নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ১৯, ২০২১
০৪:৩৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ১৯, ২০২১
০৪:৩৯ পূর্বাহ্ন
করোনা সংক্রমণ ও মৃত্যুতে বিপর্যস্ত দেশ। এর মধ্যে শুরু হয়েছে ডেঙ্গুর প্রকোপ। তবে এখন পর্যন্ত সিলেট জেলায় কোনো ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়নি। যদিও এখন পর্যন্ত নগরের পাঁচটি স্থানে এডিস মশার লার্ভার সন্ধান পেয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন। করোনার এই কঠিন পরিস্থিতিতে ডেঙ্গুর বিষয়ে অনেক বেশি সর্তক থাকতে হবে বলে বলছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশনস সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের তথ্য অনুযায়ী, এ বছর জানুয়ারি থেকে ১৬ জুলাই পর্যন্ত দেশে একহাজার ৫৮ জন ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন। জুন পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন ৩৭২ জন, আর শুধু জুলাই মাসের এই ১৫ দিনেই ৬৮৬ জন আক্রান্ত হয়েছেন। যা ছয় মাসের আক্রান্তের সংখ্যার প্রায় দ্বিগুণ।
তবে সিলেটে এখনও ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত কোনো রোগী শনাক্ত হয়নি বলে জানিয়েছে জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয়। শনিবার সকাল পর্যন্ত ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালেও কোনো ডেঙ্গু রোগী ভর্তি হননি বলে জানিয়েছে হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
বাংলাদেশে মার্চ-এপ্রিল থেকে সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাস পর্যন্ত থাকে ডেঙ্গুর প্রকোপ। ডেঙ্গুর জন্য দায়ী মশা ‘এইডিস ইজেপ্টাই’, যার একটি কামড়ই ডেঙ্গু সংক্রমণের জন্য যথেষ্ট। আর বর্ষা শুরু হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই সবস্থানেই এই মশার উপদ্রব শুরু হয়ে যায়। মশার বংশবিস্তারের আদর্শ স্থান জমে থাকা পানি। বৃষ্টির দিনে জলাবদ্ধতা বাড়ে, ফলে মশার বংশবিস্তারের স্থানও বাড়ে। তাই মশার উপদ্রব থেকে বাঁচতে অবশ্য করণীয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো যেসব জায়গায় পানি জমে থাকতে পারে সেগুলো পরিষ্কার করে ফেলা।
এডিসের লার্ভা নিধনে এখন পর্যন্ত নগরের তিনটি ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়েছে সিলেট সিটি করপোরেশন। ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের নয়টি স্থানে অভিযান চালিয়ে পাঁচটি জায়গায় এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। এছাড়া ১৩ ও ১৭ নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকটি এলাকায় অভিযান চালিয়ে লার্ভা পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘এখনও আমাদের জন্য স্বস্তির খবর নগরে ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে আশঙ্কার কথা হচ্ছে ঈদে ঢাকাসহ বিভিন্ন জায়গা থেকে মানুষ সিলেটে আসবে। তারা ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হলে তাদের মাধ্যমে অন্যরা আক্রান্ত হতে পারেন।’
এডিসের লার্ভা নিধনে সিসিক কাজ করছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা ইতোমধ্যে পানি জমে আছে এমন তিনটি ওয়ার্ডের বেশ কয়েকটি এলাকা থেকে নমুনা সংগ্রহ করেছি। এরমধ্যে ২৬ নম্বর ওয়ার্ডের পাঁচটি স্থানে এডিসের লার্ভা পাওয়া গেছে। দক্ষিণ সুরমার টায়ার-টিউবের দোকানের টায়ারে জমানো পানি এবং স্যানিটারি দোকানের জিনিষপত্রে জমানো পানিতে এসব লার্ভা পাওয়া যায়। এ সময় দোকানগুলোতে স্প্রে মেশিন ও ফগার মেশিন দিয়ে মশার ওষুধ ছিটিয়ে লার্ভা ধ্বংস করা হয়।’
তিনি নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বলেন, ‘নিজের বাসা ও বাসার আশপাশে পানি জমতে দেওয়া যাবে না। দিনে ও রাতে ঘুমানোর সময় মশারি টানিয়ে ঘুমাতে হবে।’ কোনো স্থানে প্রথমবার লার্ভা পাওয়ার পর একই জায়গায় দ্বিতীয়বার লার্ভা পেলে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে জরিমানা করা হবে বলে জানিয়েছেন তিনি।
কোভিড-১৯ ও ডেঙ্গু জ্বর দুটোই ভাইরাসজনিত জ্বর। দুটোতেই কিছু উপসর্গ একেবারে একই রকম। যেমন, জ্বর বা জ্বরজ্বর ভাব, শরীর ম্যাজম্যাজ করা, ক্লান্তি, অবসাদ ইত্যাদি। তবে স্বাস্থ্য বিশেজ্ঞরা বলছেন এদের কিছু বিশেষত্বও আছে। ডেঙ্গু জ্বর হলে জ্বরের সঙ্গে প্রচণ্ড মাথাব্যথা, চোখের পেছনে ব্যথা, শরীরের হাড়ে ব্যথা থাকে। আর করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হলে জ্বরের সঙ্গে গলাব্যথা, অরুচি, কাশি ও শ্বাসকষ্ট হয়। তাই এ সময় জ্বর হলে দুটো পরীক্ষাই করে ফেলা ভালো।
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত সিলেট মিররকে বলেন, ‘জেলায় এখনও ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়নি। তবে সাধারণ মানুষকে কোভিডের পাশাপাশি ডেঙ্গুর বিষয়েও সর্তক থাকতে হবে।’
এনএইচ/আরসি-০১