রাজধানীর ধানমন্ডির রাস্তায় পরিত্যক্ত অবস্থায় পড়ে থাকা ল্যান্ড ক্রুজার গাড়িটি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খানের। গাড়িটি উদ্ধার করে ধানমন্ডি থানায় নিয়ে যাওয়া হয়েছে। রবিবার (১৮ আগস্ট) থেকেই ধানমন্ডির বাইতুল আমান মসজিদের সামনের রাস্তায় পড়েছিল টয়োটা কোম্পানির ওই গাড়ি।
আজ সোমবার (১৯ আগস্ট) ভোরে একটি র্যাকারের সাহয্যে এটি সরিয়ে নেওয়া হয়। পুলিশ বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
বিআরটিএ রেজিস্ট্রেশন অনুযায়ী, আনুমানিক দুই কোটি টাকা মূল্যের গাড়িটির নিবন্ধন নম্বর ঢাকা মেট্রো ঘ-২১-৮৪৫৬। সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের নামে নিবন্ধিত এই গাড়ি।
রাজধানীর ধানমন্ডির বাইতুল আমান মসজিদের সামনের দিকের রাস্তায় কে বা কারা একটি ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি ফেলে রেখে যায়। মালিকবিহীন ২ কোটি টাকা মূল্যের এ বিলাসবহুল গাড়িটি পড়ে ছিল দিনভর। সারা দিন আর মালিকের কোনো খোঁজ ছিল না।
শুরু থেকে গাড়িটি কার এবং কোথা থেকে এলো এ নিয়ে প্রশ্ন আসতে শুরু করে। মূলত গাড়িটি নিয়ে প্রশ্ন ওঠে একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী এটি নিয়ে পোস্ট করলে।
সমাজমাধ্যম ফেসবুকের ট্রাফিক অ্যালার্ট গ্রুপে জুনায়েদ কামাল নামে একজন এ গাড়িটি নিয়ে রবিবার (১৮ আগস্ট) রাত ১টার দিকে একটি পোস্ট দিয়ে লিখেছেন, ধানমন্ডির বাইতুল আমান মসজিদের সামনের দিকের রাস্তায় কেউ একজন ল্যান্ড ক্রুজার গাড়ি ফেলে গেছেন। রবিবার সকাল থেকে গাড়িটি এখানে পড়ে আছে, গাড়িটি আনলক অবস্থায় আছে। কেউ কি এর মালিককে চেনেন?
তবে প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, সকাল থেকে গাড়িটি এখানেই পড়ে ছিল। দীর্ঘক্ষণ দাঁড়ানো দেখে সন্দেহ হয় অনেকের। এরপর সামনে গিয়ে গাড়িটি আনলক অবস্থায় দেখা গেছে। তারা খুলে দেখেন কেউ নেই গাড়ির ভেতরে।
দিনরাত মিলে গাড়িটির মালিকের সন্ধান না পেলেও গণমাধ্যমের কাছে আসা কিছু তথ্য ও ছবিতে নিশ্চিত হওয়া গেছে গাড়িটি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামালের।
গণমাধ্যমের কাছে আসা তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গাড়িটি কেনা হয়েছিল ২০২২ সালের ৩১ জুলাই। কিন্তু রেকর্ড আপডেট করা হয়েছে একই বছরের ২৮ জুলাই। ট্যাক্স টোকেন ইস্যু করা হয়েছে ২০২২ সালের ৩ আগস্ট। যার মেয়াদ গত ৩০ জুলাই শেষ হয়েছে। ট্রাস্টি সার্টিফিকেট ২০২৩ সালের ৩ আগস্ট। সেটিরও মেয়াদ গত ৩ আগস্ট শেষ হয়েছে। গাড়িটি ম্যানুফ্যাকচার করার সময় ২০২২। গাড়িটির খালি ওজন ২ হাজার ২০০ কেজি আর মালামাল ৩ হাজার ২২০ কেজি পর্যন্ত তোলা সম্ভব। গাড়িটির ফিটনেস ইস্যু করা হয়েছে ২০২২ সালের ৩১ জুলাই। যার মেয়াদ রয়েছে ২০২৭ সালের ৩ জানুয়ারি পর্যন্ত। মালিকানাধীনের জায়গায় প্রাইভেট উল্লেখ করা হয়েছে। গাড়ির মালিকের নামের স্থানে আসাদুজ্জামান খান এবং তার বাবা মৃত আশরাফ আলী খান দেওয়া হয়েছে। আর গাড়িটি রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করা হয়েছে মিরপুর বিআরটিএতে।
এ ছাড়া গাড়ি কেনার জন্য করের টিন নম্বরের জায়গায় (৫১১১১১২৫৫০৫৬) দেওয়া হয়েছে। মালিকের মোবাইল ফোন নম্বর হিসেবে দেওয়া হয়েছে ০১৭১১-৫৪১৫৬৯।
সর্বশেষ গাড়িটি কেনার জন্য মালিকের যে নম্বর দেওয়া হয়েছে তার সূত্র ধরে নম্বর ও পরিচয় শনাক্তকারী অ্যাপস ট্রু কলারে কল দেওয়া হয়েছিল। সেখানে স্পষ্ট শো করছে আসাদুজ্জামান খানের নাম।0
এ ছাড়া এ গাড়িই যে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তার সপক্ষে আরও একটি ছবি এসেছে। সে ছবিতে দেখা যাচ্ছে, গাড়িটি কেনার সময় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী এবং তার সঙ্গে কয়েকজন ছবি তুলছেন। ছবিতে মন্ত্রী ছাড়াও ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের সাবেক ডিসি এইচ এম আজিমুল হক এবং মন্ত্রীর কয়েকজন কাছের মানুষ উপস্থিত ছিলেন। তারা গাড়িটি কেনার পর শোরুমে একটি যৌথ ছবিও তোলেন। পাশে গাড়িটি রাখা ছিল। সেটির সামনে লাগানো উদ্ধারকৃত গাড়ির নম্বর প্লেটের সঙ্গে মিল রয়েছে।
এ ব্যাপারে সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর তেজগাঁও এলাকায় বিভিন্ন ব্যক্তির সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। তেজগাঁও এলাকায় দীর্ঘদিন ধরে বসবাসকারী কয়েকজন জানান, তারা এ গাড়িটি ফেসবুকে দেখেছেন। গাড়ির নম্বর প্লেট দেখে চিনতে পেরেছেন এটি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালের গাড়ি। কী কারণে গাড়িটি রাস্তায় ফেলে রাখা হলো তা-ও অনুসন্ধানে বেরিয়ে এসেছে।
জানা গেছে, ৫ আগস্ট সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর মন্ত্রী থেকে শুরু করে সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী পালাতে শুরু করেন। গা ঢাকা দেন সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী কামালও। যদিও তার এখন পর্যন্ত কোনো সন্ধান পাওয়া যায়নি। রাজনৈতিক নেতা-কর্মীরা তাদের বাড়ি থেকে পালানোর কারণে লোকজন ক্ষুব্ধ হয়ে ভাঙচুর হামলা চালাচ্ছিল। এ পরিস্থিতিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর এ গাড়ির চালক গাড়িটি নিয়ে গিয়ে তার বাসার গ্যারেজে রেখেছিলেন। কিন্তু সম্প্রতি আতঙ্ক বেড়ে যায়। ফলে সেই চালক গাড়িটি ধানমন্ডির সেই রাস্তায় রেখে পালিয়ে গেছেন।
ধারণা করা হচ্ছে, বিক্ষুব্ধ জনতার হাত থেকে গাড়িটি রক্ষার উদ্দেশ্যেই এমন কৌশল বেছে নিয়েছেন মন্ত্রীর গাড়ি চালক। তবে সেই গাড়িটি পুলিশের কোন সদস্য চালাতেন তার নাম জানা যায়নি।
এএফ/০৫