নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সামনে গোলাপগঞ্জবাসী

ফারহান মাসউদ আফছর, গোলাপগঞ্জ


জুলাই ২০, ২০২১
১০:২৪ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২০, ২০২১
১০:২৪ অপরাহ্ন



নতুন দিগন্ত উন্মোচনের সামনে গোলাপগঞ্জবাসী
দৃশ্যমান টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ

সিলেটের গোলাপগঞ্জ উপজেলায় বহুল প্রত্যাশিত সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলেছে। চারতলা বিশাল ভবন দাঁড়িয়ে গেছে। প্রতিষ্ঠানের পুরো ক্যাম্পাসের চিত্র এখন দৃশ্যমান। ইতোমধ্যে ৫৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১ বছরের মধ্যে নির্মাণকাজ সম্পন্ন হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। এদিকে, নতুন এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে গোলাপগঞ্জে কারিগরি শিক্ষার নতুন দিগন্তের সূচনা হতে যাচ্ছে বলে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেছেন স্থানীয় বিশিষ্টজনেরা।

জানা যায়, সিলেট শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তর মোট ১৪ কোটি ৫১ লাখ টাকা ব্যয়ে প্রায় দেড় একর জমির উপর নির্মাণ করছে গোলাপগঞ্জ সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ। দেশের তরুণ জনগোষ্ঠীকে দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে কারিগরি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্বের দিক বিবেচনা করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সারা দেশের প্রতিটি উপজেলায় একটি করে টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ নির্মাণের ঘোষণা দেন। তারই ধারাবাহিতায় প্রথম পর্যায়ে ১০০টি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণকাজের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এর অংশ হিসেবে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে উপজেলার গোলাপগঞ্জ-ঢাকাদক্ষিণ সড়কের আমুড়া ইউনিয়নের ধারাবহর এলাকায় গোলাপগঞ্জ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের নির্মাণকাজের উদ্বোধন করেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ও সিলেট-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, অত্যাধুনিক এ টেকনিক্যাল কলেজটিতে ৫তলা বিশিষ্ট একাডেমিক ভবনে থাকছে ৩০টি কক্ষ। এছাড়া ৪ তলা বিশিষ্ট প্রশাসনিক ভবনে ১৮টি কক্ষ থাকবে। শিক্ষার্থীদের প্র্যাক্টিকেল ক্লাসের জন্য থাকবে একতলা ওয়ার্কশপ ভবন। ইতোমধ্যে একাডেমিক ভবন এবং প্রশাসনিক ভবনের অবকাঠামো পুরো দাঁড়িয়ে গেছে। এখন গাঁথুনি এবং প্লাস্টারের কাজ চলছে বলে জানিয়েছেন ঠিকাদার প্রতিষ্ঠানের সাইট ইঞ্জিনিয়ার। নতুন এ টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজটিতে কারিগরি শিক্ষাবোর্ডের অধীনে ষষ্ঠ থেকে দ্বাদশ শ্রেণি পর্যন্ত কারিগরি বিষয় অন্তর্ভুক্ত থাকবে। এছাড়াও প্রতিষ্ঠানটিতে ওয়েল্ডিং, ইলেকট্রনিকস, কনস্ট্রাকশনসহ কারিগরি বিষয় ছাড়াও নতুন বিভিন্ন বিষয় পড়ানো হবে।

শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের সিলেটের নির্বাহী প্রকৌশলী নজরুল হাকিম বলেন, প্রতিষ্ঠানটির নির্মাণ কাজ এ বছর শেষ হওয়ার কথা ছিল। কিন্তু ভূমিসহ নানা জটিলতায় নির্ধারিত সময়ে কাজ শুরু করা যায়নি। তবে কাজ এখন দ্রুত এগিয়ে চলেছে। ইতোমধ্যে ৫৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। একাডেমিক ভবনের ৪ তলার ভিম লিন্টার ও ঢালাই কাজ শেষ হয়েছে। বাকি একতলার কাজ শিগগির শুরু হবে। ১ বছরের মধ্যে সব কাজ সম্পন্ন হয়ে যাবে বলে আমি আশা প্রকাশ করছি।

এদিকে, নতুন এ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে উপজেলায় কারিগরি শিক্ষার নতুন দিগন্তের সূচনা হচ্ছে বলে উচ্ছাস প্রকাশ করেছেন এলাকার বিশিষ্ট ব্যক্তিবর্গ। এর মাধ্যমে উপজেলার নতুন প্রজন্ম কারিগরি শিক্ষা অর্জন করে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি এবং দেশের অর্থনীতিতে আরও বৃহত্তর অবদান রাখতে পারবে বলে মন্তব্য করেন তারা।

ঢাকাদক্ষিণ ডিগ্রি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রভাষক এবং গোলাপগঞ্জ প্রাকৃতিক ও খনিজ সম্পদ রক্ষা কমিটির সদস্য সচিব ইউনুছ চৌধুরী বলেন, বিপুল জনসংখ্যাকে জনসম্পদে পরিণত করতে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। দেশে এবং বিদেশে দক্ষ জনবলের বিশাল সংকট রয়েছে। দক্ষ জনশক্তি দেশের উৎপাদন খাতে ব্যাপক অবদানের পাশাপাশি বিদেশ থেকে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা আয় করতে পারে। নতুন এই প্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম শুরু হলে গোলাপগঞ্জের নতুন প্রজন্মের জন্য শিক্ষার নতুন দিগন্ত উন্মোচন হবে।

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের মহাসড়কে উল্লেখ করে গোলাপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে বাংলাদেশ কৃষি, যোগাযোগ, শিক্ষা, বিদ্যুৎসহ সকল ক্ষেত্রে ব্যাপক অগ্রগতি অর্জন করেছে। সরকার আগামী ২০৪১ সালের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা তথা আধুনিক উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছে। তাই আধুনিক ও দক্ষ মানবসম্পদ তৈরি করতে সরকার কারিগরি শিক্ষাকে গুরুত্ব দিয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজ স্থাপন জননেত্রী শেখ হাসিনার একটি যুগান্তকারী সিদ্ধান্ত।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কবির বলেন, জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন সাধনে সরকার কারিগরি শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব দিয়েছে। কারিগরি শিক্ষা কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে অধিকতর সহায়ক ভূমিকা পালন করে। বর্তমান প্রতিযোগিতার যুগে টিকে থাকতে এবং নেতৃত্ব দিতে হলে আমাদের কারিগরি জ্ঞান ও দক্ষতা অর্জন অপরিহার্য।

গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী বলেন, দেশের সব উপজেলায় কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজ প্রতিষ্ঠা সরকারের সময়োপযোগী একটি উদ্যোগ। বাংলাদেশের বেকার সমস্যার সমাধান এবং তরুণ-যুবকদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার কারিগরি শিক্ষার প্রতি অধিকতর গুরুত্বারোপ করেছে। এতে করে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হবে এবং বেকারত্ব হ্রাস পাবে।

বর্তমান যুগ বিজ্ঞানের যুগ, কারিগরি জ্ঞানের যুগ উল্লেখ করে তিনি বলেন, কারিগরি জ্ঞান বেকারত্বের অভিশাপ থেকে দেশকে যেমন মুক্ত করতে পারে, তেমনি দেশের অর্থনৈতিক অবস্থাও দ্রুত পাল্টে দিতে পারে। এ সময় তিনি গোলাপগঞ্জ উপজেলায় নির্মাণাধীন কারিগরি স্কুল অ্যান্ড কলেজের জায়গা কিনে দেওয়ার জন্য ঢাকাদক্ষিণ উন্নয়ন সংস্থার প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

সাবেক শিক্ষামন্ত্রী, সিলেট-৬ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমণ্ডলীর সদস্য নুরুল ইসলাম নাহিদ বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, দারিদ্র বিমোচন, উদ্যোক্তা উন্নয়ন ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধিতে কারিগরি শিক্ষার গুরুত্ব অপরিসীম। সর্বোপরি কারিগরি শিক্ষা ছাড়া অধিক জনশক্তিকে জনসম্পদে রূপান্তর করা অসম্ভব। তাই দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করতে হলে ভবিষ্যৎ প্রজন্মের উদ্ভাবনী শক্তির বিকাশে জ্ঞান-বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার প্রয়োজন এবং এর একটি মাধ্যম হলো কারিগরি শিক্ষা। বিশ্বের উন্নত দেশের সঙ্গে প্রতিযোগিতায় নিজের দেশকে এগিয়ে নিয়ে যেতে হলে জনশক্তিকে দক্ষভাবে গড়ে তুলতে হবে এবং দেশের অর্থনীতিকে সমৃদ্ধশালী করতে হলে কারিগরি শিক্ষার বিকল্প নেই। তাই কারিগরি শিক্ষার মান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে। এ সময় তিনি সরকারি টেকনিক্যাল স্কুল অ্যান্ড কলেজের জায়গা দেওয়ার জন্য ঢাকাদক্ষিণ উন্নয়ন সংস্থাকে ধন্যবাদ জানান।

এফএম/আরআর-০৫