কাজ শেষের আগেই ধসে গেছে সিলেটের বাদাঘাট-শিবের বাজার সড়ক

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুলাই ১৪, ২০২১
০৪:২১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১৪, ২০২১
০৪:২১ পূর্বাহ্ন



কাজ শেষের আগেই ধসে গেছে সিলেটের বাদাঘাট-শিবের বাজার সড়ক

সিলেট সদর উপজেলার বাদাঘাট থেকে শিবের বাজার পর্যন্ত নির্মাণাধীন সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হওয়ার আগেই ধসে গেছে। সড়কে ফাটল ও ধসের কারণে কাজের মান নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। স্থানীয়দের মধ্যে দেখা দিয়েছে ক্ষোভ। তারা এ বিষয়টি তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন।

স্থানীয় সরকার ও প্রকৌশল অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, বাদাঘাট ব্রিজ থেকে শিবের বাজার পর্যন্ত প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক সংস্কারের জন্য তিন কোটি পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। সম্প্রতি এই সড়ক সংস্কার করে পাকাকরণের কাজ শুরু করে এমএইসি এবং এমপিটি নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।

কিন্তু, দুই কিলোমিটার সড়ক পাকাকরণের কয়েকদিনের মধ্যেই সড়কের বিভিন্ন স্থানে রাস্তা ধসে গেছে। হাটখোলা ইউনিয়নের মাঝপাড়া নামক স্থানে সড়কের কয়েক জায়গায় দুই থেকে তিন ফুট পাকা ধসে গেছে। কোথাও কোথাও নতুন পাকা টিকে থাকলেও মাটি ধসে গেছে। কোনো কোনো জায়গায় বাঁশের বেড়া দিয়ে মাটি আটকানোর চেষ্টা করা হয়। কিন্তু, সেই চেষ্টা ব্যর্থ হয়।

স্থানীয়রা বলছেন, মূলত সড়কের পাশে গার্ডওয়াল না থাকা এবং অপরিকল্পতভাবে মাটি ভরাটের কারণে এই অবস্থা হয়েছে। সড়কের কাজের মান নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। কিন্তু জবাবদিহির কোনো ব্যবস্থা নেই। শুরুতে ধস শুরু হওয়ায় সড়কটির স্থায়িত্ব নিয়ে শঙ্কা দেখা দিয়েছে।

এ বিষয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন স্থানীয় হাটখোলা ইউনিয়ন পরিষদের সদস্য তৈবুর রহমান বিরাই বলেন, ‘আমরা এ ব্যাপারে এলাকাবাসীর পক্ষে একটি লিখিত অভিযোগও দিয়েছি। তদন্ত সাপেক্ষে সংশ্লিষ্টদের অনিয়মের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যাবস্থা গ্রহণের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে জোর দাবি জানাচ্ছি।’

এ রাস্তা দিয়ে প্রতিদিন যাতায়াত করেন ব্যাংক কর্মকর্তা গালিব হাসান ভুইয়া। তিনি বলেন, ‘সিলেট শহর থেকে এই অঞ্চলে যাতায়াতের একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ সড়ক এটি। কিছুদিন আগে সড়কটির অবস্থা খুব খারাপ ছিল। এখন কাজ হচ্ছে। কিন্তু, কাজ শেষ হওয়ার আগেই সড়ক ভেঙ্গে যাওয়ায় কাজের মান নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে।’ 

স্থানীয় সিএনজি অটোরিকশা চালক সিরাই মিয়া বলেন, ‘এতদিন আমরা অনেক কষ্ট করে যাত্রীদের নিয়ে গাড়ি চালিয়েছি। রাস্তাটি সংস্কার হওয়ায় আশাবাদী হয়েছিলাম। কিন্তু যেভাবে কাজ হয়েছে, একবছরও ভালো থাকবে বলে মনে হয় না।’

সিলেট-১ আসনের সংসদ সদস্য ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আব্দুল মোমেনের নির্দেশে সম্প্রতি সড়কটি সম্প্রসারণ ও সংস্কারের উদ্যোগ নেওয়া হয়। কাজটি সার্বক্ষণিক তদারকির জন্য এলজিইডি সিলেট সদর উপজেলার পলাশ হোসেন নামের একজন উপসহকারী প্রকৌশলীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়।

হাটখোলা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আজির উদ্দিন বলেন, ‘সদর উপজেলা প্রকৌশলীর সঙ্গে কথা বলেছি। উনি বলেছেন, যেহেতু বর্ষা মৌসুমে কাজ হচ্ছে, এগুলো বারবার মেরামত করতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘সড়কটি সম্প্রসারণ হয়েছে। কিন্তু, মাটি ভরাটের কাজ সঠিকভাবে হয়নি। গার্ডওয়াল না দিয়ে বাঁশের বেড়া দেওয়া হয়েছে। আবার বাঁশের বেড়ার নিচ থেকেই মাটি উত্তোলন করা হয়েছে। এ কারণে বৃষ্টি পড়ার সঙ্গে সঙ্গে মাটি ধসে যাচ্ছে। এমনকি পাকা সড়কও ভেঙ্গে গেছে।’

এ বিষয়ে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তর (এলজিইডি) সিলেট সদর উপজেলা প্রকৌশলী মো. সাইফুল আজম জানান, বিষয়টি জেনে তিনি সরেজমিন গিয়ে দেখেছেন। এ রাস্তার কাজ আরও বাকি রয়েছে। ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে এখনও এ রাস্তার কাজের কোনো বিল দেওয়া হয়নি। রাস্তা ভেঙ্গে যাওয়া এবং কিছু জায়গায় সাইড ধ্বসে যাওয়ার বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে পর্যবেক্ষণ করছেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘সড়কটি যেখানেই ক্ষতিগ্রস্ত হবে তার ক্ষতিপূরণ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বহন করবে।’

জানা গেছে, দুই হাজার ৯২৫ মিটার অর্থাৎ, প্রায় তিন কিলোমিটার সড়ক সম্প্রসারণ ও সংস্কার কাজের জন্য তিন কোটি পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ হয়। ১২ ফুট প্রস্তের এই সড়ক ১৮ ফুটে প্রশস্ত করা হয়। প্রকল্প মেয়াদ চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত। বছরের প্রথম প্রায় চারমাস টিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজে হাত দেয়নি। বৃষ্টি মৌসুম শুরু হওয়ার পর কাজ শুরু করে তারা। কাজে চরম তাড়াহুড়া, নিম্নমানে ইটের খোয়া, বালু ও বিটুমিন ব্যবহার করা হয়েছে বলে অভিযোগ স্থানীয়দের।

আরসি-০১