সিলেটে আইসিইউ শয্যার জন্য হাহাকার

নাবিল হোসেন


জুলাই ০৭, ২০২১
০৪:০০ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুলাই ০৭, ২০২১
০৪:১৪ পূর্বাহ্ন



সিলেটে আইসিইউ শয্যার জন্য হাহাকার
# সিলেটে সরকারি-বেসরকারি কোনো হাসপাতালেই আইসিইউ শয্যা খালি নেই

‘তিনদিন ধরে সিলেটের সব সরকারি-বেসরকারি হাসপাতাল ঘুরে, বিভিন্নভাবে তদবির করেও নানির জন্য আইসিইউ বেড পাচ্ছি না। তাই গুরুতর অসুস্থ নানিকে নিয়ে খুব সমস্যায় আছি।’ 

সকালে সিলেটের বেসরকারি হাসপাতাল উইমেন্স মেডিকেল কলেজের করোনা ইউনিটের সামনে দাঁড়িয়ে কথাগুলো বলছিলেন তানভীর আহমদ। তিনি জানান, তার নানির ফুসফুসের ৫০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। চিকিৎসকরা বলছেন সাধারণ শয্যায় রেখে চিকিৎসা সম্ভব হচ্ছে না। আইসিইউ শয্যা প্রয়োজন হলেও তিনি কোথাও আইসিইউ শয্যা পাচ্ছেন না। 

সিলেটের হাসপাতালগুলোতে খবর নিয়ে দেখা গেছে, এক সপ্তাহ ধরে আইসিইউ ইউনিট রোগীতে পরিপূর্ণ। ফলে কেউ মারা গেলে বা সুস্থ হলেই মিলছে আইসিইউ শয্যা। চিকিৎসকরা বলছেন, রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। সিলেট এখন চরম বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে করছেন স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। 

গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত নগরের হাসপাতালগুলোর করোনা ইউনিট ঘুরে দেখা যায় রোগীর স্বজনরা একটি আইসিইউ শয্যার জন্য এদিক-ওদিক ছুটে বেড়াচ্ছেন। কিন্তু সবার মুখে একটি কথা, আইসিইউ খালি নেই। 

জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্র জানায়, সিলেট জেলায় সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতাল মিলিয়ে আইসিইউ শয্যা রয়েছে ৫৪টি। এর মধ্যে সরকারিভাবে সিলেট শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে রয়েছে ১৬টি এবং ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আটটি। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালের মধ্যে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ, উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসাপাতাল ও মাউন্ট এডোরা হাসপাতালে আরও ৩০টি আইসিইউ রয়েছে। 

সিলেট করোনা আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, হাসপাতালের করোনা ওয়ার্ডে ভর্তি অনেক রোগীর শারীরিক অবস্থা খারাপ। তাদের স্বজনরা আইসিইউর জন্য দীর্ঘ প্রতীক্ষায় আছেন। কেউ মারা গেলে বা সুস্থ হলেই মিলছে হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা। অনেক রোগীর স্বজন আইসিইউর দরজা পাহারা দিচ্ছেন যাতে কেউ মারা গেলেই তার রোগীকে দ্রুত আইসিইউতে নেওয়া যায়। এছাড়া বাইরে থেকেও প্রতিদিন আইসিইউ শয্যার জন্য তদবির আসছে। 

শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসা কর্মকর্তা (আরএমও) ডা. মো. মিজানুর রহমান বলেন, ‘গত দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালের আইসিইউ ইউনিট পরিপূর্ণ। হাসপাতালে ১৬টি আইসিইউ বেড থাকলেও দুটি রয়েছে ডায়ালাইসিস বেড। ফলে আইসিইউ বেড মূলত ১৪টি।’ আইসিইউর জন্য অনেক তদবির এলেও শয্যা খালি না থাকায় কিছুই করা যায় না বলে জানান তিনি। 

তিনি বলেন, ‘বর্তমানে ভর্তি রোগীদের বেশিরভাগের ১৫ থেকে ২০ লিটার করে অক্সিজেন লাগছে। এই পরিমান অক্সিজেন যাদের লাগে তাদের আইসিইউতে নেওয়া প্রয়োজন।’ 

শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালের পর সবচেয়ে বেশি আইসিইউ শয্যা রয়েছে নর্থ ইস্ট মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। এই হাসপাতালের ১২টি আইসিইউ শয্যা গত এক সপ্তাহ ধরে পরিপূর্ণ। হাসপাতালটির করোনা ইউনিটের ইনচার্জ ডা. নাজমুল হক সিলেট মিররকে বলেন, ‘এক সপ্তাহ ধরে আমাদের আইসিইউ ইউনিট পরিপূর্ণ। প্রথমে আটটি আইসিইউ থাকলেও রোগীর চাপ বাড়ায় বর্তমানে হাসপাতালের আইসিইউ সংখ্যা ১২টি।’ 

সিলেট উইমেন্স মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. ফেরদৌস হোসেন সিলেট মিররকে বলেন, ‘গত এক-দুই সপ্তাহ ধরে হাসপাতালে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। হাসপাতালে করোনা রোগীদের জন্য নয়টি আইসিইউ শয্যা আছে। কয়েকদিন ধরেই সেগুলো পরিপূর্ণ।’

রোগীদের চাপে হাসপাতালে শয্যা সংকট দেখা দেওয়ায়, সিলেট চরম বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছে বলে মনে করছেন সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায়। তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘ওসমানীতে থাকা সব আইসিইউ সিট পরিপূর্ণ। শামসুদ্দিন হাসপাতালেরও একই অবস্থা। তাই সাধারণ মানুষকে অবশ্যই স্বাস্থ্যবিধি মানাতে হবে। কারণ আমরা বিপর্যয়ের মুখে দাঁড়িয়ে আছি। মানুষ সচেতন না হলে কিছুতেই কিছু হবে না।’ 

আইসিইউ সঙ্কট দূর করতে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে কি না জানতে চাইলে সিলেটের ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. জন্মেজয় দত্ত সিলেট মিররকে বলেন, ‘জরুরি ভিত্তিতে ওসমানী হাসপাতালে আরও আটটি আইসিইউ শয্যা বাড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে। তবে এর জন্য অনুমোদন লাগবে। এছাড়া বেসরকারি হাসপাতালগুলোকেও করোনা ডেডিকেটেড আইসিইউ শয্যা বাড়াতে অনুরোধ করা হয়েছে।’ 

তিনি আরও বলেন, ‘রোগী কমাতে না পারলে সারা বাংলাদেশকে আইসিইউ বানালেও লাভ হবে না। তাই চলতি লকডাউন যেকোনো মূল্যে শতভাগ কার্যকর করতে হবে।’ 

আরসি-০১