সিলেটে করোনার টিকা: প্রথমে অনীহা, এখন ভিড়

নাবিল হোসেন


জুলাই ২০, ২০২১
০৪:৪০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ২০, ২০২১
০৫:৪৫ অপরাহ্ন



সিলেটে করোনার টিকা: প্রথমে অনীহা, এখন ভিড়
# ফেরত আসে লক্ষাধিক ডোজ টিকা # এখন টিকা নিতে মানুষের ভিড়

সিলেট জেলার উপজেলাগুলোতে প্রথম ধাপে টিকা গ্রহণে সাধারণ মানুষের মধ্যে অনীহা ছিল। ফলে প্রথম ধাপে উপজেলাগুলো থেকে ১ লাখ ১৩ হাজার ডোজ টিকা ফেরত আসে। তবে দ্বিতীয় দফায় গণটিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর উপজেলার বাসিন্দাদের মধ্যে টিকা গ্রহণের প্রবণতা বেড়েছে। 

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা যায়, গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে সারাদেশের মতো সিলেটেও শুরু হয় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকাদান কার্যক্রম। এ সময় সিলেটের ১৩ উপজেলার জন্য দুই দফায় ৩১ হাজার ভায়েল টিকা আসে। এক ভায়েলে ১০ ডোজ টিকা থাকে। অর্থাৎ ৩ লাখ ১০ হাজার ডোজ টিকা পাঠানো হয় উপজেলাগুলোতে। টিকা গ্রহীতা না পাওয়ায় এর মধ্যে ফেরত আসে ১১ হাজার ৩০০ ভায়েল অর্থাৎ ১ লাখ ১৩ হাজার ডোজ টিকা ফেরত আসে। উপজেলাগুলোর মধ্যে সবচেয়ে কম টিকাদান হয়েছিল কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ উপজেলায়। 

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘মানুষের সচেতনতার অভাবের কারণেই টিকাগুলো ফেরত এসেছিল। কারণ প্রতিটি টিকার নির্দিষ্ট মেয়াদ থাকে। কিন্তু উপজেলাগুলোতে টিকা নেওয়ার আগ্রহ কম থাকায় এসব টিকার মেয়াদও শেষ হয়ে যাচ্ছিল। তাই উপজেলাগুলো থেকে টিকা এনে যেখানে চাহিদা বেশি সেখানে দেওয়া হয়েছিল।’ 

এদিকে, টিকা সঙ্কটের কারণে গত জুনের প্রথম সপ্তাহেই সিলেটে বন্ধ হয়ে যায় টিকাদান কার্যক্রম। এ সময় পর্যন্ত জেলায় অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকার টিকার প্রথম ডোজ নিয়েছিলেন ১ লাখ ১৪ হাজার ১১ জন। আর দ্বিতীয় ডোজ নিয়েছিলেন ৮৪ হাজার ৫৭১ জন। গত ১৯ জুন থেকে সিলেটে সিনোফার্মের প্রথম ডোজ প্রদান শুরু হয়। তবে এ সময় জেলায় একটি কেন্দ্রে মেডিকেল-নার্সিং শিক্ষার্থী এবং পূর্বের নিবন্ধন করে টিকা না পাওয়া ব্যক্তিদের দেওয়া হয়েছিল। 

গত ১৩ জুলাই থেকে আবারও দেশব্যাপী শুরু হয়েছে গণটিকা কার্যক্রম। গত ১১ জুলাই সিলেট জেলায় ১৯ হাজার ২০০ ডোজ মডার্নার টিকা এবং ৪৫ হাজার ডোজ সিনোফার্মের টিকা আসে। স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, দেশের সিটি করপোরেশন এলাকায় দেওয়া হচ্ছে মডার্নার টিকা এবং জেলা-উপজেলায় দেওয়া হবে চীনের সিনোফামের টিকা। প্রথম বার গণটিকা কার্যক্রমে টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের যে অনীহা ছিল এবারের চিত্র ঠিক বিপরীত। এবার উপজেলার মানুষজন টিকা নেওয়ার জন্য উদগ্রীব হয়ে আছেন। স্বাস্থ্য কর্মীরা বলছেন, গত বছরের তুলনায় এবার টিকাকেন্দ্রগুলোতে মানুষের ভিড় অনেক বেশি এবং চাপ সামলাতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন। 

স্বাস্থ্য সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, প্রথমবার টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষের অনীহার পিছনে বড় ভূমিকা ছিল টিকা নিয়ে গুজব। ফলে গ্রামের মানুষরা টিকা নিতে আগ্রহী হননি। এছাড়া এবার করোনা গ্রামগঞ্জে ছড়িয়ে পড়েছে। ফলে স্থানীয়রা দেখছেন যারা আগে টিকা গ্রহণ করেছেন এবার তারা কম আক্রান্ত হচ্ছেন। আর যারা আক্রান্ত হচ্ছেন তাদের শারীরিক অবস্থা অন্যদের মতো খারাপ হচ্ছে না। 

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর জানিয়েছে, দ্বিতীয় দফায় গণটিকা কার্যক্রম শুরু হওয়ার পর তিনদিনে সিলেটের উপজেলাগুলোতে ৫ হাজার ৭৮১ জন টিকা টিকা নিয়েছেন। এরমধ্যে ৩ হাজার ৯৪৩ জন পুরুষ এবং ১ হাজার ৮৩৮ জন নারী। এদিকে প্রতিদিনই বাড়ছে টিকাগ্রহীতার সংখ্যা। প্রথম দিন ১৩ জুলাই জেলায় সিনোফার্মের টিকা নিয়েছিলেন ১ হাজার ৬২৫ জন। দ্বিতীয় দিন ১৪ জুলাই টিকা নিয়েছেন ১ হাজার ৯৯৯ জন এবং গত বৃহস্পতিবার টিকা নিয়েছেন ২ হাজার ১৫৭ জন। 

সিলেটের দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. মো. ময়নুল আহসান সিলেট মিররকে বলেন, ‘গত বছর টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে মানুষ খুব বেশি আগ্রহী ছিলেন না। কারণ তাদের মধ্যে বিভিন্ন গুজব কাজ করেছে। তবে এবার টিকাকেন্দ্রে মানুষের ভিড় বেড়েছে। তিন দিনে উপজেলায় ৫ শতাধিক মানুষ টিকা নিয়েছেন।’

প্রথমবার যে উপজেলাগুলোতে কম টিকাদান হয়েছে তারমধ্যে একটি কানাইঘাট উপজেলা। উপজেলাটির স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. অভিজিৎ শর্মা জানান, প্রথম দফায় তারা ইউনিয়ন ইউনিয়নে টিকা নিয়ে গেলেও কেউ টিকা নিতে রাজী ছিলেন না। 

তিনি বলেন, ‘এবার মানুষের আগ্রহ অনেক বেশি। গত তিন দিনে উপজেলার ৩৩০ জনকে টিকা দেওয়া হয়েছে। প্রতিদিন ১১০ জনকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। তবে প্রথম দফায় টিকাদান কার্যক্রমের সময় প্রতিদিন ৮-১০ জন করে টিকা নিতেন।’ সিনোফার্মের পাশাপাশি অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা বা মডার্নার টিকা দিলে টিকা গ্রহীতার সংখ্যা আরও বাড়বে বলে মনে করেন তিনি।  

ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘মানুষ যখন দেখছেন টিকা গ্রহীতাদের মধ্যে করোনা আক্রান্ত ও মৃত্যুর ঝুঁকি কম তখন তাদের আগ্রহ বেড়েছে। এছাড়া এখন টিকা ছাড়া বিদেশ ভ্রমণও করা যায় না। এতেও টিকা গ্রহীতার সংখ্যা বেড়েছে।’ জেলায় টিকার সঙ্কট আছে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এখন পর্যন্ত পর্যাপ্ত টিকা রয়েছে।’

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বলছে, এখন ৩৫ ঊর্ধ্ব যে কেউ নিবন্ধন করে টিকা নিতে পারবেন। এছাড়া বীর মুক্তিযোদ্ধা ও বীরাঙ্গনা, সামরিক বাহিনী, বেসামরিক বিমান, জরুরি সেবায় নিয়োজিত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী, ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, ধর্মীয় প্রতিনিধি, নির্বাচিত জনপ্রতিনিধি, আইনজীবীসহ শিক্ষার্থী, সম্মুখ সারির সাংবাদিক, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা নিবন্ধন করতে পারবেন।

টিকা গ্রহণের জন্য আগের মতোই সুরক্ষা অ্যাপের মাধ্যমে নিবন্ধন করা যাবে। নিবন্ধনের পর এসএমএস দেওয়া হবে এবং তারপর নির্দিষ্ট দিনে নির্দিষ্ট কেন্দ্রে গিয়ে টিকা নিতে হবে। তবে টিকার কেন্দ্র পরিবর্তন করা যাবে না। এছাড়া নির্দিষ্ট দিনের আগে বা পরে টিকা নিলে টিকা দেওয়ার তথ্য ডাটাবেজে আপলোড হবে না, ফলে টিকা কার্ড বা ভ্যাকসিন সার্টিফিকেট পাওয়া যাবে না। 

আরসি-০১