জৈন্তাপুর প্রতিনিধি
জুলাই ২০, ২০২১
০৯:৪৯ অপরাহ্ন
আপডেট : জুলাই ২০, ২০২১
০৯:৪৯ অপরাহ্ন
সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার নিজপাট ইউনিয়নের গোয়াবাড়ী, কমলাবাড়ী ও উজানীনগর এলাকায় পাহাড় ও টিলা রয়েছে। সেগুলো পরিবেশর জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পাহাড় ও টিলা শ্রেণির ভূমিগুলোতে প্রচুর কাঁঠাল, তেজপাতা ও নানা প্রজাতির লেবু উৎপাদিত হয়। কিন্তু প্রভাবশালীরা সরকারি পাহাড় ও টিলার পরিবর্তন ঘটিয়ে বসতবাড়ি নির্মাণসহ পাহাড় শ্রেণির ভূমি ক্রয়-বিক্রয় করছে। আর সংশ্লিষ্ট পরিবেশ অধিদপ্তর ও উপজেলা প্রশাসন নীরব ভূমিকা পালন করছে। জৈন্তাপুরের পাহাড় ও টিলা রক্ষায় সংশ্লিষ্ট প্রশাসন এগিয়ে না এলে মারাত্মক আকারে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বিগত বছরগুলোতে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগণ এসব এলাকা সরেজমিনে পরিদর্শন করে পাহাড় কর্তন এবং পাথর উত্তোলনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। এমনকি সাইনবোর্ডও ঝুলিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু নিষেধাজ্ঞাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে পাহাড় কর্তন করে দিনে-দুপুরে পাথর পরিবহন করছে প্রভাবশালীরা।
জানা গেছে, জনগুরুত্বপূর্ণ এলাকার পাহাড় কর্তন করে দিন-রাত সমানভাবে পরিবহনযোগে পাথর বিক্রয় করে আসছে চক্রটি। এছাড়া অনেকেই এ সকল পাহাড় ও টিলা শ্রেণির ভূমি কেটে মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় বসতবাড়ি নির্মাণ করছে। পাহাড় কর্তনকারী নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক শ্রমিকরা জানান, স্থানীয় প্রশাসনের কিছুসংখ্যক কর্মকর্তা ও কয়েকজন নেতা এই এলাকার সকল পাহাড় ও টিলা কর্তন করে পাথর উত্তোলনে সহযোগিতা করছেন।
গোয়াবাড়ী এলাকায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার হিসাবে নির্মাণ করা হয়েছে মুজিব জন্মশতবর্ষে গৃহহীন ও ভূমিহীনদের জন্য দেওয়া আশ্রয়ণ 'মুজিব নগর'। এ কারণে প্রতিনিয়ত এলাকা পরিদর্শন করছেন উপজেলা প্রশাসনের কর্তাব্যক্তিরা। পাথর উত্তোলন হলেও বিষয়টিতে কর্ণপাত করা হচ্ছে না। ফলে পরিবেশ বিপর্যয় দেখা দিলে নির্মাণাধীন এসব ঘরগুলোতে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে।
পরিবেশগত সমীক্ষা প্রতিবেদন পর্যালোচনা করে ছাড়পত্র ছাড়া সিলেট জেলার সদর উপজেলা, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, বিয়ানীবাজার, কোম্পানীগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলায় পাহাড় কাটা বন্ধের নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। বিগত ২০১১ সালের ১ মার্চ বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা রিটের রুল নিষ্পত্তি করেন বিচারপতি এ এইচ এম শামসুদ্দিন চৌধুরী ও জাহাঙ্গীর হোসেনের নেতৃত্বাধীন যৌথ বেঞ্চ। ২০১১ সালের ২৭ নভেম্বর এসব এলাকায় পাহাড় কাটা কেন এখতিয়ার বহির্ভূত ও জনস্বার্থ পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না এবং পাহাড়ের পাদদেশে বসবাসরত দুস্থদের পুনর্বাসনের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছিলেন আদালত।
রিটে পরিবেশ, ভূমি ও গৃহায়ন সচিব, পরিবেশ অধিদপ্তরের মহাপরিচালক, সিলেট সিটি করপোরেশন, সিলেট বিভাগীয় পুলিশ কমিশনার, সিলেট জেলা পরিবেশ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক, সিলেট সদর, জৈন্তাপুর, গোয়াইনঘাট, বিয়ানীবাজার, কোম্পানীগঞ্জ ও গোলাপগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তাসহ ১৫ জনকে বিবাদী করা হয়েছিল। আদালতে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট ইকবাল কবির লিটন ও রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল ইয়াদিয়া জামান।
স্থানীয় বাসিন্দা কুতুব উদ্দিন, রহিম মিয়া, আলোক মিয়া, রইছ উদ্দিন, হুমায়ুন আহমদ, কালা মিয়া, জুবায়ের আহমদসহ এলাকাবাসীর অভিযোগ, পুলিশ প্রশাসন ও ভূমি অফিসের কিছুসংখ্যক দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তা এবং প্রভাবশালী নেতাদের ছত্রছায়ায় পাথরখেকো চক্রটি এসব অপকর্ম চালিয়ে যাচ্ছে। আমরা পাহাড় কর্তনের বিষয়ে উপজেলা প্রশাসন, সহকারী কমিশনার (ভূমি) এবং জৈন্তাপুর মডেল থানার পুলিশকে খবর দিলেও কোনো কাজ হয় না। বরং নির্বিচারে পাহাড় কর্তন করে পাথর উত্তোলন চলছে। উত্তোলিত পাথরসমূহ ট্রাকযোগে উপজেলার বিভিন্ন ক্রাশার মিলে প্রেরণ করা হচ্ছে।
এ ব্যাপারে জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত আজমেরী হক বলেন, আমি বিষয়টি দেখছি। তদন্তপূর্বক পাথর ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করব।
আরকে/আরআর-০৩