নিজস্ব প্রতিবেদক
সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৩
০৮:৫৩ অপরাহ্ন
আপডেট : সেপ্টেম্বর ০৩, ২০২৩
০৮:৫৪ অপরাহ্ন
‘সেই ১৭৮০ সালে যখন ‘বেঙ্গল গেজেট’ যখন প্রথম প্রকাশিত হয় সেদিন থেকেই সংবাদপত্রের সংগ্রাম শুরু। এই সংগ্রাম এখন চলছে। সেটি থাকবে। তবে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন পেশাদারিত্ব। ছাপা কাগজের গুরুত্ব হচ্ছে, মানুষ এখনো কাগজে বিশ্বাস রাখে। পাতা খুলে পত্রিকা পড়ার আনন্দ এখনো রয়েছে মানুষের মধ্যে। তাছাড়া ছাপা কাগজে ডকুমেন্টগুলো সুন্দরভাবে সংরক্ষিত থাকে। এই ডকুমেন্টের মূল্য আছে।’ |
অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান। জাতীয় দৈনিক ‘আজকের পত্রিকা’র সম্পাদক। বাংলাদেশের শীর্ষস্থানীয় শিক্ষাবিদ, গণমাধ্যম গবেষক এবং যোগাযোগ বিশেষজ্ঞ। তিনি বাংলাদেশ সরকারের তথ্য কমিশনের প্রধান তথ্য কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছেন। বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থার (বাসস) চেয়ারম্যানও ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন তিনি। এ ছাড়া মো. গোলাম রহমান ড্যাফোডিল আন্তর্জাতিক বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংবাদিকতা বিভাগের প্রধান এবং উপ-উপাচার্যের (২০১৪-১৫) দায়িত্বও পালন করেছেন।
গতকাল শনিবার রাতে সিলেট মিরর কার্যালয়ে আসেন ড. মো. গোলাম রহমান। এ সময় দৈনিক সিলেট মিরর-এর সম্পাদক আহমেদ নুর ও পত্রিকার সাংবাদিকদের সঙ্গে গণমাধ্যমের বিভিন্ন দিক নিয়ে আলোচনা করেন। আলোচনায় উঠে আসে মুদ্রিত পত্রিকার সংকট ও সম্ভাবনার কথা। সিলেটসহ দেশের চলমান রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ে সংবাদমাধ্যমের করণীয় নিয়ে তাঁর মতামত ব্যক্ত করেন।
সর্বশেষ ২০১৭ সালে তিনি সিলেট এসেছিলেন। এবার তাঁর নিজের সম্পাদিত পত্রিকার সিলেট কার্যালয় উদ্বোধন করতে এসে সুধীজনদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। একান্ত আলাপচারিতায় তিনি সংবাদপত্রের নীতি ও সাংবাদিকদের নৈতিকতার বিষয়ে নিজের মতামত তুলে ধরেন। একই সঙ্গে সাংবাদিকদের নিরাপত্তাসহ সত্য তত্ত্ব ও তথ্যের আলোকে সংবাদ পরিবেশনের স্বাধীনতার উপর আলোকপাত করেন। তিনি বলেন, তথ্য অধিকার আইনটি অনেক আধুনিক ও জনবান্ধব। তবে অনেক সময় আইনটি অনুসরণ করা হয় না। নানা জটিলতার কারণে আবেদনকারী অনেক সময় থেমে যান। এ ক্ষেত্রে তথ্য কমিশনের সহযোগিতা প্রয়োজন। মূল কথা হলো জনগণ যেন ন্যায় বিচার পান।
মুদ্রিত সংবাদপত্রের ব্যাপারে তিনি বলেন, এটি সত্য যে, গোটা বিশ্বেই ছাপা পত্রিকার নাজুক অবস্থা। তবে আমাদের বিশ্বাস এই অঞ্চলে এখনো আরও অনেক বছর প্রিন্ট মিডিয়া চলবে। সেই ১৭৮০ সালে যখন ‘বেঙ্গল গেজেট’ যখন প্রথম প্রকাশিত হয় সেদিন থেকেই সংবাদপত্রের সংগ্রাম শুরু। এই সংগ্রাম এখন চলছে। সেটি থাকবে। তবে সবচেয়ে বড় প্রয়োজন পেশাদারিত্ব। ছাপা কাগজের গুরুত্ব হচ্ছে, মানুষ এখনো কাগজে বিশ্বাস রাখে। পাতা খুলে পত্রিকা পড়ার আনন্দ এখনো রয়েছে মানুষের মধ্যে। তাছাড়া ছাপা কাগজে ডকুমেন্টগুলো সুন্দরভাবে সংরক্ষিত থাকে। এই ডকুমেন্টের মূল্য আছে। এ জন্য আমরা আশাবাদী।
বর্তমান সময়ের রাজনৈতিক ও সামাজিক প্রেক্ষাপটে সংবাদপত্র ও সাংবাদিকদের পেশাদারিত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের সংবিধানে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার কথা বলা হয়েছে। সেই স্বাধীনতা হতে হবে তত্ত্ব ও তথ্যের ভিত্তিতে। তবে কতটুকু এবং কীভাবে সেই স্বাধীনতার প্রয়োগ করা হবে সেটি সাংবাদিকদের খেয়াল রাখতে হবে।
আইনগত দিক দিয়েও কিন্তু সাংবাদিকদের সহযোগিতার কথাই বলা হয়েছে।
নবসৃষ্ট সাইবার সিকিউরিটি আইনের ক্ষেত্রে তিনি বলেন, প্রযুক্তির কারণে এবং নানা ডিভাইস ব্যবহারের কারণে আইনের ক্ষেত্রে অনেক জটিলতা তৈরি হয়েছে। এগুলো নিয়ন্ত্রণ করতে আইনের প্রয়োজন রয়েছে। যদিও এই আইনের অনেক ধারা আছে যেগুলো পরিবর্তন ও সংশোধনযোগ্য। তবে এই আইনের অপব্যবহার কাম্য নয়। কারও সুবিধায় কাউকে নাজেহাল করা যাবে না। সবচেয়ে বড় কথা হলো, বর্তমানে গণমাধ্যমের এসব সমস্যা সমাধানের জন্য একটি নীতিমালা থাকা দরকার।
সাংবাদিকতার শিক্ষক অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান বলেন, মূল ধারার সাংবাদিকদের উচিত নিজেদের জায়গাটিকে শক্ত ভিত্তের উপর দাঁড় করাতে আন্তরিক ও সততার সঙ্গে কাজ করা। মনে রাখতে হবে, যেকোনো কিছু লিখে দেওয়াই সাংবাদিকতা নয়। সাংবাদিকদের অবশ্যই সংবাদপত্রের নীতি ও আদর্শ মেনে চলতে হবে। সরকারেরও উচিত সংবাদপত্রকে কখনো সংকোচিত করার মানসিকতা না রাখা। কারণ সংবাদপত্র হচ্ছে রাষ্ট্রের চতুর্থ স্তম্ভ।
পরে তিনি সিলেট মিরর-এর বিভিন্ন বিভাগ ঘুরে দেখেন। নানা সময়ে প্রকাশিত সিলেট মিরর-এর বিশেষ সংখ্যাগুলো তাঁর হাতে তুলে দেওয়া হয়। সিলেট থেকে একটি স্থানীয় সংবাদপত্রের এমন উদোগ ও কার্যক্রমের প্রশংসার পাশাপাশি তিনি ধন্যবাদ জানান সিলেট মিরর কর্তৃপক্ষকে।
অধ্যাপক ড. মো. গোলাম রহমান: সম্পাদক-আজকের পত্রিকা. সাবেক প্রধান তথ্য কমিশনার
এসকেএন-০১/এএফ-০৯