সিলেটের হাসপাতালে বেড়েছে তরুণ ও যুবক রোগীদের চাপ

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুলাই ১২, ২০২১
০৫:০৭ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১২, ২০২১
০৫:০৭ পূর্বাহ্ন



সিলেটের হাসপাতালে বেড়েছে তরুণ ও যুবক রোগীদের চাপ
# অর্ধেকেরই বয়স ৩০ থেকে ৪০

প্রথম দিকে বয়স্ক রোগী বেশি ভর্তি হলেও সিলেটের হাসপাতালে এখন ৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী রোগীদের চাপ বেড়েছে। ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট সব বয়সী মানুষকে সংক্রমিত করতে পারে বলেই এখন বয়স্কদের পাশাপাশি কম বয়সীরাও আক্রান্ত হচ্ছেন বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা।

সিলেটের হাসপাতালগুলোতে খবর নিয়ে দেখা গেছে, আগে করোনা আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হওয়াদের মধ্যে যুবকদের সংখ্যা ছিল অনেক কম। বর্তমানে যুবকদের সংক্রমণ ও হাসপাতালে ভর্তি আশঙ্কাজনকভাবে বেড়েছে। আক্রান্তদের মধ্যে যাদের অ্যাজমা ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা রয়েছে তাদের অবস্থা দ্রুত সঙ্কটাপন্ন হচ্ছে। 

সিলেট করোনা আইসোশেসন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, হাসপাতালটি বর্তমানে রোগীতে পরিপূর্ণ। ভর্তি হওয়াদের মধ্যে প্রায় অর্ধেকই তরুণ বা যুবক। 

হাসপাতালটির ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) নাফি মাহদি সিলেট মিররকে বলেন, ‘বর্তমানে হাসপাতালে ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে তরুণ ও যুবকদের সংখ্যা অনেক বেড়েছে। ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে ৪০ শতাংশেরই বয়স ৩০ থেকে চল্লিশের মধ্যে। তবে এই বয়সের রোগীদের মৃত্যুর হার কম।’

৩০ থেকে ৪০ বছর বয়সী রোগী বেশি ভর্তি হচ্ছেন জানিয়ে মাউন্ট এডোরা হাসপাতালের চিকিৎসক সৌরভ দেব রাজ সিলেট মিররকে বলেন, ‘ভর্তি হওয়াদের মধ্যে যাদের অ্যাজমা ও অন্যান্য শারীরিক সমস্যা রয়েছে তাদের অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হচ্ছে।’

বর্তমানে আক্রান্তদের প্লাজমা দেওয়ারও প্রয়োজন পড়ছে বলে জানা গেছে। সিলেটে করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য প্লাজমা সংগ্রহ করে দেয় ইমার্জেন্সি প্লাজমা কালেকশন টিম। সংগঠনটির প্রধান সমন্বয়ক মুক্তার হোসেন মান্না বলেন, ‘গত বছর তরুণ বা যুবকদের কাউকে প্লাজমা দেওয়ার প্রয়োজন হয়নি। তবে এবার তাদের অনেককেই প্লাজমা দিতে হচ্ছে। যাদের বয়স ৩০ থেকে ৪০ এর মধ্যে। আগামী বুধবার এমনই দুজনকে প্লাজমা দেওয়ার কথা। দুদিন আগে একদিনে তিনজনকে দিতে হয়েছে।’

সিলেটে এ বছরের প্রথম দুই মাস সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে থাকলেও মার্চের শেষ দিকে এসে আবার সংক্রমণ বাড়তে থাকে। তবে এপ্রিলের শেষ দিকে কমতে শুরু করে। গত ঈদ-উল ফিতরের পর আবার বাড়তে থাকে। গত দুই সপ্তাহ ধরে সিলেটসহ সারাদেশে সংক্রমণ বাড়ছে আশঙ্কাজনক হারে। সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় গত ১ জুলাই থেকে সারাদেশে লকডাউন চলছে। তা সত্ত্বেও তরুণ ও যুবকদের বেশিরভাগই স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই বাসার বাইরে চলাফেরা করছেন। সিলেটের প্রধান সড়কগুলোতে তাদের কম দেখা গেলেও অলি-গলিতে নিয়মিত আড্ডা দিচ্ছেন তরুণ-যুবকরা। 

স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বর্তমানে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট বেশি সংক্রমণ ঘটাচ্ছে। ফলে সব বয়সী রোগীরাই আক্রান্ত হচ্ছেন। তরুণ বা যুবকদের বড় একটি অংশ স্বাস্থ্যবিধি মানায় উদাসীন। তাই তারা বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। 

সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘আগে আমাদের দেশে যেসব ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়েছে তাতে ৪০ বা পঞ্চাশোর্ধ মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়েছেন। বর্তমানে রোগীদের মধ্যে ৮০ শতাংশই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এই ভ্যারিয়ন্ট সব বয়সী রোগীকে আক্রান্ত করার ক্ষমতা রাখে। ফলে আগে তরুণ বা যুবকরা আক্রান্ত না হলেও এবার হচ্ছেন। তাদের মধ্যে অনেককেই হাসপাতালে ভর্তি হতে হচ্ছে। তরুণ ও যুবকদের মধ্যে অনেকেরই অবস্থা সঙ্কটাপন্ন হচ্ছে।’

হিমাংশু লাল রায় জানান, বাংলাদেশে এখনও ৪০ বছরের কম বয়সীদের টিকার আওতায় আনা সম্ভব হয়নি। ফলে তাদের সুরক্ষাও কম। তাই এই বয়সীদের অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে। 

আরসি-০৩