নেতাকর্মীদের নিয়ে মনোনয়ন জমা দিলেন আনোয়ারুজ্জামান, ইভিএম নিয়ে শঙ্কা মাহমুদুলের

নিজস্ব প্রতিবেদক


মে ২৪, ২০২৩
০৩:৩৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : মে ২৪, ২০২৩
০৫:৪৪ পূর্বাহ্ন



নেতাকর্মীদের নিয়ে মনোনয়ন জমা দিলেন আনোয়ারুজ্জামান, ইভিএম নিয়ে শঙ্কা মাহমুদুলের


সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচনে মনোনয়নপত্র জমা দেয়ার শেষ দিন ছিলো আজ।  সকাল থেকে আঞ্চলিক নির্বাচন অফিসে মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত মহিলা কাউন্সিলর প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেন। কিন্তু বেশিরভাগ প্রার্থীই মানেননি নির্বাচনী আচরণবিধি। বিপুল সংখ্যক কর্মী সমর্থক নিয়ে তারা মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন। চোখের সামনে ঘটলেও তা চোখে পড়েনি আঞ্চলিক নির্বাচন অফিস। 

এর মধ্যে আচরণবিধি লঙ্ঘন করে বিশাল শো-ডাউন করে মনোনয়নপত্র জমা দিয়েছেন সিলেট সিটি করেপারেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী।

মঙ্গলবার (২৩ মে) বেলা ১২টার দিকে দুই শতাধিক নেতাকর্মী নিয়ে সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে যান আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী। 

নির্বাচন কমিশনের সিটি করেপারেশন (নির্বাচন আচরণ) বিধিমালা ২০১৬ অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র সংগ্রহ ও দাখিলের সময় কোনপ্রকার মিছিল বা শো-ডাউন করা যাবে না বা প্রার্থী ৫ জনের অধিক সমর্থক নিয়ে মনোনয়নপত্র সংগ্রহ বা জমা দিতে পারবেন না।

তবে মঙ্গলবার মনোনয়ত্র জমাদানকালে আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর সঙ্গে  দুইশতাধিক নেতাকর্মী ছিলেন।

মনোনয়নপত্র জমাদান শেষে ফিরে যাওয়ার সময় স্লোগান দিতে দেখা যায় তাদের অনেককে।

এ ব্যাপারে সিলেট সিটি নির্বাচনের রিটার্নিং কর্মকর্তা ও আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদিরের দাবি, ‘আনোয়ারুজ্জামান মনোনয়নপত্র জমাদানকালে অনেক কাউন্সিলর প্রার্থী এবং সাংবাদিকরা এখানে উপস্থিত ছিলেন। ফলে ভিড় লেগে যায়। তবে কার্যালয়ের বাইরে কোন শো-ডাউন করা হয়েছে কি-না খেয়াল করিনি।’

তিনি বলেন, প্রার্থীরা মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার সময় ৫ জনের বেশি লোক নিয়ে আসতে পারবেন না। নির্বাচনী আচরণবিধি যাতে সবাই মেনে চলেন এ ব্যাপারে আমরা সতর্ক রয়েছি।

তবে আচরণিবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ অস্বীকার করে আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, আমি গুটিকয়েক নেতাকর্মী নিয়ে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে গিয়েছি। তবে বাইরে অনেক কর্মী সমর্থক ছিলেন। তাদের আমি নিয়ে যাইনি।

আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মনোনয়নপত্র জমাদানকালে তার সঙ্গে নির্বাচন কমিশন কার্যালয়ে অন্যদের মধ্যে ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ও সাবেক সংসদ সদস্য সৈয়দা জেবুন্নেছা হক, কেন্দ্রীয় কমিটির সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল, মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য শফিকুর রহমান চৌধুরী, জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট নাসির উদ্দিন খান, মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জাকির হোসেন, কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ, অ্যাডভোকেট নিজাম উদ্দিন, আওয়ামী স্বেচ্ছাসেবক লীগের সহসভাপতি সুব্রত পুরকায়স্থ, অ্যাডভোকেট রনজিত সরকার প্রমুখ।

এদিকে ইভিএম এ ভোট নিয়ে শংকা প্রকাশ করছেন আওয়ামী বিরোধী প্রার্থীরা। তারা ইভিএম এ আস্থা নেই দাবি করে সুষ্ঠ নির্বাচন নিয়ে সংসয় প্রকাশ করছেন। 

এ ব্যাপারে  ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলনের প্রার্থী মাহমুদুল হাসান বলেন, ‘আমরা জনগনের মাঝ থেকে উঠে আসা। ইভিএম নিয়ে জনগনের মধ্যে শঙ্কা রয়েছে। আমরা শুরু থেকেই ইভিএম বাতিলের দাবী জানাচ্ছি। পাশাপাশি এই সরকারের আমলে নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠ হওয়ার ব্যাপারে জনগন যেমন শংকিত রয়েছে আমরাও সংশয় প্রকাশ করছি।’

আগামী ২১ জুন সিলেট সিটি করপোরেশন নির্বাচন ইভিএমে হবে। আজকেই মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ। মনোনয়নপত্র বাছাই হবে ২৫ মে। আর ১ জুন পর্যন্ত মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা যাবে।

নির্বাচনে মেয়র প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন দাখিল করেছেন ১১ জন। এর মধ্যে দলীয় প্রতীকের প্রাথী ৪ জন। তারা হলেন- মো. আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী (নৌকা), নজরুল ইসলাম বাবুল (লাঙ্গল), হাফিজ মাওলানা মাহমুদুুল হাসান (হাতপাখা) ও মো. জহিরুল আলম (জাকের পার্টি)। এর মধ্যে নৌকার প্রার্থী মঙ্গলবার মনোনয়ন দাখিল করেন। আর জাপা মনোনীত প্রার্থী নজরুল ইসলাম বাবুল দাখিল করেন সোমবার। 

মনোনয়ন দাখিল করা স্বতন্ত্র মেয়র প্রার্থীরা হলেন- মোহাম্মদ আবদুল হানিফ কুটু, মোহাম্মদ আব্দুল মান্নান খান, সামছুন নুর তালুকদার, মো. ছালাহ উদ্দিন রিমন, মাওলানা জাহিদ উদ্দিন চৌধুরী, মো. শাহজাহান মিয়া ও মোশতাক আহমেদ রউফ মোস্তফা। .

উল্লেখ্য ২০০২ সালে প্রতিষ্ঠার পর সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রথম ও দ্বিতীয় নির্বাচনে মেয়র নির্বাচিত হন আওয়ামী লীগের প্রার্থী বদর উদ্দিন আহমদ কামরান। ২০১৩ সাথে তৃতীয় ও ২০১৮ সালে চতুর্থ নির্বাচনে বদর উদ্দিন আহমদ কামরানকে পরাজিত করে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপির প্রার্থী আরিফুল হক চৌধুরী। চারটি নির্বাচনেই মূল প্রতিদ্বদ্বিতা হয়েছে আওয়ামী লীগ ও বিএনপির প্রার্থীর মধ্যে। অন্য দলীয় বা স্বতন্ত্র প্রার্থীরা সামান্য প্রতিদ্বন্দ্বিতাও গড়তে পারেননি।

এবার বিএনপিদলীয় মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী নির্বাচনে অংশ নিচ্ছেন না। ফলে অনেকটাই জৌলুশ হারিয়েছে সিসিক নির্বাচন। আওয়ামী লীগ মনোনয়ন দিয়েছে দলটির যুক্তরাজ্য শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীকে।

এই সরকারের অধীনে কোনো নির্বাচন করার পরিবেশ নেই- এমন অভিযোগ তুলে ভোটের মাঠ থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন আরিফুল হক। এতে মাঠ অনেকটা ফাঁকা হয়ে গেল আওয়ামী লীগের প্রার্থী আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরীর জন্য। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের এই যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সিলেটের নগরপিতা হওয়া এখন অনেকটা সময়ের ব্যাপার মাত্র।


এসই/০৩