কবির আহমদ, কোম্পানীগঞ্জ
জুলাই ২০, ২০২১
০৬:০৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ২০, ২০২১
০৬:০৬ পূর্বাহ্ন
জীবিকার তাগিদে সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে এসেছেন দিনমজুরের কাজ করছেন কিশোরগঞ্জ জেলার মিঠামইন থানার রফিক মিয়া। তিন সন্তান ও স্ত্রীসহ ভাড়া থাকেন ভোলাগঞ্জে। পাঁচ সদস্যের এই পরিবারের একমাত্র অর্থ যোগানদাতা তিনি। কিন্তু করোনার থাবায় কঠোর বিধিনিষেধের কালে কর্মহীন হয়ে পড়েছেন তিনি। উপার্জনহীন হয়ে দিন কাটছে কষ্টে।
আলাপকালে সিলেট মিররকে তিনি বলেন, ‘দিনমজুরি করে স্ত্রী সন্তান নিয়ে কোনোভাবে দিনাতিপাত করতাম। এখন করোনার কারণে বেশির ভাগ সময় লকডাউনে কাজ নেই, ইনকামও নেই। খুবই কষ্টে দিন কাটাচ্ছি। ছোটো ছোটো দুইটা বাচ্চার মুখের দিকে তাকাতে পারি না। যে জায়গায় ঘর দিয়ে আছি তাও অন্যের।‘
শুধু রফিক মিয়াই নন। করোনার ভয়াল থাবায় বিপর্যস্ত সিলেটের কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার নানা শ্রেণিপেশার নিম্ন আয়ের মানুষ। প্রায় সবাই কর্মহীন হয়ে পড়েছেন। উপার্জন না থাকায় পরিবার নিয়ে কষ্টে দিন কাটছে তাদের। পাচ্ছেন না পর্যাপ্ত পরিমাণে সরকারি ও বেসরকারি ত্রাণ সাহায্যও।
রফিক মিয়া বলেন, `গত বছর লকডাউনে সরকারি-বেসরকারিভাবে কিছুটা সহযোগিতা পেলেও, এই লকডাউনে কিছুই পাচ্ছি না।’
এদিকে আসন্ন ঈদ-উল আজহাকে ঘিরে বাজারে নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্য মূল্যের উর্ধ্বগতিতে এখন লাগামহীন মাছ, মাংস, খাবার তেল, চাল, ডাল ও সবজি বাজার। সব কিছুই ক্রয় ক্ষমতার নাগালের বাহিরে নিম্ন আয়ের মানুষের। যার ফলে সীমাহীন কষ্টে ক্ষুধার জ্বালায় জীবনযাপন করছেন কর্মহীনরা। তাই বাধ্য হয়ে কাজের সন্ধানে পেটের তাগিদে রাস্তায় নামছেন শ্রমজীবি ও নিম্ন আয়ের মানুষগুলো। তবে তেমন ভালো নেই মধ্যবিত্তরাও।
উপজেলার টুকেরবাজার এলাকার চায়ের দোকানি জামাল মিয়া বলেন, ‘লকডাউনের কারণে দোকান বন্ধ রেখেছি। পাচঁজনের সংসার চালাই চা বিক্রি করে আমার সংসার চলে। শুনেছি ঈদের পর লকডাউনে দোকান বন্ধ রাখতে হবে। দোকান বন্ধ থাকলে সংসার চলবে কি করে? দিনের পর দিন দোকান বন্ধ থাকলে তো না খেয়ে মরতে হবে। সরকারের সাহায্য ছাড়া বেঁচে থাকা দুরুহ হবে।’
সংসারের চিন্তায় রাতে অনেকেই ঘুমাতে পারেন না। আছিয়া বেগম নামের স্থানীয় এক নারীর সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘আমি খাবারের হোটেলসহ বিভিন্ন জায়গা কাজ কাম করে খাই। কিন্তু এখন কাজকাম সব বন্ধ। কি করে যে চলবো ভেবে পাচ্ছি না। আমার ছেলেটাও বেকার হয়ে গেছে। সামনে দিন কিভাবে কাটবে ভেবে সারারাত ঘুমাতে পারছি না।’
কিছুদিন পরপর লকডাউনের অতিষ্ঠ হয়ে উঠেছেন নিম্ন আয়ের অনেক মানুষ। মশিউর রহমান মিশুক নামে এক ব্যাটারিচালিত অটোরিকশা চালক বলেন, ‘কিছু দিন পরপর লকডাউন দেয় সরকার। লকডাউনের সময় গ্যারেজ থেকে অটোরিকশা নিয়ে বের হলে পুলিশ অটোরিকশা আটক করে। লকডাউনে ইনকাম বন্ধ থাকলে কিভাবে চলব পরিবার নিয়ে।’
সিলেট টু ভোলাগঞ্জ রোডে সিএনজি চালায় সুরুজ আলী। জীবিকার তাগিদে সিএনজি নিয়ে বের হয়েছিলেন। কিন্তু করোনার ভয়ের কারণে উপজেলার বাহিরল কোথাও যাত্রী পরিবহন করেন না। পাঁচ সদস্যের পরিবারের ভার তার কাঁধে। তিনি বলেন, ‘একজনের আয় দিয়ে পাঁচ সদস্যের পরিবার চালানো স্বাভাবিক পরিস্থিতিতেই কঠিন। এখন করোনা ও লকডাউনে আয়-রোজগার তেমন নেই। খুবই কষ্টে দিন যাচ্ছে। ঘরে বৃদ্ধ মা, তার ওষুধও কিনতে পারছি না। কেউ সহযোগিতার কোনও হাত বাড়াচ্ছে না।’
এভাবেই করোনা প্রাদুর্ভাবের কারণে টানা লকডাউনে দিনমজুররা পড়েছেন বিপাকে, কাজ নেই। তাই বন্ধ উপক্রম আয়ের পথ। মহামারির কারণে কর্মহীন হয়ে পড়ায়, দীর্ঘ হচ্ছে হতাশা। তাই সরকারের কাছে সহযোগিতা চান মানুষগুলো। আবার যাতে কাজে ফিরতে পারেন, সেজন্য যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ খেটে খাওয়া সাধারণ মানুষের।
আরসি-০৩