ঈদের আগেই আসছে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুলাই ১১, ২০২১
০২:৫৯ অপরাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১১, ২০২১
০৩:০৫ অপরাহ্ন



ঈদের আগেই আসছে মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি
প্রাধান্য পাবেন ছাত্রদলের সাবেক নেতারা

পবিত্র ঈদুল আজহার আগেই আসছে সিলেট মহানগর বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি। আহ্বায়ক ও সদস্যসচিবসহ কমিটিতে ছাত্রদলের সাবেক নেতারাই প্রাধান্য পাবেন বলে বিএনপির একাধিক সূত্রে জানা গেছে।

সূত্রের তথ্যানুযায়ী, দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের পছন্দ অনুযায়ী সাবেক ছাত্রদল নেতাদের প্রাধান্য দিয়ে শীঘ্রই গঠিত হচ্ছে কমিটি। আহ্বায়ক ও সদস্যসচিব ছাড়া কমিটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ সদস্য থাকবেন সাবেক ছাত্রদল নেতারা। 

মহানগর বিএনপির একাধিক নেতার সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, ২০১৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ ভোটে সিলেট মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন হয়। ওই সময় সিলেট মহানগর কমিটির সভাপতি হিসেবে নাসিম হোসাইন, সাধারণ সম্পাদক হিসেবে মো. বদরুজ্জামান সেলিম ও সাংগঠনিক সম্পাদক হিসেবে মিফতাহ সিদ্দিকী নির্বাচিত হন। দুই বছর মেয়াদী এ কমিটির মেয়াদ অনেক আগেই শেষ হয়েছে। এ অবস্থায় তৃণমূলের নেতা-কর্মীরা নতুন কমিটি গঠনের দাবি জানিয়ে আসছেন। 

একই সূত্রের তথ্যানুযায়ী, মহানগর বিএনপির কমিটি গঠনের দিনে জেলা বিএনপির কাউন্সিলও সম্পন্ন হয়। বছর খানেক আগে সে কমিটি ভেঙে দিয়ে সাবেক ছাত্রদল নেতা কামরুল হুদা জায়গীরদারকে আহ্বায়ক করে তিনমাস মেয়াদি কমিটি দেওয়া হয়। তবে এ কমিটি জেলা বিএনপির সম্মেলন করতে পারেনি। এখন বিএনপি নেতা-কর্মীদের চাঙা করতে বিএনপির শীর্ষ নেতৃত্ব সিলেট মহানগরের কমিটি গঠনের উদ্যোগ নেয়। এতে কিছুটা হলেও সরব হয়েছেন বিএনপির নেতা-কর্মীরা। 

সিলেট মহানগর বিএনপির কমিটি গঠন বিষয়ে দলের সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন সিলেট মিররকে বলেন, শীঘ্রই কমিটি গঠন করে দেওয়া হবে। ইতোমধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসন তারেক রহমানের সঙ্গে সিলেট মহানগরের দায়িত্বশীল নেতৃবৃন্দের ভিডিও কনফারেন্সে এ বিষয়ে আলাপ-আলোচনা হয়েছে। তিনি যে গাইড লাইন দিয়েছেন, সে অনুযায়ী আমরা কাজ চালিয়ে যাচ্ছি এবং আশা করি তিনি ঈদের আগেই সিলেট মহানগরের কমিটি অনুমোদন করে দেবেন। 

এক প্রশ্নের জবাবে ডা. শাখাওয়াত হাসান জীবন আরও বলেন, ২১ বা ৩১ সদস্য বিশিষ্ট আহ্বায়ক কমিটি সুনির্দিষ্ট মেয়াদের জন্যে করে দেওয়া হবে। এরপর তারা পর্যায়ক্রমে সিলেট মহানগরের পাড়া-মহল্লার কমিটি করে ৭১ সদস্যবিশিষ্ট ওয়ার্ড কমিটিগুলো সম্মেলনের মাধ্যমে গঠন করবেন। ওয়ার্ড কমিটির নেতৃবৃন্দ প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে সিলেট মহানগর বিএনপির পূর্ণাঙ্গ কমিটি নির্বাচিত করবেন। 

আহ্বায়ক কমিটির ধরন সম্পর্কে সিলেট মিররকে বিএনপির কেন্দ্রীয় এই সাংগঠনিক সম্পাদক আরও বলেন, শীঘ্রই আমরা দুভাবে কমিটি গঠন করে চেয়ারপারসনের কাছে উপস্থাপন করব। একটা হচ্ছে জেলার মতো একজন আহ্বায়ক এবং বাকি সবাই সদস্য থাকবেন। আরেকটা হবে একজন আহ্বায়ক, একজন সদস্যসচিব, কয়েকজন যুগ্ম আহবায়ক এবং বাদবাকি সদস্য। তিনি যেটা অনুমোদন করেন, সেটাই আমরা ঘোষণা করব। তবে গঠিত আহ্বায়ক কমিটির আহ্বায়ক পরবর্তী সম্মেলনে কোনো পদেই প্রার্থী হতে পারবেন না। যদি কমিটিতে সদস্যসচিব থেকে থাকেন, তবে তিনি প্রার্থী হতে পারবেন। 

সিলেট বিভাগের দায়িত্বপ্রাপ্ত বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান ও বেগম খালেদা জিয়ার ব্যক্তিগত মেডিকেল টিমের অন্যতম সদস্য ডা. জাহিদ হোসেন সিলেট মিররকে বলেন, মেয়াদ উত্তীর্ণ সিলেট মহানগরের কমিটি গঠন সাংগঠনিকভাবে করার প্রস্তুতি চলছে। কমিটি কোন ফরম্যাটে গঠিত হবে, তা এখনও বলা যাচ্ছে না। আমরা একাধিকভাবে তা প্রস্তাব আকারে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারপারসনের সামনে উপস্থাপন করব, তিনি সংগঠনের জন্যে যেটা ভালো মনে করবেন সেটাই করবেন। 

বিএনপির সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আহ্বায়ক যিনিই থাকুন না কেন, তিনি যেহেতু সম্মেলনে প্রার্থী হতে পারবেন না, তাই এ পদ নিয়ে কোনো মাথাব্যথা নেই। কমিটি গঠনের আলোচনায় প্রাধান্য পাচ্ছে মূলত সদস্যসচিব পদ নিয়ে। আর এখানেই দ্বিধাবিভক্ত মহানগর বিএনপির নেতৃত্বস্থানীয়রা। এক পক্ষ মনে করেন, গতবারের মতো এবারও সদস্যসচিব পদ থাকুক, আবার অন্য পক্ষ পদটি কমিটিতে থাকতে আপত্তি না করলেও তাদের বক্তব্য হচ্ছে,গত কমিটিতে আহ্বায়ক এবং সদস্যসচিবের যুক্ত স্বাক্ষরে কমিটি অনুমোদন করা হয়েছিল। এই দুজনের সম্মেলনে প্রার্থী হওয়ার ক্ষেত্রে কোনো বাধা ছিল না। এবার যেহেতু আহ্বায়কের উপর বাধা আরোপ করা হয়েছে, তাই নিরপেক্ষতার স্বার্থে সদস্যসচিবের উপরও বাধা থাকুক অথবা তাঁকে যেন স্বাক্ষরকারীর ক্ষমতা না দেওয়া হয়। একই বিষয়ে ভিন্ন মতালম্বীরা বলেন, একাধিক ব্যক্তির স্বাক্ষর থাকার ক্ষমতা না থাকলে জেলার ন্যায় মহানগরেও স্বেচ্ছাচারিতার সুযোগ সৃষ্টি করে দেবে। 

দলের একাধিক নেতা-কর্মী জানান, প্রবাসী কাউকে যেন আহ্বায়ক কমিটিতে রাখা না হয়। এসব বিষয়ে সিলেট মহানগর বিএনপির সভাপতি নাসিম হোসাইন সিলেট মিররকে বলেন, দল পরিচালনার ক্ষেত্রে টিম ওয়ার্কের প্রয়োজন রয়েছে। প্রবাসীদের কমিটিতে রাখা হলে সেটা অনেক ক্ষেত্রে সম্ভব হয় না। সিলেট মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মো. বদরুজ্জামান সেলিম দায়িত্ব নেওয়ার কিছুদিন পরই যুক্তরাজ্যে চলে যান। মাঝখানে একবার দেশে এলেও বর্তমানে দীর্ঘদিন ধরে যুক্তরাজ্যে অবস্থান করছেন। অন্যদিকে প্রথম যুগ্ম সম্পাদক আজমল বক্ত সাদেক যুক্তরাষ্ট্রে, দ্বিতীয় যুগ্ম সম্পাদক শামীম সিদ্দিকী যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থান করছেন। আবার যুক্তরাজ্য থেকে ফিরে এসে তৃতীয় যুগ্ম সম্পাদক ইমদাদ হোসেন চৌধুরী বর্তমানে ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্বে আছেন। এসব কারণে সমস্বয় না থাকায় দলীয় কার্যক্রম পরিচালনা করা কঠিন হয়ে যায়। 

নতুন কমিটির বিষয়ে নাসিম হোসাইন আরও বলেন, ‘কমিটি গঠন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে জানি। তবে কারা আসছেন তা না জানলেও এটুকু বলতে পারি, এবার একজন আহ্বায়ক হবেন এবং তিনি আগামী সম্মেলনে প্রার্থী হতে পারবেন না।’ সদস্যসচিবের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘এটা দলীয় হাই কমান্ডের বিষয়।’

কেন্দ্রীয় এবং স্থানীয় নেতৃবৃন্দের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আহ্বায়ক হিসেবে কয়েকজনের নাম আলোচিত হচ্ছে। এঁদের মধ্যে ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী, আব্দুল কাইয়ূম জালালী পংকী উল্লেখযোগ্য। অপরদিকে যাঁদের নাম সদস্যসচিব হিসেবে আলোচনায় আসছে, তাঁদের মধ্যে মহানগর বিএনপির বর্তমান নির্বাচিত সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতা সিদ্দিকী, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ও সিলেট মহানগর ছাত্রদলের সাবেক সভাপতি জিয়াউল গণি আরেফিন জিল্লুর, মহানগর বিএনপির সহসভাপতি ও সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী উল্লেখযোগ্য। এছাড়া যুগ্ম আহ্বায়ক বা সদস্য পদে যাঁরা আসতে পারেন, তাঁদের মধ্যে নাসিম হোসাইন, ইমদাদ হোসেন চৌধুরী, সালেহ আহমদ খসরু, হুমায়ুন কবীর শাহীন, সিটি কাউন্সিলর ফরহাদ হোসেন চৌধুরী শামীম ও সৈয়দ মঈন উদ্দিন সুহেলসহ ছাত্রদলের একাধিক সাবেক নেতার নাম আলোচনায় রয়েছে। 

সিলেট মহানগর বিএনপির দুইবারের সাবেক আহ্বায়ক ও বিএনপি জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ডা. শাহরিয়ার হোসেন চৌধুরী সিলেট মিররকে বলেন, সিলেট বিএনপিকে শক্তিশালী করার সুযোগ সবসময় ছিল এবং এখনও আছে। যাঁরাই নেতৃত্বে আসুক, তারা যদি ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ না করে, তবে কোনো লাভ হবে না। তাই নেতৃত্ব দেওয়ার জন্যে যাঁরা যোগ্য, যাঁরা দলকে সময় দিতে পারবে, তাঁদেরকে নিয়ে কমিটি করা হলে বর্তমান সংকট কাটানো যাবে। 

সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক আব্দুল কাইয়ুম জালালী পংকী নতুন কমিটি গঠন প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়ে সিলেট মিররকে বলেন, স্থানীয় তৃণমূল নেতা-কর্মীরা কী চায়, তা যদি বিবেচনা না করে কমিটি গঠন হয়, তবে সেটা কাজের কাজ হবে না। স্থানীয় রাজনৈতিক পরিস্থিতিকে আমলে নিয়ে বিগত দিনে যাঁরা রাজপথে আন্দোলন-সংগ্রাম করেছে, তাঁদেরকে মূল্যায়ন করে কমিটি গঠন করা হলে দল অনেকটা শক্তিশালী হবে এবং নেতা-কর্মীদের মধ্যে প্রাণচাঞ্চল্য সৃষ্টি হবে। 

কমিটিতে সদস্যসচিব রাখা না রাখার বিষয়ে তিনি স্পষ্টভাবে কিছু না বললেও আরও বলেন, এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে শুরু থেকেই কোন্দল সৃষ্টি হয়। তাছাড়া আহ্বায়কের সম্মেলন করার অধিকার খর্ব করে তাঁর সঙ্গে যদি স্বাক্ষরকারী সদস্যসচিব দেওয়া হয়, যে পরবর্তী সম্মেলনে অংশগ্রহণ করতে পারবে, তখন স্বেচ্ছাচারিতা হওয়া অমূলক নয়। 

এএন/আরসি-০৩