সিলেট মিরর ডেস্ক
এপ্রিল ১০, ২০২৪
০৮:০১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ১০, ২০২৪
০৮:০১ পূর্বাহ্ন
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঈদের আগের চার দিনে ঢাকা ছাড়েন ১ কোটি ২০ লাখ যাত্রী। কিন্তু যাত্রীবাহী যানবাহনের সক্ষমতা রয়েছে ৮৬ লাখ ৬৮ হাজার যাত্রী পরিবহনের। বাকি ৩৩ লাখ ৩২ হাজার যাত্রী যান সংকটে ভোগেন।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. হাদীউজ্জামানের গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে।
গবেষণায় আরও উঠে আসে, সম্প্রতি ঈদের সময় ৩৩ লাখ ৩২ হাজার যাত্রী পণ্যবাহী যানে কিংবা ঝুঁকি নিয়ে গন্তব্যে যান। এবারের ঈদযাত্রাতেও একই চিত্র দেখা গেছে।
গত সোমবার কলকারখানা ছুটির পর, প্রতি বছরের মতো ঢাকার আশেপাশের শিল্পএলাকা সাভার আশুলিয়া টঙ্গী জয়দেবপুর নারায়ণগঞ্জ রুপগঞ্জ এলাকায় মহাসড়কে লাখো শ্রমজীবী মানুষের ঢল নামে। তাদের ভিড়ে ঢাকা-উত্তরবঙ্গ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গাজীপুর অংশ সোমবার রাতভর যানজট ছিল। তারপর মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত থেমে থেমে ছিল যানজট। ময়মনসিংহের যাত্রী রাজেকুল ইসলাম জানান, রাজধানীর মহাখালী থেকে গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তা পর্যন্ত ২৭ কিলোমিটার পথ পাড়ি দিতে সোমবার পাঁচ ঘণ্টার মতো সময় লাগে।
উত্তরবঙ্গের যাত্রী সাংবাদিক শাহারিয়ার হাসান জানান, বাসে গাবতলী থেকে গাজীপুরের চন্দ্রা পার হতে সোমবার রাতে ৭ ঘণ্টা লেগেছে।
সরেজমিনে দেখা গেছে, কারাখানার কর্মীরা বাসের জন্য মহাসড়কের পাশে দীর্ঘ অপেক্ষা করছেন। যানবাহন সংকটে তাদের পরিবহনে ঢাকার লোকাল বাস মহাসড়কে নেমেছে। যদিও প্রতি বছরের মতো এবারও ঘোষণা ছিল, লোকাল বাস মহাসড়কে যেতে পারবে না। কিন্তু তা কার্যকর হয়নি।
বাস না থাকায় লাখ লাখ যাত্রী উচ্চ ভাড়ায় ট্রাক, পিকআপের মতো পণ্যবাহী গাড়িতে করে শহর ছেড়েছেন। এসব গাড়ির কারণেও যানজট হয়। এসব মহাসড়কের পার্ক করে যাত্রী তোলায় যানজটের তীব্রতা বৃদ্ধি পায়। গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে বাসে ময়মনসিংহের ভাড়া ২৫০ টাকা। কিন্তু সোমবার এবং মঙ্গলবার দেখা যায় ট্রাকে পিকআপে জনপ্রতি ৩০০ টাকা ভাড়া নেওয়া হচ্ছে। সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির সহসভাপতি মাহবুবুর রহমান সমকালকে বলেন, ঈদে যাত্রীর যে ঢল নামে, তা মোকাবিলার মতো পর্যাপ্ত যানবাহন নেই। উন্নত দেশেও চারদিনে এক থেকে দেড় কোটি যাত্রী পরিবহন অসম্ভব। বাংলাদেশের পরিবহন যেভাবেই হোক কঠিন কাজটি করছে।
গবেষণার বরাতে অধ্যাপক হাদীউজ্জামান সমকালকে বলেছেন, ঈদের আগের চারদিন প্রতিদিন ৩০ লাখ করে যাত্রী ঢাকা ছাড়েন। ঢাকা থেকে দুরপাল্লার যেসব বাস চলে তাতে দৈনিক ৮ লাখ যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে।
এদিকে রেলের ঈদযাত্রার ৪১ আন্তঃনগর ট্রেনে আসন সংখ্যা সাড়ে ৩৩ হাজার। বগি যোগ করে আসন সংখ্যা ৪০ হাজার বর্ধিত করা হয়েছে। হাদীউজ্জামানের গবেষণা অনুযায়ী, লোকাল মেইল আন্তঃনগর ট্রেনে দৈনিক এক লাখ পাঁচ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে। প্রাইভেটকারে দিনে চার লাখ, লঞ্চে ১ লাখ ১২ হাজার, মাইক্রোবাসে সাড়ে ৩ লাখ এবং মোটরসাইকেলে ৪ লাখ যাত্রী ঢাকা ছাড়তে পারেন। সবমিলিয়ে দিনে ২১ লাখ ৬৭ হাজার যাত্রী পরিবহনের সক্ষমতা রয়েছে যানবাহনের।
পরিবহন সংশ্লিষ্টরা জানান, বাকি যাত্রীরা যে যেভাবে পারেন গন্তব্যে যান। হাদীউজ্জমান সমকালকে বলেছেন, পরিবহন সংকটে মোটরসাইকেলে মহাসড়কে যাচ্ছেন যাত্রীরা। এতে প্রাণঘাতী দুর্ঘটনা ঘটছে।
যান সংকটে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ট্রেন, লঞ্চের ছাদে চড়েন যাত্রীরা। যাত্রীদের ছাদে চড়া ঠেকানোর ঘোষণা দিয়েছিল রেলওয়ে। কলকারখানা ছুটির পর পুলিশ দিয়েও এ ঘোষণা বাস্তবায়ন করতে পারেনি।
অপরদিকে বিনা টিকিটের যাত্রী ঠেকাতে কমলাপুর স্টেশনে তিন স্তরে বাঁশের বেড়া বসিয়েছে রেলওয়ে। তবে শেষ সময়ে যাত্রী চলে বাঁশ থেরাপি কাজে আসেনি। গত সোমবার রাত থেকে উত্তরবঙ্গ এবং ময়মনসিং হয়ে চলা ট্রেনে উপচেপড়া ভিড়। ছাদে উঠছেন শত শত যাত্রী। মঙ্গলবারও এ ধারা অব্যহত ছিল।
কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন ব্যবস্থাপক মাসুদ সারোয়ার বলেন, কলকারখানা ছুটির পর যাত্রীর চাপ অনেক বেশি। বাস্তবতার কাছে আইন অসহায়।
সমকাল/এএফ-০২