লকডাউনে সক্রিয় ওসমানীনগরের প্রশাসন

উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর


জুলাই ১০, ২০২১
১২:১৯ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ১০, ২০২১
১২:১৯ পূর্বাহ্ন



লকডাউনে সক্রিয় ওসমানীনগরের প্রশাসন
সহায়তা পেল ৫ শতাধিক পরিবার

গত ১ জুলাই থেকে এক সপ্তাহের কঠিন লকডাউনে সক্রিয় ছিল সিলেটের ওসমানীনগরের প্রশাসন। প্রশাসনের তৎপরতায় কার্যত অবরুদ্ধ ছিল ওসমানীনগরের সবগুলো প্রবেশপথ। এদিকে, বৃষ্টি ও রোদের মধ্যে পরিশ্রম করতে গিয়ে এলজিইডি'র ওসমানীনগর উপজেলা প্রকৌশলী এস এম আব্দুল্লাহ আল-মামুন, ওসমানীনগর থানার ওসি শ্যামল বণিকসহ ৭ পুলিশ সদস্য করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। 

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয় ও পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, লকাউনের প্রথম দিন ভোর থেকেই সিলেটে প্রবেশ ও বহির্গমন ঠেকাতে শেরপুর টোল প্লাজা এলাকায় নিয়মিত চেকিং, উপজেলার গুরুত্বপূর্ণ সড়কের মোড়ে মোড়ে পুলিশের চেক পোস্টসহ ভ্রাম্যমাণ আদালতের তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো। পাড়া ও গলির ভেতরে দুই-একটি দোকান ও নিত্যপ্রয়োজনীয় কাঁচাবাজার এবং ওষুধের দোকান ব্যতিত বন্ধ ছিল উপজেলার সব ছোট-বড় ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান। ভেঙে দেওয়া হয়েছে একাধিক বিয়ে ও সামাজিক অনুষ্ঠান। 

প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত হাট-বাজারসহ উপজেলার এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্ত চষে বেড়িয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার, সহকারী কমিশনার (ভূমি) আফসানা তাসলিম, ওসমানীনগর এবং জেলা থেকে প্রেরিত সহকারী কমিশনারবৃন্দ, থানার ওসি শ্যামল বণিকসহ একদল পুলিশ ও সেনাবাহিনীর ১৭ পদাতিক ডিভিশনের সদস্যরা। কঠোর লকডাউন বাস্তবায়নে সরকারি স্বাস্থ্যবিধি মেনে মানুষের চলাচলসহ অন্যান্য বিষয়ে কঠোর বিধিনিষেধ নিশ্চিত করতে উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালায়। এ সময় হাট-বাজারসহ লকডাউনের আওতাভুক্ত ব্যবসা-প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করে বন্ধ করে দেওয়া হয়। ১ জুলাই থেকে ৮ জুলাই পর্যন্ত লকডাউনে স্বাস্থ্যবিধি লঙ্ঘনের অপরাধে মোট ৫৬টি মামলায় জরিমানা করা হয়েছে ৫৯ হাজার ৫০০ টাকা। লকডাউনে মাঠে থাকার পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষের মধ্যে আর্থিক ও খাদ্য সহায়তা প্রদান করে উপজেলা প্রশাসন। 

উপজেলা প্রকল্প কর্মকর্তা মিলন কান্তি রায় বলেন, ৩৩৩ নম্বরে ফোন করে পারিবারিক অসচ্ছলতার কথা প্রকাশ করায় গত এক সপ্তাহে উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ১৬৭টি পরিবারকে চাল, ডাল, আলু, পেঁয়াজ, তেল, লবণ, মরিচ, হলুদ, ছোলাসহ বিভিন্ন ধরনের খাদ্য সহায়তা ও উপজেলার আড়াইশ শিশুর মধ্যে হরলিক্স, বিস্কিট, গুড়ো দুধ ও চিনি বিতরণ করা হয়েছে। পাশাপাশি করোনায় দোকান বন্ধ থাকায় আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়া ১০০ সেলুন ব্যবসায়ীর মধ্যে নগদ ১ লাখ টাকা বিতরণ করা হয়েছে। 

এদিকে, উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) থেকে অসহায় দুস্থদের মধ্যে সরকারি ত্রাণসামগ্রী বিতরণ শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার আনুষ্ঠানিকভাবে উপজেলার ৮টি ইউনিয়নের ১৬০টি পরিবারের মধ্যে চাল, ডাল, পেঁয়াজ, রসুন, তেল, লবণ, চিনি, সেমাই, হলুদ, মরিচ, ছোলা ও সাবান বিতরণ করা হয়। ধারাবাহিকভাবে ৮টি ইউনিয়নের সহস্রাধিক পরিবারের মধ্যে এ ধরনের শুকনো খাবার প্রদান করা হবে বলে জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, লকডাউনের বিধিনিষেধ কার্যকর করতে উপজেলা প্রশাসন ও পুলিশ প্রশাসন কঠোর ভূমিকা পালন করেছে। স্বাস্থ্যবিধি অমান্য করে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান খোলা রাখা, মাস্ক ব্যবহার না করা, অযথা ঘোরাঘুরিসহ বিভিন্ন অপরাধে একাধিক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করে আর্থিক জরিমানা আদায় করা হয়েছে। পাশাপাশি উপজেলা প্রশাসনের উদ্যোগে অসহায় মানুষদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে খাদ্য সহায়তা প্রদান অব্যাহত রয়েছে।


ইউডি/আরআর-০৫