নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ০৭, ২০২১
০৫:২১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ০৭, ২০২১
০৫:২১ পূর্বাহ্ন
সারাদেশে এক সপ্তাহের কঠোর বিধিনিষেধের আজ সপ্তম দিন। কঠোর বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে প্রথম থেকেই প্রশাসনের কঠোরতা লক্ষ্য করা গেছে। তবে, দিন যত গড়াচ্ছে মানুষের বাইরে বের হওয়ার প্রবণতা বাড়ছে।
মঙ্গলবারের স্বাস্থ্য বুলেটিন অনুযায়ী, সারাদেশে ১১ হাজারের বেশি করোনা পজিটিভ রোগী শনাক্ত হয়েছে। সিলেটে অতীতের সব রেকর্ড ভেঙ্গে শনাক্ত হয়েছে। তা সত্ত্বেও প্রয়োজন-অপ্রয়োজনে বাইরে বের হওয়া মানুষের স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও রয়েছে অনীহা।
শহর ও গ্রামের বাজারগুলোর চিত্র একেবারের নাজুক। পুলিশ-সেনাবাহিনী বা ভ্রাম্যমাণ আদালতের আগমণ টের পেলেই দৌঁড়ে পালায় লোকজন। দোকানপাঠ খুলে রাখা ব্যবসায়ীদের সাঁটার লাগানোর শব্দ পাওয়া যায়। আবার প্রশাসন চলে গেলে বাজারে ভিড় জমে সাধারণ মানুষের। দেখে মনে স্বাভাবিক বাজারঘাট।
এদিকে, ষষ্ঠ দিনে সিলেট জেলায় ৩৫ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের নেতৃত্বে মহানগর ও জেলার সবকটি উপজেলায় ভ্রাম্যমাণ আদালত অভিযান চালিয়েছে। পাশাপাশি পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি’র তৎপরতা ছিল চোখে পড়ার মতো।
বিকেল ৫টায় সিলেটের উপকণ্ঠ ইসলামপুর মেজরটিলায় কয়েক শ মানুষের উপস্থিতি চোখে পড়ে। তখন মহানগর পুলিশের একটি দল সেখানে গেলে ব্যবসায়ী ও সাধারণ ক্রেতারা দৌঁড়ে গলিতে এবং আবাসিক এলাকায় প্রবেশ করে। কিছুক্ষণের মধ্যে তারা চলে গেলে আবারও ভিড় বাড়ে। সন্ধ্যা ৬টায় সেনাবাহিনীর তিনটি গাড়ি সেখানে হাজির হয়। তখনই একই রকম চিত্র চোখে পড়ে।
বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, প্রথম দুই-তিন দিন বাজার একেবারেই ফাঁকা ছিল। পঞ্চম দিন থেকে প্রয়োজন ছাড়াও মানুষ বাজারে ভিড় করছেন। আরিফুর রহমান নামের এক ব্যক্তি জানান, কয়েকদিন ধরে ঘরে বসে থাকতে থাকতে আর ভালো লাগছে না। তাই, তিনি পরিস্থিতি দেখতে বাজারে বের হয়েছেন।
নগর ও আশপাশ এলাকা ঘুরে আরও দেখা গেছে, নিত্যপণ্যের দোকানপাট খোলা থাকায় বাজার খরচের অজুহাতে অনেকে বাইরে বের হয়েছেন। আবার কেউ কেউ চিকিৎসাপত্র হাতে নিয়ে ঔষধ বা চিকিৎসকের কাছে যাওয়ার অজুহাত দেখিয়েছেন। রিকশা, প্রাইভেটকার ছাড়াও মোটরসাইকেল এবং সিএনজি-অটোরিকশায় অনেকে চলাচল করেছেন।
তবে, প্রশাসনের কঠোরতায় মঙ্গলবার নগরে যানবাহনের সংখ্যা কিছুটা কমেছে। এ অবস্থায় জরুরি প্রয়োজনে বের হয়ে বহু মানুষ যানবাহন না পেয়ে পায়ে হেটে গন্তব্যে ছুটতেও দেখা গেছে। দুপুরে দেখা যায়, টিলাগড় থেকে তামাবিল সড়ক হয়ে হেটে ছুটেছে ১৫ থেকে ২০ জন লোক। তাদের একজন সায়েম সুলতানের কাছে জানতে চাইলে বলেন, ‘জরুরি প্রয়োজনে হরিপুর থেকে শহরে এসেছিলাম। সকালে কয়েকটি গাড়ি বদল করে পৌঁছাতে পারলেও ফেরার পথে যানবাহন পাচ্ছি না। তাই, হেটে রাস্তা আগাইচ্ছি।’ অন্যরাও নিজের মতো করে হাটছেন।
নগরের বন্দরবাজার, জিন্দাবাজার, জিতু মিয়ার পয়েন্ট, লামাবাজার, রিকাবীবাজার, মেডিকেল রোড, মদিনা মার্কেট, সুবিদবাজার, আম্বরখানা, চৌহাট্টা, জিন্দাবাজার, শিবগঞ্জ, টিলাগড়, হুমায়ুন চত্বর, কদমতলী, উপশহর, দক্ষিণ সুরমা, মেজরটিলা এলাকা ঘুরে লকডাউনের নানা চিত্র পাওয়া গেছে।
সন্ধ্যার ঠিক আগে কাজ থেকে ফেরা অন্তত ১২ জন ব্যক্তি ফেঞ্চুগঞ্জ সড়কের দিকে হাটতে শুরু করেন। শিববাড়ি এলাকায় পৌঁছার পর তারা একটি বড় ট্রাকে চড়েন এবং ফেঞ্চুগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হন।
বিকেলে নগরের টিলাগড়ে চেকপোস্ট বসায় মহানগর পুলিশের একাধিক টিম। এ সময় বেশকিছু গাড়ি তল্লাশি করে অপ্রয়োজনে বের হওয়া এবং কাগজপত্রবিহীন যানবাহনের বিরুদ্ধে জরিমানা করা হয়। আটক করা হয় বেশ কিছু গাড়ি। তাদের কারও কারও হাতে নিত্যপণ্যের ভারি ব্যাগ চোখে পড়ে।
যানবাহন ছাড়াও নগরের বাজারগুলোতে মানুষের ভিড় লক্ষ্য করা গেছে। মদীনা মার্কেট এলাকায় ভ্রাম্যমাণ সবজি ও ফলের ব্যবসায়ীদের সংখ্যা ছিল বেশি। এ সময় নিত্যপণ্যের বাজার করতে আসা কয়েকশ ক্রেতার উপস্থিতি লক্ষ্য করা যায়। বাজারে স্বাস্থ্যবিধি মানার প্রবণতা প্রায় নেই বললেই চলে।
একইচিত্র নগরের অন্যান্য বাজারগুলোরও। নগরের শিবগঞ্জ, টিলাগড়, আম্বরখানা, মেজরটিলা, বালুচর, ঈদগাহ, তালতলা, রিকাবীবাজার, মেডিকেলসহ বিভিন্ন এলাকায় এমন চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।
লকডাউনে মঙ্গলবার পর্যন্ত নগরের প্রধান সড়কের পাশে থাকা শপিং মল ও দোকানপাট ছিল বন্ধ। কেবল টেকওয়ে হিসেবে রেস্টুরেন্ট খোলা রাখা হয়েছে।
আরসি-০৩