নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ০৩, ২০২১
০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ০৩, ২০২১
০৪:৪৬ পূর্বাহ্ন
সিলেটে বেড়েই চলেছে করোনার সংক্রমণ। জুন মাসে বিভাগে ৩ হাজার ২৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। আর মৃত্যু হয়েছে ৬৯ জনের। যা চলতি বছর এক মাসের হিসেবে সর্বোচ্চ। জুনের প্রথম ও দ্বিতীয় দশদিনের চেয়ে শেষ দশদিনে শনাক্ত বেড়েছে দ্বিগুণের বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, জুন মাসে সিলেট বিভাগে ৩ হাজার ২৮৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। ১৬ হাজার ৬৪৯টি নমুনা পরীক্ষায় তাদের করোনা শনাক্ত হয়। যা চলতি বছরের সর্বোচ্চ। এর আগে গত এপ্রিলে শনাক্ত হয় ৩ হাজার ২০১ জনের। জুনে পরীক্ষা বিবেচনায় শনাক্তের হার ছিল ১৯ দশমিক ৭৩। তবে গত দশদিনে এই হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশে। শনাক্তদের মধ্যে সিলেট জেলায় দুই হাজার ৩৩৭ জন, সুনামগঞ্জে ১৭১ জন, হবিগঞ্জে ২৫১ জন এবং মৌলভীবাজার জেলায় ৫২৬ জন ছিলেন। এছাড়া জুনে সিলেট বিভাগে ৬৯ জনের মৃত্যু হয়। যা চলতি বছরের মধ্যে এক মাসে সবচেয়ে বেশি। এর আগে এপ্রিলে ৬০ জনের মৃত্যু হয়। জুনে মৃতদের মধ্যে সিলেট জেলায় ৬০ জন, সুনামগঞ্জে তিনজন, হবিগঞ্জে একজন এবং মৌলভীবাজার জেলায় পাঁচজন রয়েছেন।
এদিকে, জুন মাসের প্রথম দশ দিনে চার হাজার ৩৩৪টি নমুনা পরীক্ষা করে বিভাগে করোনা শনাক্ত হয় ৭৯৪ জনের। পরের দশদিনে পাঁচ হাজার ৪০৩টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্ত হয় ৮১৩ জনের এবং শেষ দশদিনে ছয় হাজার ৯১২টি নমুনা পরীক্ষায় শনাক্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ১ হাজার ৬৭৮ জনে। যা প্রথম ও দ্বিতীয় দশদিনের চেয়ে দ্বিগুণের বেশি।
প্রথম দশদিনে শনাক্তের হার ছিল ১৮ দশমিক ৩২। পরের দশদিনে তা কমে দাঁড়ায় ১৫ শতাংশে। তবে শেষ দশদিনে এ হার বেড়ে দাঁড়ায় ২৪ দশমিক ২৭ শতাংশে।
গত বছরের ৫ এপ্রিল সিলেটে প্রথম করোনা আক্রান্ত রোগী শনাক্ত হয়। প্রথম মৃত্যু ঘটে ১৫ এপ্রিল। ওই বছরের এপ্রিলে করোনা শনাক্ত হয় ১১০ জনের, মৃত্যু হয় তিন জনের। মে মাসে শনাক্ত হয় ৯৩০ জনের, মৃত্যু হয় ১৬ জনের। জুনে শনাক্ত হয় তিন হাজার ৫৭৪ জনের, মৃত্যু হয় ৫৮ জনের। জুলাই মাসে শনাক্ত হয় তিন হাজার ৩০০ জনের, মৃত্যু হয় ৬৯ জনের। আগস্ট মাসে শনাক্ত হয় দুই হাজার ৯৭৪ জন, মৃত্যু হয় ৪১ জনের। সেপ্টেম্বরে শনাক্ত হয় এক হাজার ৭৮২ জনের, মৃত্যু হয় ৩১ জনের। অক্টোবরে শনাক্ত হয় এক হাজার ৯ জনের, মৃত্যু হয় ১৩ জনের। নভেম্বরে শনাক্ত হয় ৯৬৭ জনের, মৃত্যু হয় ১৩ জনের। ডিসেম্বরে শনাক্ত হয় ৮৪৭ জনের, মৃত্যু হয় ১৯ জনের। এ বছরের জানুয়ারিতে শনাক্ত হয়েছে ৫০৯ জনের, মৃত্যু হয় ১২ জনের। ফেব্রুয়ারিতে শনাক্ত হয় ৩০৩ জনের, মৃত্যু হয় তিন জনের। মার্চে শনাক্ত হয় এক হাজার ১৮৬ জনের, আর মৃত্যু হয় ১২ জনের। এপ্রিলে করোনা শনাক্ত হয় তিন হাজার ২০১ জনের, মৃত্যু হয় ৬০ জনের। মে মাসে বিভাগে করোনা শনাক্ত হয় দুই হাজার চারজনের, মৃত্যু হয় ৫৯ জনের।
গত বছর এপ্রিলে করোনা শনাক্ত হওয়ার পর মে-জুনে শনাক্তের হার বাড়তে শুরু করে। তবে আগস্টের পর থেকে আবার কমতে শুরু করে। চলতি বছরের প্রথম দুই মাসে সংক্রমণ ছিল নিয়ন্ত্রণে। তবে মার্চের শেষ সপ্তাহ থেকে আবারও বাড়তে থাকে সংক্রমণ। এপ্রিলে বাড়ে শনাক্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। মে মাসের প্রথম থেকে আবার শনাক্ত কমতে থাকলেও গত ঈদের পর তা বাড়তে শুরু করে। আর জুনের শেষ দিকে তা বাড়তে শুরু করে আশঙ্কাজনক হারে। এতে করে বিভাগের চার জেলাকেই অতি উচ্চ সংক্রমিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, কোনো এলাকার সংক্রমণের হার ১০ শতাংশের বেশি হলে তাকে উচ্চ সংক্রমিত এলাকা হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। সেখানে সিলেট বিভাগে শনাক্তের হার অনেক বেশি। ভারতীয় ধরন ছড়িয়ে পড়ায় সংক্রমণ দ্রুত বাড়ছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব বলে মনে করেন তারা।
এ বিষয়ে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা হিমাংশু লাল রায় সিলেট মিররকে বলেন, ‘সংক্রমণের এই হার আমাদের জন্য আশঙ্কাজনক। লকডাউন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করতে পারলে সংক্রমণ কিছুটা কমবে। তবে জরুরি কাজেও যারা বের হবেন তাদেরও মাস্ক করা নিশ্চিত করতে হবে।’
আরসি-০২