সিলেটে অক্সিজেন সংকটে রোগীদের ছাড়পত্র, ২ জনের ‘মৃত্যু’

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুলাই ১৮, ২০২১
০২:১৬ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৮, ২০২১
০২:১৬ অপরাহ্ন



সিলেটে অক্সিজেন সংকটে রোগীদের ছাড়পত্র, ২ জনের ‘মৃত্যু’

সিলেট কমিউনিটি বেইজড হাসপাতালে অক্সিজেন সংকটের কারণে ১১ জন রোগীকে দেওয়া হয় ছাড়পত্র। হাসপাতাল থেকে বের হওয়া রোগীদের মধ্যে দুইজনের ‘মৃত্যু’ হয়। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে অবহেলার অভিযোগ স্বজনদের। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, অক্সিজেন সংকটের কারণে রোগীদের জীবন বাঁচানোর জন্যই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র দেওয়া হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার মধ্যরাতে হাসপাতালের আইসিইউতে ভর্তি ছিলেন ২৯ জন। এছাড়া সেন্ট্রাল অক্সিজেন দিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছিল আরও ১১ জনকে। এ সময় হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়। মহাসড়কে যানজটের কারণে সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন সরবরাহ করতে পারবে না জানানোর পর এই সংকট তৈরি হয়। এই অবস্থায় বেশি অক্সিজেন সাপোর্টে থাকা রোগীদের অন্য হাসপাতালে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়। তবে সিলেটের হাসপাতালগুলোতে শয্যা খালি না থাকায় অনেকেই শয্যা পাননি। 

তবে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন থাকা রোগীর স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ হঠাৎ করে এসে বলে হাসপাতালে অক্সিজেন সংকট। রোগীদের অন্য কোথাও নিতে হবে। অক্সিজেনের সংকট আগে থেকে জানার পরও তাদের জানানো হয়নি।

এরকম অভিযোগ করে গত শুক্রবার মদন মোহন কলেজের শিক্ষার্থী মোহাম্মদ সাইফ ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। সিলেট মিররের পাঠকদের জন্য পোস্টটি হুবহু তুলে ধরা হলো, ‘সিলেট কমিউনিটি বেইজড হসপিটালে ICU তে আম্মা চিকিৎসাধীন অবস্থায় গত ১৫ জুলাই মধ্যরাতে তাদের অক্সিজেন সংকট দেখা দেয়। অক্সিজেনের সংকট জেনেও তারা আমাদের কোন ইনফরমেশন করেনি। ২-৩ জন নার্স এসে বলে আপনাদের রোগীকে অন্য কোথাও নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করেন। এখানে অক্সিজেন আর মাত্র ৩০-৪০ মিনিট সাপ্লাই দিতে পারবে। এমন কঠিন পরিস্থিতিতে ৪০-৫০ জন রোগী..... রাত ০৩ টার দিকে কোথায় হসপিটাল পাবে!! কোথায় নিয়ে যাবে! দিশেহারা হয়ে যাই। আম্মাকে কোথায় নিয়ে যাবো এই অবস্থায়!! হাসপাতালে সকল রোগীর আত্মীয় স্বজনের ভির! ইমারজেন্সি এম্বুল্যান্সে আম্মাকে উসমানিতে নিয়ে যাই। আম্মার অক্সিজেন লাগতো ১৫ লিটার করে, এই অবস্থায় অক্সিজেন সংকট! এম্বুল্যান্সেও অক্সিজেন সংকট, ০৪ লিটার অক্সিজেন দিয়ে আম্মাকে উসমানীতে নিয়ে যাই।  উসমানীতে ইমারজেন্সি ডাক্তার দেখে ০৩ নম্বার ওয়ার্ডে ভর্তি দেয়। ইমারজেন্সি থেকে ০৪ তালায় আম্মাকে নিয়ে যাবো অথচ কোন অক্সিজেন সিলিন্ডার পাচ্ছি না। অক্সিজেন ছাড়াই আম্মাকে ৪ তালায় নিয়ে যাই। আম্মার অবস্থা সময় সময় খারাপের দিকে। নিজেদের এত্ত অসহায় মনে হচ্ছিল তখন। আম্মার এই অসুস্থের জন্য sylhet community based hospital দায়ী....

অবশেষে আজ সকালে উসমানী ICU তে আম্মাকে ভর্তি করি। আম্মার জন্য সবাই দোয়া করবেন। আল্লাহ যেন আমার আম্মাকে তাড়াতাড়ি সুস্থ করেন।’

এ বিষয়ে মোহাম্মদ সাইফের সঙ্গে শনিবার সন্ধ্যায় যোগাযোগ করা হলে তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমার আম্মা মারা গেছেন। আমার পক্ষে এখন কথা বলা সম্ভব না।’

এসব বিষয়ে হাসপাতালটির ব্যবস্থাপক (এডমিন) মুর্শেদুর রহমানের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমাদের হাসপাতালে তিনটি প্রতিষ্ঠান অক্সিজেন সরবরাহ করে থাকে। বৃহস্পতিবার রাত ১২টায় অক্সিজেন সরবরাহ করার কথা ছিল ‘স্পেকট্রা’র। তবে রাত পৌনে ১২টার দিকে তারা জানায় ভৈরবে তাদের গাড়ি আটকে গেছে। তাই গাড়ি আসবে না। এ সময় আমাদের হাসপাতালে অক্সিজেন মজুত ছিল প্রায় ৬ ঘণ্টা চলার মতো। তখন হাসপাতালে যাদের ২০ লিটার বা বেশি পরিমান অক্সিজেন লাগছে তাদেরকে বিষয়টি অবগত করি এবং অন্য হাসপাতালে নেওয়ার পরামর্শ দেই, যাতে তাদের জীবনটা বেঁচে যায়। এই বিষয়টি আমরা রোগীদের স্বজনদের ৩-৪ ঘণ্টা আগেই অবগত করি।’

তিনি আরও বলেন, ‘আমরা নিজস্ব উদ্যোগে অ্যাম্বুলেন্স এনে ১১ জন রোগীকে হাসপাতাল থেকে বিদায় দেই। কিন্তু কোভিডের কারণে নগরের প্রায় সব হাসপাতাল রোগীতে পরিপূর্ণ থাকায় অনেকেই শয্যা পাননি। এরমধ্যে কাঞ্চন বিবি নামের এক রোগী কোনো হাসপাতালে শয্যা পাননি। পরে তিনি মারা যান। 

মারা যাওয়ার পর স্বজনরা তাকে আমাদের হাসপাতালে নিয়ে আসেন। এসব বিষয় আমি আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে অবগত করি।’

তিনি বলেন, ‘কোনো হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ চায় না তার রোগী মারা যাক। আমরা অক্সিজেন না পেলে তো কিছু করার থাকে না। তবে আমাদেরকে যারা অক্সিজেন সরবরাহ করছে তারাও চেষ্টা করছে সর্বাত্মক সরবরাহ নিশ্চিত করার। ওইদিন যানজটের কারণে তারা দিতে পারেনি। এদিকে যে ১১ জন রোগী আমাদের হাসপাতাল ছেড়ে গিয়েছিলেন তাদের কাছে আমরা প্রায় সাড়ে সাত লাখ টাকা বিল বকেয়া আছে। তবে আমরা একজনকে এই বিল দিতে বলিনি।’

এ বিষয়ে অক্সিজেন সরবরাহকারী প্রতিষ্ঠান স্পেকট্রার সিলেটের ডিস্ট্রিবিউটর মাসুদ আহমদ বলেন, ‘অনেক সময় যান্ত্রিক ত্রুটি বা অন্যান্য কারণে সরবরাহ করতে কিছুটা দেরি হয়। তবে সরবরাহ প্রতিদিন দিয়ে যাচ্ছি।’

অক্সিজেনের সংকট আছে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সারাদেশের মতো সিলেটেও সিলিন্ডার ও তরল অক্সিজেনের সংকট আছে। কারণ অক্সিজেন লাগছে বেশি। হাসপাতালগুলোতে রোগী বেশি ভর্তি হওয়ায় এই সংকট তৈরি হচ্ছে।’

এ বিষয়ে কিছু জানেন না বলে জানিয়েছেন, সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত। তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘এখন যেহেতু জেনেছি বিষয়টি খতিয়ে দেখব।’

আরসি-১৩