নিজস্ব প্রতিবেদক ও শায়েস্তাগঞ্জ প্রতিনিধি
জুলাই ২১, ২০২১
০৪:২৯ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ২১, ২০২১
০৪:২৯ পূর্বাহ্ন
রাত পোহালেই পবিত্র ঈদুল আজহা। পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে ঈদ উদ্যাপন করতে শেষ সময়ে সিলেট ছেড়ে যান অনেকেই। আবার বাইরে অবস্থান করা লোকজন সিলেটে ফিরে আসছেন। তাই সিলেটের বাসস্ট্যান্ডগুলোতে প্রচণ্ড ভিড় হতে দেখা গেছে।
সোমবার সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত সিলেট নগরের দক্ষিণ সুরমা বাসস্ট্যান্ড ঘুরে দেখা যায়, কাউন্টারগুলোতে যাত্রীদের প্রচণ্ড ভিড়। কেউ এসেছেন একা আবার কেউ পুরো পরিবার নিয়ে। যানবাহনের চাপে বাসস্ট্যান্ড এলাকায় তীব্র যানজট দেখা দেয়।
পাশের সিট খালি রেখে (অর্ধেক আসন খালি) বসার থাকলেও বাসে সব আসেনই যাত্রী বসানো হচ্ছে। কিন্তু ভাড়া নেওয়া হচ্ছে ৬০ শতাংশ বেশি। মাস্ক পরায়ও অনীহা রয়েছে- চালক, হেল্পার ও যাত্রীদের। এ অবস্থায় ঈদের পর করোনা পরিস্থির অবনতির আশঙ্কা করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
দুপুরে ঢাকা যাওয়ার উদ্দেশে বাসস্ট্যান্ডে যান নাসির আহমদ। এ সময় তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘করোনার কারণে রোজার ঈদেও বাড়ি যাইনি। তাই এবার ভয় নিয়েই যাচ্ছি। কারণ ঈদেই আমাদের পরিবারের সবার সঙ্গে দেখা করার সুযোগ মেলে।’
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে রংপুর যাচ্ছেন বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা ফারুক আহমদ। তিনি বলেন, ‘এই শহরে আমাদের আপন কেউ নেই। তাই ঈদে শত কষ্ট স্বীকার করে, অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েও বাড়ি যাই। করোনা তো থাকবেই। এটাকে নিয়েই আমাদের জীবন-যাপন করতে হবে।’ ঈদের পর লকডাউনে বেসরকারি অফিস খুলে দিলে ফেরা অনেক কষ্টকর হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।
বাসস্ট্যান্ডগুলোতে দূরপাল্লার যাত্রী যেমন ছিলেন তেমনি সিলেট বিভাগের জেলাসমূহের যাত্রীও ছিলেন। তাদের মধ্যে কেউ কেউ আবার সিএনজিচালিত অটোরিকশা, মাইক্রোবাসে করেও সিলেট ছেড়েছেন। আবার দেশের বিভিন্ন স্থান থেকেও সিলেটে যাত্রী আসার চাপ ছিল। যাত্রী-চালক-হেল্পারদের বেশিরভাগই মাস্ক পরছেন না।
মাস্ক না পরার কারণ জানতে চাইলে মৌলভীবাজার যাওয়ার জন্য বাসে উঠা শিক্ষার্থী সাইফ রহমান বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের কারণে মাস্ক খুলেছি। বাস ছাড়লে আবার মাস্ক পরব।’
এ বিষয়ে সিলেট জেলা বাস মিনিবাস কোচ মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মুহিম সিলেট মিররকে বলেন, ‘২-৩ দিন ধরে যাত্রীদের চাপ বেড়েছে। তবে সোমবার চাপ ছিল নিয়ন্ত্রণহীন। যেসব কাউন্টার থেকে স্বাভাবিক সময় একটি বাস ছাড়ে। সেসব কাউন্টার থেকে সোমবার ৪-৫টি বাস ছেড়েছে।’
স্বাস্থ্যবিধির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমরা প্রতিটি কাউন্টারকে শতভাগ স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে বলেছি। দুই আসনে এক যাত্রী তুলতে বলেছি। তারপরও কয়েকটি কাউন্টার এই নির্দেশনা মানছে না।’
এদিকে গতকাল সিলেট থেকে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলোতে যাত্রীদের চাপ ছিল কম। অর্ধেকের কম যাত্রী নিয়েই এসব ট্রেন চলেছে। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন ম্যানেজার খলিলুর রহমান বলেন, ‘এবার ঈদে রেলে যাত্রীদের চাপ কম। কারণ অর্ধেক যাত্রী নিয়ে আমাদের চলতে হয়। এদিকে লোকাল যাত্রী না থাকায় অর্ধেকের কম যাত্রী নিয়ে ট্রেন ছাড়ছে।’
স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গণপরিবহন চড়ায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়ার আশঙ্কা প্রকাশ করে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত সিলেট মিররকে বলেন, ‘সিলেটে কয়েকদিন ধরে শনাক্তের হার কিছুটা কমেছিল। কিন্তু ঈদের পর আবার বেড়ে যাবে বলেই মনে হচ্ছে। কারণ কোথাও স্বাস্থ্যবিধি মানা হচ্ছে না।’
করোনার সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় সারাদেশে গত ১ জুলাই থেকে কঠোর লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। তবে ঈদুল আযহা উদযাপনের জন্য চলমান বিধি-নিষেধ ১৪ জুলাই মধ্যরাত থেকে ২৩ জুলাই ভোর ৬টা পর্যন্ত শিথিল করে সরকার। এরপর ২৩ জুলাই ভোর ৬টা থেকে ৫ আগস্ট রাত ১২টা পর্যন্ত নতুন করে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়।
ঈদের আনন্দ ভাগাভাগি করতে শায়েস্তাগঞ্জে ভিড় : শায়েস্তাগঞ্জের নতুন ব্রীজ বাস স্টেন্ড, শায়েস্তাগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন, মহাসড়কের অলিপুর কাউন্টারগুলোতে মানুষের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে। যাত্রীদের অভিযোগ অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে ও উপায় না পেয়ে গাদাগাদি করেই বাড়ি ফিরতে হচ্ছে তাদের। যদিও স্বাস্থ্যবিধি নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক তেমন কোন তৎপরতা দেখা যায়নি। তবে অন্যান্য দিনের তুলনায় মহাসড়কে যাত্রী ও যানবাহনের চাপ ছিল অনেক।
আবুল কালাম নামে এক যাত্রী জানান, সিরাজগঞ্জে যাব, কিন্তু কোন টিকেট পাচ্ছিনা, কাউন্টারের লোকজন ৬০০ টাকার ভাড়া ১৫০০ টাকা চাচ্ছে।
রুয়েল আহমদ নামে প্রাণ আর এফ এলে কর্মরত এক যাত্রী জানান, ঢাকা যাব, অনেকক্ষণ ধরে দাড়িয়ে আছি, কাউন্টারে দ্বিগুণ ভাড়া চাইতেসে, দেখি কি করা যায়।
নাফিজা সুলতানা নামে এক যাত্রী জানান, সুনামগঞ্জে যাব, আধা ঘণ্টা ধরে দাঁড়িয়ে আছি, দ্বিগুণ ভাড়া দিয়ে সিট কেটেছি, গাড়ি কখন আসবে বলতে পারতেছিনা।
দিগন্ত কাউন্টারের প্রোপাইটর মো, নাইম মিয়া জানান, গাড়ির তুলনায় যাত্রী বেশি, আর এক সিট ফাকা রেখে যাত্রী বহন করায় কাউন্টারে ভীর একটু বেশি।
ঈদের পরপরই কঠোর লকডাউন আসতে পারে, জেনে ও করোনা ঝুকির মাঝেও মানুষজন বাড়ি ফিরছেন। অলিপুরের বাসিন্দা সচেতন নাগরিক রিহাদ তালুকদার বলেন, মানুষজন রাস্তাঘাটে যেভাবে গাদাগাদি করে বাড়ি ফিরছে, করোনাভাইরাস সাথে করে বাড়ি গেলে পুরো পরিবারই আক্রান্ত হতে পারে, বেচে থাকলে কত ঈদই আসবে, এমন পরিস্থিতিতে কর্মস্থলেই ঈদ উদযাপন করাটাই শ্রেয়।
এ ব্যাপারে শায়েস্তাগঞ্জ হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. মাঈনুল ইসলাম জানান, আজকে শায়েস্তাগঞ্জের বিভিন্ন কোম্পানিগুলোতে শ্রমিকদের ছুটি হয়েছে। তাই, নতুন ব্রীজ গোল চত্ত্বর, মহাসড়কের অলিপুরে হাইওয়ে থানা পুলিশ দ্বায়িত্ব পালন করেছে। কর্মস্থল থেকে মানুষজন যাতে, স্বাস্থ্যবিধি মেনে নির্বিঘ্নে বাড়ি ফিরতে পারে সেজন্য আমরা সর্বাত্মক চেষ্টা করেছি,এবং কোন ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি।
আরসি-০২