নিজস্ব প্রতিবেদক
মে ২২, ২০২৩
১০:০৬ অপরাহ্ন
আপডেট : মে ২২, ২০২৩
১০:৪৪ অপরাহ্ন
দলের সিদ্ধান্ত মেনে নির্বাচন থেকে সড়ে দাঁড়াচ্ছেন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী্র এমন ঘোষনার পর সিসিক নির্বাচন থেকে একের পর এক সরে দাড়াচ্ছেন বিএনপিপন্থী কাউন্সিলর পদপ্রার্থীরা।
সংবাদ সম্মেলন কিংবা সভা ডেকে দলের এই সম্ভাব্য কাউন্সিলর প্রার্থীরা একেএকে বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে অংশ না নেওয়ার ঘোষণা দিচ্ছেন।
শনিবার (২০ মে) বিকেলে নগরীর ঐতিহাসিক রেজিস্ট্রারি মাঠে জনসভায় বর্তমান সরকারের অধীনে নির্বাচনে না যাওয়ার ঘোষনা দিয়ে ভোট থেকে সড়ে দাঁড়ান সিলেট সিটি করপোরেশনের (সিসিক) মেয়র ও বিএনপির কেন্দ্রীয় সদস্য আরিফুল হক চৌধুরী। এরআগে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণা দেন নগরের ৪ নং ওয়ার্ডের চার বারের কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপির সাবেক সহসভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী।
সিলেট মহানগর বিএনপি সূত্র জানাগেছে, সিটি নির্বাচনে প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে ছিলেন এমন ১০ থেকে ১২ জন নেতা নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।
গতকাল রোববার নগরীর ৯ নং ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিএনপি নেতা আমির হোসেন প্রার্থী না হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ৯ নম্বর ওয়ার্ডে কাউন্সিলর প্রার্থী ও বিএনপি নেতা আমির হোসেনও প্রার্থী হচ্ছেন না। দলের সিদ্ধান্ত মেনে রোববার তিনি নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। ২২ নং ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও মহানগর বিএনপি নেতা সৈয়দ মিসবাহ উদ্দিনও প্রার্থী হচ্ছেন না। মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়ানোর সিদ্ধান্তের একদিনের মাথায় এই বিএনপি নেতাও ফিরে আসলেন নির্বাচন থেকে। সৈয়দ মিসবাহ সিসিকের সাবেক একাধিকবারের ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও সিলেট পৌরসভার সাবেক ওয়ার্ড কমিশনার।
এছাড়া ৩৬ নং ওয়ার্ডের প্রার্থী সিলেট জেলা সেচ্ছাসেবক দলের সদস্য সাইদুল এনাম চৌধুরী লাহিন দলের সিদ্ধান্ত মেনে সরে দাড়িয়েছেন নির্বাচন থেকে। নতুন অন্তর্ভুক্ত ৩৯ নং ওয়ার্ডের ওয়ার্ডের সম্ভাব্য প্রার্থী সিলেটে জেলা ছাত্রদলের সভাপতি আলতাফ হোসেন সুমন নির্বাচন করছেন না বলে জনিয়েছেন।
সর্বশেষ আজ মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী ও কাউন্সিলর কয়েস লোদীর আসন্ন সিলেট সিটি করেপারেশন নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন বিএনপিদলীয় কাউন্সিলর দিনার খান হাসু।
নির্বাচন বর্জনের ঘোষণা দেয়া দিনার খান হাসু সিসিকের ১৯ নং ওয়ার্ডের ৩ বারের সাবেক কাউন্সিলর ও প্যানেল মেয়র। তিনি সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম-সম্পাদক ও ১৯ নং ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ছিলেন।
সোমবার (২২ মে) বিকাল সাড়ে ৪টায় সিলেট মহানগরের মিরাবাজার এলাকার একটি রেস্টুরেন্টে সংবাদ সম্মেলন করে নির্বাচন বর্জনের এ ঘোষণা দেন।
সংবাদ সম্মেলনে হাসু জানান, তিনি আগামী সিসিক নির্বাচনে ১৯ নং ওয়ার্ড আবারও কাউন্সিলর প্রার্থী হতে চাচ্ছিলেন। তবে দলের সিদ্ধান্তে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন। বর্তমানে সিলেটে নির্বাচনের পরিবেশ নেই এবং ইভিএমের মাধ্যমে সুষ্ঠু ভোট হবে না বলেও দাবি করেন তিনি।
হাসুর সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় ক্ষুদ্র ঋণ বিষয়ক সহ-সম্পাদক বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক ও মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী প্রমুখ।
এদিকে নির্বাচন থেকে সরে আসার ব্যাপারে লাহিন জানান, “বাংলাদেশে গণতন্ত্র এখন নির্বাসনে জনগনের ভোটাধিকার হরন করা হয়েছে। নির্বাচনের প্রক্রিয়া শুরু হতেই সিলেটের ৪২ টি ওয়ার্ড থেকে গনগ্রেপ্তার পরিচালনা করে অসংখ্য নেতাকর্মীকে কারা অন্তরীন করা হয়েছে। । বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান জননেতা তারেক রহমানের সুনির্দিষ্ট ও সুস্পষ্ট বক্তব্য এই পাতানো নির্বাচনে দলের কোন পর্যায়ের নেতাকর্মী মেয়র বা কাউন্সিলর পদে নির্বাচনে অংশগ্রহন করতে পারবেন না। তাই যেহেতু আমি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের আদর্শকে বুকে লালন করে রাজনীতি করি তাই দলের সিদ্ধান্ত এর সাথে একাত্ততা পোষন করে এই নিশি রাতের সরকারের অধীনে কোনধরনের নির্বাচনে আমি অংশগ্রহন করবো না।”
এছাড়াও আরও বেশ কয়েকজন সম্ভাব্য প্রার্থী নির্বাচন থেকে সড়ে দাড়াবেন বলেও সিলেট মহানগর বিএনপি সুত্রে জানা গেছে।
এদিকে সিলেট সিটি করপোরেশনের গত নির্বাচনে বিজয়ী এক-তৃতীয়াংশ প্রার্থী ছিলেন বিএনপি ঘরানার। অনেকেরই কোনো পদপদবি নেই। এ কারণে তারা মাঠে থাকছেন। বিএনপি নেতারা তাদের নিয়ে তেমন চিন্তা করছেন না। তবে সংরক্ষিত ওয়ার্ডের প্রার্থী, বর্তমান কাউন্সিলর ও মহানগর মহিলা দলের সভানেত্রী এডভোকেট শাহনারা বেগম শাহনাজ ও জেলা মহিলা দলের সভানেত্রী সালেহা কবির শেপী এখনো রয়েছেন ভোটের মাঠে। বিএনপি’র মহানগর নেতারা জানিয়েছেন, দলীয়ভাবে তাদের সঙ্গে দফায় দফায় কথা বলা হয়েছে। এমনকি সিনিয়র নেতারাও তাদের নিয়ে বসেছেন। আজ-কালের মধ্যে তাদের তরফ থেকে ইতিবাচক সিদ্ধান্ত আসতে পারে বলে মনে করছেন তারা। ৬ নম্বর ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর ফরহাদ চৌধুরী শামীম স্বেচ্ছাসেবক দলের সাবেক সহ-সভাপতি। মহানগর বিএনপি’র কাউন্সিলে সাধারণ সম্পাদক পদে লড়াই করেছেন। কয়েস লোদী সরলেও তিনি সরছেন না। তবে সার্বিক বিষয় নিয়ে এখনো ভাবছেন বলে জানিয়েছেন তার সমর্থক কর্মীরা।
শামীম জানিয়েছেন, নির্বাচন না করে উপায় নেই তাঁর। তিনি বলেন, “এলাকার মানুষ আমাকে চারবার নির্বাচিত করেছেন। এখন হুট করে সরে দাঁড়ানো যাচ্ছে না। এলাকার মানুষ বলছে, ‘আমি তো কোনো দলের মার্কা নিয়ে ভোট চাইনি। তাঁরাও মার্কা দেখে ভোট দেননি। এখন তাঁদের আমি কী বলি?”
এদিকে মহানগর বিএনপি’র সাধারণ সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী জানিয়েছেন, “আমরা সবাইকে পরিস্থিতি বুঝাচ্ছি। সবার সঙ্গে আমার আলোচনা হয়েছে। অনেকেই আমাদের ওপর বিশ্বাস রাখছেন। আজ-কালের মধ্যে নির্বাচনের মাঠ থেকে অনেক নেতাই সরে যাবেন আশাবাদী তিনি।” ইমদাদ জানান, “এই সরকারের অধীনে আমাদের দলের কোন নেতাকর্মী অংশ নিবে না। যারা দলের সিদ্ধান্ত মানবেন না তারা আজীবনের জন্য বহিষ্কার হবে। বিএনপিতে থাকার কোনো অধিকারই তাদের থাকবে না।”
বিএনপি নেতাদের প্রার্থী হওয়া প্রসঙ্গে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন বলেন, 'বিএনপি এই সরকারের অধীনে কোন নির্বাচনেই যাবে না। আমরা এখন সরকার পতনের আন্দোলনে আছি। আমাদের প্রত্যাশা, বিএনপির কোনো নেতা সরকারের ফাঁদে পা দেবেন না। তারপরও যদি কোনো নেতা দলীয় সিদ্ধান্ত অমান্য করে নির্বাচনে প্রার্থী হয়, তাহলে দলীয় হাইকমাণ্ড সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেবে।
দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সাখাওয়াত হাসান জীবন জানিয়েছেন, ‘আরিফুল হক চৌধুরীর মেয়র প্রার্থী না হওয়ার বিষয়টি দলের জন্য গুরুত্বপূর্ণ ছিল। গোটা দেশবাসী তাকিয়ে ছিলেন তার সিদ্ধান্তের দিকে। তিনি নির্বাচনে যাচ্ছেন না। এখন একে একে কাউন্সিলর প্রার্থীরাও সরে যাচ্ছেন।’ তিনি বলেন “সিলেটে যারা নির্বাচিত কাউন্সিলর ছিলেন তারা এলাকাবাসীর চাপ আছেন। তারা নিবেদিত প্রান ছিলেন। দলমত নির্বিশেষে তাদের সবাই ভালোবাসেন। কিন্তু কয়েস লোদীর মত অনেকেই জানিয়েছেন তারা নির্বাচন থেকে সরে আসছেন। আমরা আহব্বান করবো শুধু বিএনপি নয় যারা গণতন্ত্রের পক্ষের মানুষ, যারা এদেশে সুষ্ঠ নির্বাচন প্রত্যাশা করেন তারা এই প্রহসনের নির্বাচন বয়কট করে জনতার কাতারে আসবেন।”
এসই/০৪