উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর
জুলাই ১৯, ২০২১
০২:২৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ১৯, ২০২১
০২:২৩ পূর্বাহ্ন
আসন্ন ঈদুল আজহাকে সামনে রেখে ওসমানীনগরে জমে উঠেছে অনলাইন পশুর হাট। করোনা মহামারির ২য় ঢেউ মোকাবেলায় কঠোর লকডাউন পরিস্থিতিতে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিগত উদ্যোগে অনেকেই ফেসবুক পেজ চালু করে কোরবানির গরু বিক্রির বিজ্ঞাপন দিয়ে ভালো সাড়া পাচ্ছেন।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা যায়, উপজেলায় মাংস উৎপাদনকারী খামারির সংখ্যা ৩৬৬ জন। গতবছর কোরবানির পশু বিক্রি করে খামারিরা লাভবান হওয়ায় সেই লোভে এবারও অনেকে বিক্রয়ের জন্য গরু ও ছাগল পালন করেছিলেন। কিন্তু কঠোর লকডাউন পরিস্থিতিতে তাদের কপালে দুশ্চিন্তার ভাঁজ পড়ে যায়। তাদের দুশ্চিন্তা দূর করতে গত ১ জুলাই থেকে উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের উদ্যোগে ‘অনলাইন পশুর হাট, ওসমানীনগর, সিলেট’ নামের একটি ফেসবুক পেজ চালু করা হয়। ইতোমধ্যে এই পেইজে গরু বিক্রির প্রায় ২ হাজার পোস্ট আপলোড করা হয়েছে। পেজে খামারিদের বিক্রয়যোগ্য পশুর ছবি দিয়ে সম্ভাব্য ওজন, বিক্রেতার নাম, ঠিকানা ও মোবাইল নাম্বার পোস্ট করা হচ্ছে। সেখান থেকে ক্রেতারা তাদের পছন্দমতো পশু ইনবক্সে দরদাম করে খামারির বাড়ি থেকে ক্রয় করছেন। এই প্রক্রিয়ায় প্রতিদিন গড়ে ৮০ থেকে ১০০টি গরু বিক্রি হচ্ছে বলে প্রাণিসম্পদ অফিস সূত্রে জানা গেছে।
হাটে না গিয়ে স্বাস্থ্যবিধি মেনে ঘরে বসে অনলাইনে কোরবানির পশু বিক্রির এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন উপজেলার খামারিরা। উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের কটালপুর গ্রামের ইয়াছিন আলী জানান, তিনি অনলাইনের মাধ্যমে ১০টি গরু বিক্রির বিজ্ঞাপন দেন। ইতোমধ্যে ৬টি গরু বিক্রি হয়েছে। এ পর্যন্ত তিনি ৪৮ হাজার থেকে ৭০ হাজার টাকা মূল্যের গরু বিক্রি করেছেন।
তিনি বলেন, লকডাউন পরিস্থিতিতে কিভাবে গরু বিক্রি করব তা নিয়ে ভাবনায় ছিলাম। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের এই উদ্যোগ আমাদের দুশ্চিন্তা দূর করেছে। অনলাইনে গরু বিক্রিতে ভালো মূল্য পাওয়া যাচ্ছে। খরচ তেমন একটা নেই বললেই চলে। ক্রেতারা বাড়িতে এসে টাকা দিয়ে গরু ক্রয় করছেন।
কুরুয়া চিন্তামনি এলাকার সিতারা ডেইরি ফার্মের সানুর আলী মামুন জানান, তিনি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসের অনলাইন পশুর হাটে বিজ্ঞাপন দিয়ে সাড়া পেয়েছেন। তিনি ৮টি গরু গড়ে ৫০ থেকে ৮৩ হাজার টাকায় বিক্রি করেছেন। কোনো প্রকার ঝামেলা ছাড়া গরু বিক্রি করতে পারায় তিনি আনন্দিত।
প্রথমপাশার জাহাঙ্গীর আলম জানান, তিনি বিক্রয়ের জন্য ৩টি গরুর বিজ্ঞাপন দিয়েছেন। এখন পর্যন্ত গরু বিক্রি করতে না পারলেও দরদাম চলছে। দুই-একদিনের মধ্যেই গরুগুলো বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
এদিকে, উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস ছাড়াও অনেকে ব্যক্তিগতভাবে ফেসবুকে পোস্ট দিয়ে গরু বিক্রি করছেন। কটালপুর গ্রামের সমছু মিয়ার একটি ষাঁড় ২ লাখ ২০ হাজার টাকায় বিক্রি হয়েছে। উছমানপুর ইউনিয়নের বেরাখাল গ্রামের সাজন আলী শাহীওয়াল জাতের একটি ষাঁড় পালন করেছিলেন আসন্ন ঈদে ভালো দামে বিক্রির জন্য। কিন্তু কঠোর লকডাউন পরিস্থিতিতে ষাঁড় বিক্রির স্বপ্ন লাটে ওঠে। উপায় না তিনি ফেসবুকে পোস্ট দেন। এই পোস্ট দেখে ঢাকার এক শিল্পপতি মোবাইল ফোনের মাধ্যমে তার সঙ্গে দর-দাম করে প্রায় ১৭ মণ ওজনের ষাঁড়টি ৪ লাখ টাকায় কিনে নেন।
সাজন আলী বলেন, ঘরে গাভীর জন্ম দেওয়া এই ষাঁড়টি খুব যতœ করে লালন-পালন করেছি। শাহীওয়াল জাতের এই গরুটি লালন-পালনে গত ৪ বছরে প্রায় ২ লাখ টাকা খরচ হয়েছে। প্রিয় গরুটিকে বিক্রি করায় মনটা খারাপ। কিন্তু আজ নয় কাল, বিক্রি তো করতেই হতো। আর ভালো দামে পাওয়াতে আমাদের পরিবারের সবাই খুশি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. রফিকুল ইসলাম বলেন, খামারিদের কথা মাথায় রেখে আমরা ‘অনলাইন পশুর হাট, ওসমানীনগর, সিলেট’ নামে একটি ফেসবুক পেজ চালু করেছি। এতে খামারিরা লকডাউন পরিস্থিতিতে ঘরে বসেই পশু বিক্রি করতে পারছেন। ওসমানীনগর উপজেলা নতুন হলেও এখানে বিক্রয়যোগ্য অনেক গরু রয়েছে। প্রাণিসম্পদ অফিস এই পেজের মাধ্যমে শুধুমাত্র ক্রেতা-বিক্রেতার মধ্যে যোগাযোগ করিয়ে দিচ্ছে। দর-দামসহ সবকিছু তারা নিজেরা ঠিক করছেন।
ইউডি/আরআর-১৩