সিলেটে ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দির প্রকোপ

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুলাই ১৬, ২০২১
০৪:২৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৬, ২০২১
০৪:২৯ পূর্বাহ্ন



সিলেটে ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দির প্রকোপ
তবু করোনা টেস্টে অনীহা

সিলেটের ঘরে ঘরে জ্বর-সর্দির প্রকোপ দেখা দিয়েছে। পরিবারের একজন জ্বরে আক্রান্ত হলে অন্য সদস্যরাও আক্রান্ত হচ্ছেন। জ্বর-সর্দি-কাশি দুই তিনদিনের বেশি থাকলেই করোনার নমুনা পরীক্ষা করানো উচিত বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সিলেটজুড়ে চলছে করোনার তান্ডব। প্রতিদিন জেলায় দুই শতাধিক মানুষের করোনা শনাক্ত হচ্ছে। এর মধ্যেই গত এক সপ্তাহ ধরে নগরজুড়ে জ্বরের প্রকোপ দেখা দিয়েছে। শিশু, বৃদ্ধসহ প্রায় সব বয়সের মানুষই জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে অন্যবারের তুলনায় জ্বর কিছুটা আলাদা। এবার অনেকেই মাথায় প্রচন্ড ব্যথা অনুভব করছেন। একবার শুরু হলে সপ্তাহ পেরিয়েও ছাড়ছে না জ্বর। তারসঙ্গে রয়েছে সর্দি-কাশি ও হাঁচি। একজন আক্রান্ত হওয়ার পর পরিবারের অন্যরাও দ্রুত আক্রান্ত হচ্ছেন। তবে বেশিরভাগই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হচ্ছেন না। জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার বিষয়টি গোপন রেখে ফার্মেসি থেকে ওষুধ সেবন করছেন অনেকে। করোনার নমুনা পরীক্ষা করানোয় আগ্রহ কম তাদের।

নগরের সুবিদবাজার এলাকার শারমিন রিমা সিলেট মিররকে বলেন, ‘দুদিন ধরে বাবার জ্বর, হাঁচি, সর্দি। এবার জ্বরের সঙ্গে প্রচন্ড মাথা ব্যাথাও রয়েছে। ফার্মেসি থেকে জ্বরের ওষুধ এনে খাওয়াচ্ছি।’

মির্জাজাঙ্গাল এলাকার আহমেদ রাহী জানান, ৪-৫ দিন ধরে তিনি জ্বর ও মাথা ব্যাথায় আক্রান্ত। শরীর খুব দুর্বল মনে হচ্ছে। অনেক সময় শ্বাস নিতেও কষ্ট হচ্ছে। করোনা পরীক্ষার ভোগান্তি পোহাতে চান না বলে তিনি নমুনা জমা দিচ্ছেন না।

জানা গেছে, এবার বাচ্চারা জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে বেশি। এরমধ্যে অনেকের করোনাও শনাক্ত হচ্ছে। নগরের তাঁতিপাড়া এলাকার রুনা খান বলেন, ‘কয়েকদিন ধরে আমার ৭ বছর বয়সী ছেলের জ্বর। অনেক সময় ১০৩ ডিগ্রি পর্যন্ত জ্বর উঠে যাচ্ছে। জ্বরের কারণে কিছুই খেতে পারছে না সে। ফলে শরীরও খুব দুর্বল হয়ে গেছে।’

জেলা-উপজেলাগুলোর অবস্থাও প্রায় একই রকম। তবে নগরে অনেকেই করোনা পরীক্ষায় আগ্রহী হলেও উপজেলাতে এই সংখ্যা খুবই কম। বেশিরভাগই বিষয়টি গোপন রেখে স্বাভাবিক কাজকর্ম করছেন। শ্বাসকষ্ট বাড়লেই করাচ্ছেন নমুনা পরীক্ষা।

বিয়ানীবাজার উপজেলার বাসিন্দা ফারাজ আবীর সিলেট মিররকে বলেন, ‘উপজেলায় জ্বর-সর্দির প্রকোপ অনেক বেশি। তবে নমুনা পরীক্ষায় মানুষের আগ্রহ কম। সপ্তাহে হয়তো ৩০-৪০টি নমুনা জমা পড়ে। বেশিরভাগই শ্বাসকষ্ট অনুভব করলেই নমুনা জমা দিতে যান।’

সিলেটের ফার্মেসিগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত এক সপ্তাহ ধরে প্যারাসিটামল, নাপা, নাপা এক্সটেন্ড, নাপা এক্সট্রা, জিম্যাক্সের চাহিদা বেড়েছে। বেশিরভাগই ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ওষুধ কিনতে আসছেন।

নগরের চৌহাট্টা এলাকার ঔষধের দোকান মেডিসিন পয়েন্ট’র বিক্রেতা সুমন রহমান সিলেট মিররকে বলেন, ‘কিছুদিন ধরে জ্বর-সর্দির ওষুধের চাহিদা অনেক বেশি। অনেকেই চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন নিয়ে আসছেন। তবে বেশিরভাগ আসছেন প্রেসক্রিপশন ছাড়া।’

সিলেট ফার্মার বিক্রেতা আরাফাত হোসেন বলেন, ‘প্রেসক্রিপশন ছাড়া আমরা কাউকে অ্যান্টিবায়েটিক ওষুধ দেই না। তবে নাপা-প্যারাসিটামল এসব ওষুধ অনেকেই প্রেসক্রিপশন ছাড়া নিয়ে যাচ্ছেন। কয়েকদিন ধরে এসব ওষুধের চাপ অনেক বেশি। অনেক সময় ওষুধের স্টকও ফুরিয়ে যায়।’

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অনেকের সিজনাল ফ্লু থেকেও জ্বর হতে পারে, আবার করোনা আক্রান্তের শঙ্কাও রয়েছে। করোনা হলে জ্বর-কাশি-মাথা ব্যথা এসব থাকে। এছাড়া দুই তিন দিন পর তাদের খাবারের রুচিও কমে যায়। তাই জ্বর তিন চারদিনের বেশি থাকলে অবশ্যই পরীক্ষা করানো উচিত। এছাড়া জ্বর হলে নিজেকে আলাদা করে রাখাই ভালো।

জালালাবাদ রাগীব রাবেয়া মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের শিশু বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ডা. মো. তারেক আজাদ বলেন, ‘আগে শিশুরা কোভিডে আক্রান্ত না হলেও এবার অনেক শিশুই কোভিডে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই শিশুদের ব্যাপারে অভিভাবককে আরও সর্তক হতে হবে। এছাড়া যাদের জ্বর ৪৮ ঘণ্টা পরও কমছে না তাদের অবশ্যই ডাক্তারের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। কারণ এবার কোভিডে আক্রান্ত হয়ে অনেক শিশুর শারীরিক অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হচ্ছে।’

সিলেট সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মো. জাহিদুল ইসলাম সিলেট মিররকে বলেন, ‘ভাইরাল ফ্লু বা কোভিড দুই কারণেই জ্বরের প্রকোপ বাড়তে পারে। তবে জ্বর দুই তিনদিনের বেশি থাকলে অবশ্যই কোভিড টেস্ট করা উচিত। টেস্ট না করলে তাদের মাধ্যমে অন্যরাও বিপদে পড়তে পারেন।’

আরসি-০১