রেজওয়ান করিম সাব্বির, জৈন্তাপুর
জুলাই ১০, ২০২১
০১:৫৭ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ১০, ২০২১
০৪:০৮ পূর্বাহ্ন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উপহারস্বরূপ পেয়েছি নিজের ঘর। কখনও ভাবতেই পারিনি ঘর পাবো। দীর্ঘ দিন যাযাবরের মতো অন্যের বাড়িতে থেকেছি। জায়গা ক্রয় করা এবং ঘর বানানোর সামর্থ ছিল না আমাদের। প্রধানমন্ত্রীর উপহারে আজ নিজেদের মাথা গোঁজার ঘর হয়েছে। মমতাময়ী মায়ের নিকট থেকে আশ্রয় পেয়ে আমরা খুশি।
কথাগুলো বলছিলেন, জৈন্তাপুর উপজেলার বিভিন্ন গ্রামের ভূমিহীন ও ঘরহীন অসহায় পরিবারের সদস্য মিনারা বেগম, আছিয়া খাতুন, জয়নাল আবেদীন, জহুরা বেগম, হাজেরা বেগম, নুর আক্তার, বেগম বিবি, কমল বেগম, হালিমা বিবি ও জালাল উদ্দিনসহ উপকারভোগীরা।
সরেজমিনে জৈন্তাপুর উপজেলার গোয়াবাড়ী এলাকায় সরকারি খাস ভূমিতে নির্মিত মুজিব নগরের প্রকল্প ঘুরে দেখা যায়, গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইতোমধ্যে ১৮২টি ঘর বিতরণ করেন ভূমিহীন ও ঘরহীন পরিবারের মধ্যে। আর ৯৮টি ঘর নির্মাণ প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। এছাড়া উপজেলার চারিকাটা ইউনিয়নে ১১টি এবং চিকনাগুল ইউনিয়নে ৪৫টি ঘর বিতরণ করা হয়েছে।
গোয়াবাড়ী মুজিব নগর প্রকল্প ঘুরে উপকারভোগীদের সঙ্গে আলাপকালে তারা বলেন, আমরা যে ঘর উপহার পেয়েছি তা তুলনামূলকভাবে মানসম্পন্ন। মুজিব নগরের নির্মিত কিছু সংখ্যক ঘরে বৃষ্টির পানি ঢুকছে। পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ ও চলাচলের জন্য রাস্তা জরুরি। এছাড়া গোয়াবাড়ী ও চারিকাটা ইউনিয়নের নির্মিত ঘরে তেমন কোনো ক্রটি চোখে পড়েনি বলে জানান উপকারভোগীরা।
উপকারভোগী জালাল উদ্দিন বলেন, জৈন্তাপুর ইউনিয়নের বিড়াখাই গ্রামে দীর্ঘ দিন অন্যের বাড়িতে ছিলাম। নানারকম অসুবিধা হয়েছে। পরিবার নিয়ে কোনোরকমে দিন পার করেছি। আমি পঙ্গু হওয়ার পর জৈন্তাপুর স্টেশন বাজারে রাস্তার পাশে বসে চা বিক্রি করে দুই সন্তান ও বউ নিয়ে কোনোমতে দিনযাপন করেছি। জায়গা ক্রয় এবং পাকা ঘর বানানোর সামর্থ ছিল না আমার। স্বপ্ন দেখতাম একটা ঘর তৈরি করব। প্রধানমন্ত্রী, দেশনেত্রী, মমতাময়ী মা জননী শেখ হাসিনা সেই স্বপ্ন পূরণ করেছেন।
উপকারভোগী হালিমা বেগম বলেন, আমি কলেজ পড়ুয়া মেয়ে নিয়ে ফুলবাড়ী গ্রামে স্বামীর বসতভিটায় বসবাস করতাম। কিন্তু স্বামী অভাবের তাড়নায় বাড়িটির একটি অংশ বিক্রয় করে দেন। কিন্তু ভূমি বিক্রয়ের সময় ভূমিক্রেতা পুরো বাড়ি লিখে নেয়। পরবর্তীতে আমাকে জোরপূর্বক বাড়িছাড়া করে। আমি মেয়েকে নিয়ে আশ্রয়হীন হয়ে বাড়িতে থাকতাম। আমার পক্ষে দুইবেলা খাবার যেখানে জোগাড় করা অসম্ভব ছিল, তার মধ্যে বাড়ি তৈরি করার কোনো উপায় ছিল না। প্রধানমন্ত্রীর দেওয়া বাড়ি উপহার পেয়ে আমি খুব খুশি। এখন নিজের একটি বসতবাড়ি পেয়ে কলেজ পড়ুয়া মেয়েকে নিয়ে শান্তিতে বসবাস করতে পারছি। ঘরের মান ভালো, কাজ ভালো হয়েছে।
জৈন্তাপুর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) নুসরাত আজমেরী হক বলেন, আমি যোগদানের পূর্বে জৈন্তাপুরে ১২৬টি পরিবারকে প্রথম দফায় প্রধানমন্ত্রীর উপহারের ঘর দিয়েছেন প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ইমরান আহমদ এমপি। উপজেলায় যোগদানের পর থেকে সহকারী কমিশনার (ভূমি) মো. ফারুক আহমদ ও উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা মো. সালাহ উদ্দিনকে সঙ্গে নিয়ে জমি নির্ধারণসহ নিয়মিত ঘর নির্মাণ প্রক্রিয়া তদারকি করছি। ঘরের মান বজায় রাখতে আমার প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে।
তিনি আরও বলেন, মুজিব নগর প্রকল্পে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের জন্য ড্রেন নির্মাণ ও রাস্তার নির্মাণকাজ প্রক্রিয়াধীন, বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চলমান, খাবার পানি ও গোসলের ব্যবস্থার জন্য একটি পরিত্যক্ত পুকুর সংস্কার ও ঘাট নির্মাণের ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য উর্র্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে।
জৈন্তাপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান কামাল আহমদ বলেন, আমার উপজেলায় প্রধানমন্ত্রীর উপহার পেয়ে উপকারভোগীরা খুশি হয়েছেন। ইতোমধ্যে উপকারভোগীরা ঘরে উঠতে শুরু করেছেন। উপজেলা প্রশাসনের নিয়মিত তদারকির কারণে ঘরের গুণগত মান বজায় রয়েছে।
আরকে/আরআর-০৯