নাবিল হোসেন
জুলাই ০৮, ২০২১
০৪:০৫ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ০৮, ২০২১
০৪:১২ পূর্বাহ্ন
সিলেটে করোনা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রতিদিনই হচ্ছে আক্রান্ত ও মৃত্যুর রেকর্ড। রোগীর চাপে সব হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। ঠাঁই মিলছে না সাধারণ শয্যাতেও।
সিলেটের হাসপাতালগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে আইসিইউ শয্যা খালি নেই। কেবলমাত্র কেউ মারা গেলে বা সুস্থ হলে শয্যা খালি হচ্ছে। সঙ্গে সঙ্গেই আবার সেই শয্যা পূরণ হয়ে যাচ্ছে। হাসপাতালগুলোতে প্রতিদিন রোগীর চাপ বাড়ছে। ফলে এখন কোভিড রোগীদের জন্য সাধারণ শয্যা পাওয়াও কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। শয্যা না পেয়ে অনেকে হাসপাতালগুলোর বারান্দায় অপেক্ষা করছেন। আবার কেউ কেউ এক হাসপাতাল থেকে অন্য হাসপাতালে ছুটছেন। সিলেট নগরের সরকারি-বেরসরকারি হাসপাতালে সিলেট জেলা ছাড়াও সুনামগঞ্জ, হবিগঞ্জ ও মৌলভীবাজার থেকে আসা রোগীরা ভর্তি হচ্ছেন। তাই হাসপাতালগুলো রোগীর চাপ সামলে উঠতে পারছে না।
সিলেটে করোনা আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের শয্যা সংখ্যা ১০০টি। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রোগী ভর্তি ছিলেন ১০১ জন। করোনার সংক্রমণ শুরুর পর রোগীর এমন চাপ দেখেননি বলে জানিয়েছেন হাসপাতাল সংশ্লিষ্টরা।
নগরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোর মধ্যে উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউসহ ৭২টি শয্যা রয়েছে। গত কয়েকদিন ধরে সিটগুলো রোগীতে পরিপূর্ণ।
নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিত্রও একই। হাসপাতালটির ৬০টি আইসিইউ শয্যা কয়েকদিন ধরে পরিপূর্ণ। মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে করোনার রোগীদের জন্য আইসিইউসহ ৩২টি শয্যা আছে। সেগুলোও পরিপূর্ণ গত কয়েকদিন ধরে।
খালি আছে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ১৯০টি শয্যার মধ্যে মাত্র ২০টি শয্যা। এছাড়া ৩১ শয্যার খাদিমপাড়া হাসপাতালে রোগী ভর্তি আছেন ১৭ জন। দক্ষিণ সুরমা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ৩১টি শয্যার মধ্যে খালি আছে মাত্র ১৩টি। তবে এই দুই হাসপাতালে সেন্ট্রাল অক্সিজেন সাপোর্ট নেই। সিলিন্ডার দিয়ে রোগীদের অক্সিজেন দিতে হয়। তাই কোনো রোগীর বেশি পরিমানে অক্সিজেন লাগলে হাসপাতালগুলো শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে রোগীকে স্থানান্তর করে দেয়।
জানা গেছে, সিলেট বিভাগের করোনা আক্রান্তদের মধ্যে যাদের হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে তাদের বেশিরভাগই সিলেট নগরের হাসপাতালগুলোতে ভর্তি হচ্ছেন। তাই হাসপাতালের প্রায় সব সিট পরিপূর্ণ হয়ে গেছে। মঙ্গলবার পর্যন্ত করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ৪৪৯ জন রোগী বিভাগের বিভিন্ন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। এর মধ্যে সিলেটের বিভিন্ন হাসপাতালে ৪২৬ জন, সুনামগঞ্জের হাসপাতালে সাতজন, হবিগঞ্জের হাসপাতালে সাতজন ও মৌলভীবাজারের হাসপাতালে ১৯ জন।
সিলেটের হাসপাতালগুলো ঘুরে দেখা যায়, কিছুক্ষণ পর পর ভর্তি হতে আসছেন রোগীরা। কেউ শয্যা খালি না পেয়ে সঙ্গে সঙ্গেই ছুটছেন অন্য হাসপাতালে। কেউ আবার হাসপাতালে দাঁড়িয়ে ফোন দিচ্ছেন তদবিরের জন্য। তাতেও কাজ না হলে খোঁজ নিচ্ছেন অন্য হাসপাতালের শয্যার। শয্যা খালি থাকার খবর মিললেই ছুটছেন সেদিকে।
সিলেট করোনা আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের ভারপ্রাপ্ত আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. সৈয়দ নাফি মাহদি সিলেট মিররকে বলেন, ‘রোগীর চাপ এত বেশি যে, বলে বুঝানো যাবে না। করোনা শুরুর পর এমন অবস্থা দেখিনি। এর আগে কখনও আমাদের সব শয্যা পরিপূর্ণ হয়নি। এখন আর কোনো রোগী ভর্তি করা সম্ভব হচ্ছে না। এখন যারা আসছেন তাদেরকে ওসমানী হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে।’
উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফেরদৌস হোসেন সিলেট মিররকে বলেন, ‘হাসপাতালের আইসিইউ, সাধারণ বেড সব পরিপূর্ণ। এখন আর নতুন করে রোগী ভর্তির সুযোগ নেই। তবুও অনেক রোগীর স্বজন হাসপাতালের সামনে বসে থাকেন। আমাদের কিছু করার থাকে না। তবু দুই-একজনকে বিশেষভাবে ভর্তি করার ব্যবস্থা করা হয়।’
হাসপাতালে শয্যা বাড়ানোরও সুযোগ নেই জানিয়ে ফেরদৌস হোসেন বলেন, ‘কারণ অক্সিজেনের যে লাইন আছে তাতে এর বেশি চাপ দেওয়া সম্ভব নয়।’
মানুষ সচেতন না হলে কিছুতেই কিছু হবে না জানিয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘আমরা বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছি। তাই সাধারণ মানুষকে সচেতন হতে হবে। মাস্ক ছাড়া কেউ বাসার বাইরে যাতে বের হতে না পারে সেই ব্যবস্থা করতে হবে। তা না হলে শয্যা বাড়িয়েও রোগীদের জায়গা দেওয়া সম্ভব হবে না।’
সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত সিলেট মিররকে বলেন, ‘হাসপাতালগুলোতে রোগীর চাপের বিষয়টি আমরাও দেখছি। তাই উপজেলাগুলোতে আমরা বলে দিয়েছি খুব সঙ্কটাপন্ন রোগী ছাড়া কাউকে যাতে সিলেটে পাঠানো না হয়। উপজেলা হাসপাতালগুলোতে রোগী ভর্তি করতে আমরা নির্দেশনা দিয়েছি। তাতে হয়ত সিলেটে কিছুটা চাপ কমবে।’
সিলেটের আইসিইউ সঙ্কটের কথা ঢাকার উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়েছে জানিয়ে জন্মেজয় দত্ত বলেন, ‘ওসমানী হাসপাতালে আরও ৮টি আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর চেষ্টা চলছে।’
আরসি-০১