ওসমানীনগরে গরুর হাটে ক্রেতার চেয়ে দর্শক বেশি

উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর


জুলাই ২০, ২০২১
১০:০২ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২০, ২০২১
১০:০২ অপরাহ্ন



ওসমানীনগরে গরুর হাটে ক্রেতার চেয়ে দর্শক বেশি

শেষ মুহূর্তে এসে জমে উঠেছে ওসমানীনগরের বৃহৎ গোয়ালাবাজারের গরুর হাট। তবে বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে উপচেপড়া ভিড় থাকলেও এর মধ্যে ক্রেতার চেয়ে দর্শকের সংখ্যাই বেশি। এদিকে, হাটে সাধারণ মানুষের মাঝে করোনাকালীন স্বাস্থ্যবিধি না মানার প্রবণতা লক্ষ্য করা গেছে।

গত রবিবার গোয়ালাবাজারের গরুর হাটে হাজার হাজার গরু দেখা যায়। তবে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত গরু বিক্রির পরিমাণ একেবারেই কম ছিল। বিক্রেতারা জানান, করোনা সতর্কতায় এবার বেশিরভাগ প্রবাসী দেশে আসতে পারেননি। তাছাড়া লকডাউন থাকার কারণে স্থানীয়ভাবে অনেকে আগে থেকেই ঈদের জন্য গরু কিনে রেখেছেন। অনেকে আবার অনলাইনে জেনে খামারির বাড়ি থেকে গরু সংগ্রহ করায় উপজেলার কোথাও গরুর হাট এবার তেমন জমে ওঠেনি।

হাটে গরু নিয়ে আসা করনসী গ্রামের সুফি মিয়া বলেন, তার ঘরে পালিত সাড়ে ১৮ মণ ওজনের একটি ফিজিশিয়ান ষাঁড়ের জন্য তিনি সাড়ে ৩ লাখ টাকা দাম চাইলেও এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ ২ লাখ ৭০ হাজার টাকা দাম উঠেছে। তিনি আরও ভালো দাম পাওয়ার আশা করছেন।

লালাবাজার থেকে গরু নিয়ে আসা লোকমান আলী জানান, এবার অন্য বছরের চেয়ে ভারতীয় গরুর আধিক্য কম থাকলেও ক্রেতাদের বেশিরভাগের নজর ভারতীয় গরুর প্রতি। তিনি ৩টি দেশি গরু ১০ হাজার টাকা লোকসানে বিক্রি করতে বাধ্য হয়েছেন।

কোরবানির গরু কিনতে আসা আলমগীর হোসেন বলেন, গত ঈদের চেয়ে এবার ঈদে গরুর দাম ১৫-২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। যার জন্য সাধারণ ক্রেতারা গরুর দর-দাম করতে সাহস পাচ্ছেন না। অন্যান্য বছরে ঈদুল আজহা উপলক্ষে শতকরা ৪০ ভাগ প্রবাসী দেশে আসেন। কিন্তু এবার করোনার কারণে প্রবাসীর সংখ্যা কম থাকায় শুধু গরুর বাজার নয়, সবকিছুতেই এর প্রভাব পড়েছে।

হাটের লোকজনের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি না মানার কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ক্রেতারা স্বাস্থ্যবিধি না মেনে গরুর সঙ্গে করোনা বাড়িতে বয়ে নিয়ে যাচ্ছেন। ঈদের পর আমাদের অবস্থা কী হবে বুঝতে পারছি না। 

ইজারাদার সিরাজ মিয়া জানান, চলতি বছর ভ্যাট ও ট্যাক্সসহ প্রায় ১ কোটি ১০ লাখ টাকায় বাজার ইজারা নিয়ে তিনি প্রচুর লোকসান দিচ্ছেন। সপ্তাহে নির্ধারিত ২ দিন গরুর হাট বসলেও করোনা সতর্কতা এবং লকডাউনের কারণে বেচাবিক্রি নেই বললেই চলে। কোনবানির ঈদ উপলক্ষে এবার মাত্র ১ দিন (রবিবার) হাট বসানোর অনুমতি পাওয়ায় ও বিক্রি-বাট্টা না হওয়ায় বিনিয়োগকৃত টাকা ফেরত না পাওয়ার আশঙ্কা করছেন তিনি। 

তিনি বলেন, এবার গরুর হাটে প্রচুর ভিড় থাকলেও ক্রেতা একেবারে কম। দর্শকের সংখ্যাই বেশি। বাজারে অতিরিক্ত মানুষের চাপের কারণে আমরা পুরোপুরি স্বাস্থ্যবিধি অনুসরণ করতে পারছি না। তবে মাইকিং করে লোকজনকে সচেতন করার চেষ্টা করছি।

ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, গরুর হাটে স্বাস্থ্যবিধি মানার বিষয়ে আমরা আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। গোয়ালাবাজার পশুর হাটে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে। তারা লোকজনকে মাস্ক না পড়ে বাজারে প্রবেশ করতে দিচ্ছে না।

এদিকে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মাংস উৎপাদনকারী খামারির সংখ্যা ৩৬৬ জন। কঠোর লকডাউন পরিস্থিতিতে আসন্ন ঈদের কথা চিন্তা করে গত ১ জুলাই থেকে ‘অনলাইন পশুর হাট, ওসমানীনগর, সিলেট’ নামের একটি ফেসবুক পেজ চালু করা হয়েছে। পেজে খামারিদের বিক্রয়যোগ্য পশুর ছবি দিয়ে সম্ভাব্য ওজন, বিক্রেতাদের নাম-ঠিকানা, মোবাইল নম্বর পোস্ট করা হচ্ছে। সেখান থেকে অনেক ক্রেতা পছন্দমতো গরু ইনবক্সে দর-দাম করে খামারির বাড়ি থেকে ক্রয় করছেন। এই প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১০০টি গরু বিক্রি হচ্ছে।

ইউডি/আরআর-০৪