নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ১৩, ২০২১
০৫:০৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ১৩, ২০২১
০৫:২৫ পূর্বাহ্ন
জৈন্তাুপুরের বাজারে বসেছে কোরবানির পশুর হাট। সেখানে মানা হচ্ছে না কোনো স্বাস্থ্যবিধি। ছবি: সিলেট মিরর
কঠোর বিধিনিষেধের মধ্যেও সিলেট বিভাগজুড়ে পশুর হাট বসানো হচ্ছে। জনসমাগম নিষিদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও বিভিন্ন উপজেলায় প্রশাসনের চোখের সামনেই এসব হাটে বেচাকেনা চলছে। উপচেপড়া ভিড়ে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউনের বিধিনিষেধ একেবারেই উপেক্ষিত।
এ নিয়ে প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ে দুই ধরনের বক্তব্য পাওয়া গেছে। তবে, সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আসলাম উদ্দিন জানান, আগামীকাল ১৩ জুলাই জাতীয় পর্যায়ে এ নিয়ে একটি সভা হবে। সেই সভায় জানা যাবে, হাট বসানোর অনুমতি দেওয়া হবে কি না। তবে, যেহেতু জনসমাগমের অনুমতি নেই তাই এই মুহূর্তে পশুর হাট বসানোর সুযোগ নেই। যারা পশুর হাট বসানোর চেষ্টা করছেন তাদের ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
সিলেট সদর উপজেলার শিবের বাজারে পশুর হাট বসেছে। এ বিষয়ে কিছুই জানে উপজেলা প্রশাসন। জানতে চাইলে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী মহুয়া মমতাজ বলেন, ‘শিবের বাজার ও সাহেব বাজার দুটি স্থায়ী হাট। তবে, লকডাউনের কারণে ১৪ জুলাই পর্যন্ত পশুর হাট বসানোর অনুমতি নেই। শিবের বাজারে হাট বসানোর বিষয়টি আমার জানা নেই। জানলে সঙ্গে সঙ্গে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
সিলেট জেলার প্রায় প্রতিটি উপজেলায় পশুর হাট বসানো হচ্ছে। গত তিনদিনে কোম্পানীগঞ্জের খাগাইল বাজার, টুকেরবাজার, জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত বাজার, কানাইঘাট উপজেলার গাছবাড়ী বাজার, চতুল বাজারসহ বিভিন্ন স্থানে কোরবানীর পশুর হাট বসানোর খবর পাওয়া গেছে।
জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত বাজারে বিশাল পশুর হাট বসানো হলেও প্রশাসনকে কোনো ব্যবস্থা নিতে দেখা যায়নি। তবে, চতুল বাজারে পশুর হাট বসাতে গেলে প্রশাসন কড়াকড়ি আরোপ করে। গতকাল কানাইঘাটের গাছবাড়ী বাজারে নির্ভয়ে পশুর হাট বসানো হয়। চতুল বাজারে প্রশাসনের কড়াকড়ি লক্ষ্য করা যায়।
এদিকে, হবিগঞ্জের নবীগঞ্জের জনতার বাজারে পশুর হাট বসানো হয়। এই বাজারের ইজারা নিয়ে জটিলতা থাকায় উপজেলা প্রশাসন খাস কালেকশন করে এবং এখানে বিশাল পশুর হাট বসানো হয়।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মহি উদ্দিন বলেন, ‘জনতার বাজারসহ উপজেলায় দুটি স্থায়ী বাজার রয়েছে। অস্থায়ী বাজারের সংখ্যা ১০টি। যেহেতু, বিধিনিষেধের প্রজ্ঞাপনে পশুর হাট নিয়ে সুনির্দিষ্টভাবে কিছু বলা হয়নি তাই স্থায়ী বাজারে পশুর হাট বসানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। স্বাস্থ্যবিধি মেনে এখানে পশুর হাট চলছে। উপজেলা প্রশাসনসহ আইনশৃংখলা বাহিনী এই বাজার শক্তভাবে মনিটরিং করছে।’
![]()
সুনামগঞ্জের বিশ্বম্ভরপুর উপজেলায় চলছে জমজমাট পশুর হাট। গত বৃহস্পতিবার উপজেলার সালুকাবাদ ইউনিয়নের বাঘবেড় বাজারে পশুর হাট বসলে ওইদিন বিকেলে গিয়ে বন্ধ করে দেয় প্রশাসন। এ সময় বাজারে ইজারাদারকে খোঁজা হলে তাকে পাওয়া যায়নি।
তবে রবিবার দুপুরে বাঘবেড় বাজারে পশুর হাট বসানো হয়। ছাতক উপজেলার জাউয়া বাজারে গত শনিবার পশুর হাট বসানো হয়। বিশাল পশুর হাটে ব্যাপক মানুষের সমাগম ঘটে। এতে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা একেবারেই ছিল না। এ ব্যাপারে প্রশাসন বলছে, ‘বিভিন্ন বাজারে পশুর হাট বসানোর খবরে অভিযানে গেলে সবাই গরু-ছাগল নিয়ে পালিয়ে যায়। কিন্তু, প্রশাসন চলে গেলে আবার হাট বসে। জাউয়া বাজারেও এমনটা ঘটেছে।’
এ ব্যাপারে সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক মো. জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘বাজার বসানো কোনোভাবেই সম্ভব নয়। কেউ বাজার বসালে আমরা ব্যবস্থা নেব।’
গত কয়েকদিন ধরে সিলেটসহ সারাদেশে করোনা সংক্রমণের রেকর্ড সৃষ্টি হচ্ছে। মৃত্যুর সংখ্যাও বাড়ছে। তবুও স্বাস্থ্যবিধি ও লকডাউনের বিধিনিষেধ মানতে মানুষের মাঝে উদাসীনতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। ১ জুলাই থেকে শুরু হওয়া কঠোর লকডাউন নিশ্চিত করতে প্রশাসনের কর্মকর্তা, পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি যৌথভাবে অভিযান অব্যাহত রেখেছে। এতকিছু সত্ত্বেও শহর থেকে গ্রাম সর্বত্র মানুষের মাঝে অসচেতনতা বিরাজ করছে। কোনো কোনো ক্ষেত্রে প্রশাসনের ছাড় দেওয়ার মনোভাবও দেখা যাচ্ছে।
আরসি-০১