সিলেটে বেড়েছে সংক্রমণের গতি, শনাক্ত ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুলাই ১৪, ২০২১
০১:৩৭ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৪, ২০২১
০১:৫০ অপরাহ্ন



সিলেটে বেড়েছে সংক্রমণের গতি, শনাক্ত ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে
# শেষ ১০ হাজার শনাক্ত ৮১ দিনে

সিলেট বিভাগে করোনা রোগী শনাক্তের সংখ্যা ৩০ হাজার ছাড়িয়েছে। দেশের কয়েক জায়গায় শনাক্তের হার কমলেও বরিশাল ও চট্টগ্রামের সঙ্গে সিলেটে দ্রুতই ওপরে উঠছে সংক্রমণের গতি। রীতিমতো ঘুরে ঘুরে সিলেট বিভাগের চার জেলাতেই হচ্ছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ঊর্ধ্বমুখী বিস্তার। মঙ্গলবার (১৩ জুলাই) বিভাগের শনাক্তের হার ছিল ৪১ শতাংশ। এদিন সকাল ৮টা পর্যন্ত বিভাগে ৩০ হাজার ৪৫৮ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শেষ ১০ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৮১ দিনে। 

গত বছরের ৫ এপ্রিল বিভাগে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। সে হিসাবে বিভাগে করোনা সংক্রমণের ৪৬৪ দিন অতিক্রম হয়েছে মঙ্গলবার। বিভাগে প্রথম ১০ হাজার রোগী শনাক্ত হয় ১৪০ দিনে। পরের দশ হাজার ২৪৩ জন এবং শেষ দশ হাজার রোগী শনাক্ত হয়েছে মাত্র ৮১ দিনে।

অর্থাৎ দ্বিতীয় দশ হাজার রোগী শনাক্তে যে সময় লেগেছে তার তিনভাগের এক ভাগ সময় লেগেছে শেষ দশ হাজার রোগী শনাক্তে। বিভাগের চার জেলার মধ্যে এখন পর্যন্ত সিলেট জেলায় সর্বোচ্চ ১৯ হাজার ৯৫৭ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এছাড়া সুনামগঞ্জে ৩ হাজার ৩৯৯ জন, হবিগঞ্জে ৩ হাজার ২৮৬ জন ও মৌলভীবাজারে ৩ হাজার ৮১৬ জন রয়েছেন।

সোমবার সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার সকাল ৮টা পর্যন্ত বিভাগে ১ হাজার ২৯৫ নমুনায় ৫৪০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪১ দশমিক ৭০ শতাংশ। এর মধ্যে সিলেট জেলায় ৭৫২ নমুনায় ৩১৪ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৪১ দশমিক ৭৬ শতাংশ।

সুনামগঞ্জে ৮৫টি নমুনায় ২৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ২৯ দশমিক ৪১ শতাংশ। হবিগঞ্জে ১৫০টি নমুনা পরীক্ষায় ৭৬ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। শনাক্তের হার ৫০ দশমিক ৬৭ শতাংশ। আর মৌলভীবাজারে গত ২৪ ঘণ্টায় ৩০৮টি নমুনা পরীক্ষায় ১২৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ৪০ দশমিক ৫৮ শতাংশ। 

গেল বছরের এপ্রিলে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর মে-জুনে শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করে। তবে আগস্টের পর থেকে তা আবার কমতে শুরু করে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সংক্রমণ ছিল নিয়ন্ত্রণে। তবে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে আবারও বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এপ্রিলে বাড়ে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা।

মে মাসের প্রথম থেকে আবার শনাক্ত কমতে থাকলেও গত ঈদের পর বাড়তে শুরু করে। আর জুনের শেষ দিকে বাড়তে শুরু করে আশঙ্কাজনক হারে। এতে করে সিলেটের হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চাপ বেড়েছে।

ইতোমধ্যে সিলেটের হাসপাতালগুলোর আইসিইউ শয্যা রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। রোগীর স্বজনরা হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরেও কোনো আইসিইউ খালি পাচ্ছেন না। অনেক হাসপাতালের করোনা রোগীদের জন্য রাখা সাধারণ শয্যাও রোগীতে পরিপূর্ণ হয়ে গেছে।

স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্র জানিয়েছে, গত বছরের এপ্রিলে করোনা শনাক্ত হয় ১১০ জনের। মে মাসে শনাক্ত হয় ৯৩০ জনের। জুনে শনাক্ত হয় ৩ হাজার ৫৭৪ জন। জুলাই মাসে শনাক্ত হয় ৩ হাজার ৩০০ জন। আগস্ট মাসে শনাক্ত হয় ২ হাজার ৯৭৪ জন। সেপ্টেম্বরে শনাক্ত হয় ১ হাজার ৭৮২ জন। অক্টোবরে শনাক্ত হয় ১ হাজার ৯ জন। নভেম্বরে শনাক্ত হয় ৯৬৭ জন। ডিসেম্বরে শনাক্ত হয় ৮৪৭ জন।

এ বছরের জানুয়ারিতে শনাক্ত হয়েছে ৫০৯ জন। ফেব্রুয়ারিতে শনাক্ত হয় ৩০৩ জন। মার্চে শনাক্ত হয় ১ হাজার ১৮৬ জন। এপ্রিলে করোনা শনাক্ত হয় ৩ হাজার ২০১ জন। মে মাসে বিভাগে করোনা শনাক্ত হয় ২ হাজার ৪ জন। আর গত জুনে ৩ হাজার ২৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়। 

সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘সিলেটে সব হাসপাতালেই রোগীর চাপ বেড়েছে। এর মধ্যে সিলেটে নগরের বাইরের রোগীর সংখ্যা বেশি। তাই আমরা উপজেলাগুলোতে নির্দেশনা দিয়েছি আশঙ্কাজনক রোগী ছাড়া অন্য কাউকে যাতে হাসপাতালে না পাঠানো হয়।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘যেকোনোভাবে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা অবশ্যই কমাতে হবে। তাই সাধারণ মানুষকে স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে।’

এনএইচ/আরসি-১১