নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ০৫, ২০২১
০৬:০৪ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ০৫, ২০২১
০৬:০৪ পূর্বাহ্ন
ছুটি কাটাতে বাংলাদেশে আসা প্রবাসী কর্মীরা কর্মস্থলে ফিরতে গিয়ে পদে পদে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বিদেশে যাওয়ার টিকিট পাওয়ার জন্য রাত জেগে বসে থাকতে হয়, টিকার দাবিতে বৃষ্টির মধ্যে দাঁড়িয়ে মিছিল করতে হয়।
প্রবাসীদের জন্য করোনা ভ্যাকসিনের রেজিস্ট্রেশন প্রক্রিয়ায় পেমেন্টের নামে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছে মুনাফালোভীরা। নানা যুক্তি দেখিয়ে ২২০ টাকার বিকাশ পেমেন্টের বিপরীতে অতিরিক্ত ৩শ থেকে ৭শ টাকা পর্যন্ত আদায় করছে তারা।
গত শনিবার নগরের উপশহরে অবস্থিত জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস এলাকায় গিয়ে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়। জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা প্রবাসীরা সকাল ৮টা থেকে উপশহরের সি-ব্লকের ৪১ নম্বর সড়ক এলাকায় ভিড় করেন। পাঁচ থেকে সাত শতাধিক প্রবাসীর উপস্থিতিতে সেখানে স্বাস্থ্যবিধি একেবারেই উপেক্ষিত ছিল।
জানা যায়, করোনার ভ্যাকসিন ছাড়া প্রবাসে কর্মক্ষেত্রে ফিরে গেলে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে তাদেরকে ৭০ হাজার থেকে এক লাখ টাকা পর্যন্ত খরচ করতে হয়। তাই, সরকার তাদের জন্য বিনামূল্যে ভ্যাকসিনের ব্যবস্থা করছে। এই সুযোগ পেয়ে প্রবাসীরা রেজিস্ট্রেশনের জন্য ছুটে এসেছেন।
প্রবাসীরা জানান, রেজিস্ট্রেশনের সুযোগ পেয়ে জেলা কর্মসংস্থান অফিসে এসে বিপাকে পড়েছেন অনেকে। কঠোর লকডাউনের মধ্যেও দূরদূরান্ত থেকে এসে অনেকেই বিকাশে টাকা জমা দিতে না পেরে ফেরত যাচ্ছেন। অনেকে বাধ্য হয়ে দালালদের হাতে কাগজপত্র ও টাকা তুলে দিচ্ছেন। এই সুযোগ নিচ্ছে মুনাফালোভী কিছু দালাল ও স্থানীয় ব্যবসায়ীরা।
নাজমুল হাসান নামের এক যুবক আসেন জেলার জৈন্তাপুর উপজেলার দরবস্ত এলাকা থেকে। তিনি জানান, রেজিস্ট্রেশনের জন্য মোবাইল অ্যাপে টাকা জমা দিয়ে প্রয়োজনীয় কাগজপত্রসহ জমা দিতে হয়। কিন্তু, মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা জমা দিতে না পড়ায় বিপাকে পড়তে হয়।
তিনি বলেন, ‘এক পর্যায়ে এখানে এক ব্যক্তি আমাকে বলেন, কাগজপত্রসহ টাকা জমা দিয়ে যান। আমরা রাতে পেমেন্ট দিয়ে আপনাকে জানিয়ে দেব। আর আপনাকে আসতে হবে না। এ জন্য মূল ফি’র বাইরে অতিরিক্ত আরও পাঁচশ টাকা দিতে হয়েছে।’
দেলওয়ার নামের এক যুবক আসেন জকিগঞ্জ থেকে। দুবাই প্রবাসী এই যুবক জানান, স্থানীয় একটি ফটোকপির দোকানে অনেকেই টাকা জমা দিচ্ছেন। সেখানে গেলে তাকে বলা হয়, ‘এখন টাকা জমা হবে না। আপনাদের কষ্টের কাজ আমরা করে দেব। আবার এসে জমা দিতে হবে না। এ জন্য অতিরিক্ত ৭০০ টাকা দিতে হবে।’ পরে উপায় না পেয়ে তিনি টাকা দিতে বাধ্য হন।
এরকম কয়েকশ মানুষের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা আদায় করা হয়েছে। প্রবাসীদের এসবে বাধ্য করতে অনেককে কর্মসংস্থান অফিসের সামনে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা যায়। এএসজে ট্রাভেলস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের লোকও সেখানে প্রবাসীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে দেখা গেছে। আরও নানা নামে বেশ কয়েকজন রেজিস্ট্রেশন প্রত্যাশীদের কাগজপত্র ও টাকা নিয়েছেন। এছাড়া স্থানীয় কয়েকটি ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানে প্রবাসীদের কাগজপত্র রাখা হয়েছে।
তবে, জেলা কর্মসংস্থান অফিসের কর্মকর্তারা বলছেন, ‘বিকাশ পেমেন্ট যার মাধ্যমেই দেওয়া হোক, প্রত্যেকে সরাসরি কাগজপত্র জমা দিতে হবে। এতে অন্য কেউ কাগজ দেওয়া বা নেওয়ার সুযোগ নেই।’
তবে, সচেতন অনেক প্রবাসী নিজে নিজে পেমেন্ট দিয়েছেন। এতে ভোগান্তি ও খরচ উভয় কমেছে। এমন একজন কানাইঘাটের জাহেদ আহমদ। সৌদি প্রবাসী এই যুবক গতকাল রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করেছেন।
জেলা কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অফিস সিলেটের উপসহকারী পরিচালক মো. মাহফুজ উল-আদিব বলেন, ‘আমরা প্রবাসীদের দ্রুত রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন করে দেওয়ার সর্বোচ্চ চেষ্টা করছি। গতকাল ৩৬৪ জনের রেজিস্ট্রেশন সম্পন্ন হয়েছে। এমআরপি পাসপোর্টধারী প্রবাসীদের টাকা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে পেমেন্ট দেওয়া যাচ্ছে। আর ই-পাসপোর্টধারীদের টাকা সরাসরি নেওয়া হচ্ছে।’
বাইরে যারা অতিরিক্ত টাকা নিচ্ছেন তাদের বিষয়ে প্রবাসীদের সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন এই কর্মকর্তা। তিনি বলেন, ‘আমরা প্রবাসীদের বলছি, একটু ধৈর্য ধরে আগে বিকাশ পেমেন্ট দিয়ে সুশৃংখলভাবে এসে জমা দিন। তারা বিষয়টি না বুঝে অন্যের কাছে দিয়ে যাচ্ছেন। এতে তাদের কতটা লাভ হবে জানি না। কারণ, তারা নিজেরাই আবার এসে অফিসে কাগজ জমা দেবেন।’ তবে, যে কেউ চাইলে ‘আমি প্রবাসী’ অ্যাপের মাধ্যমে রেজিস্ট্রেশন করতে পারবেন এবং যাদের পাসপোর্টে শুধু ভিসা লাগানো আছে তাদেরকেই রেজিস্ট্রেশনের আওতায় নিয়ে আসা হচ্ছে বলে জানান তিনি।
এসএইচ/আরসি-০১