নিজস্ব প্রতিবেদক
জুলাই ০৩, ২০২১
০৪:০৩ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ০৩, ২০২১
০৪:০৪ পূর্বাহ্ন
একে ছুটির দিন, সঙ্গে আবার ভোররাত থেকে থেমে থেমে হচ্ছে বৃষ্টি। কঠোর বিধিনিষেধের লকডাউনের দ্বিতীয় দিনের সকালটা সিলেট নগর ছিল তাই ফাঁকা। তবে বেলা যত গড়িয়েছে লকডাউন উপেক্ষা করেও কিছু মানুষ বাইরে বেরিয়েছেন। পর্যটনীয় এবং দর্শনীয় স্থানগুলোতেও টুকটাক মানুষের উপস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। স্বাস্থ্যবিধি উপেক্ষার ধুম। মাস্ক ব্যবহারে অনাগ্রহও দেখা গেছে।
লকডাউনের দ্বিতীয় দিনে সিলেট নগরের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে এসব দেখা গেছে। সিলেট নগরের বিভিন্ন চেকপোস্টে পুলিশের অবস্থান ছিল অব্যাহত। সঙ্গে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাবসহ অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর টহলও ছিল অব্যাহত।
আম্বরখানা এলাকায় সড়কের পাশে বিভিন্ন ভ্রাম্যমাণ ও মৌসুমী ব্যবসায়ীরা পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন। তবে ক্রেতার উপস্থিতি খুব একটা চোখে পড়েনি। তবে নগরের পাড়া-মহল্লার অলিগলিতে ঘুরাফেরা করা ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীদের ঘিরে অনেককে কেনাকাটা করতে দেখা গেছে। এসময় অনেকের মুখেই মাস্ক দেখা যায়নি। ছিল না শারীরিক দূরত্বও।
ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ী মোস্তফা হোসাইন বলেন, লকডাউনের প্রথম দিন থেকে বিক্রি নেই। গতকালও কষ্টে দিন কেটেছে। সামনের দিনগুলোতে কেমন দিন কাটবে জানি না। তাই সবজি নিয়ে বেরিয়েছি। পাড়ার ভেতর দিয়ে ঘুরলে বিক্রি-বাট্টা এসময় একটু ভালো হয়। তবে স্বাভাবিক সময়ে দ্বিগুণ টাকা আয় করা যেত। লকডাউনের কারণে এখন সম্ভব হচ্ছে না।
অন্যদিকে সিলেট নগরের উপকণ্ঠ আন্তর্জাতিক ক্রিকেট স্টেডিয়াম সংলগ্ন লাক্কাতুরা চা বাগান এলাকায় ছুটির দিনের বিকেল বেলা পর্যটকদের উপস্থিতিতে মুখর থাকে। সঙ্গে চটপটি, ফুচকা আঁচার বিক্রেতাদের ঘিরে দর্শনার্থীদের থাকে উপচে পড়া ভীড়। তবে লকডাউনে কারণে সে ভীড় ছিল না সেখানে। তবে স্থানীয় চা বাগানের শিশু-কিশোরদের সেখানে খেলাধুলা করতে দেখা গেছে। যাদের স্বাস্থ্যবিধি সম্পর্কে নেই বিন্দুমাত্র কোনো ধারণা। মানতেও দেখা যায়নি। পাশে হাটা-চলা করতে থাকা স্থানীয় মানুষদেরও মাস্ক ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। অনেকের মাস্ক থাকলেও তা ঝুলেছিল থুঁতনিতে।
চা বাগানের শ্রমিক সুশেন বাউরির সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, সারাদিন বাগানের ভেতরে হাটাহাটি করে হাপিয়ে গেছি। তাই একটু সময় খুলে থুঁতনিতে ঝুলিয়ে রেখেছি।
চা শ্রমিকের সন্তান স্কুল শিক্ষার্থী সুমন গোয়ালার সঙ্গে কথা হলে সে বলে, স্কুল তো এখন বন্ধ। আর বৃষ্টির মধ্যে ফুটবল খেলতে দারুণ লাগে। তাই সবাই মিলে ফুটবল খেলছিলাম। মাস্ক পরে তো ফুটবল খেলা যায় না।
একই দৃশ্য দেখা যায় সিলেটের বাইশটিলা এলাকাতেও। পর্যটনীয় এলাকা হলেও লকডাউনের মধ্যে কোনো পর্যটকদের সেভাবে আসতে দেখা যায়নি। তবে স্থানীয় কয়েকজনকে জেলা পরিষদের ইকো পার্কে মাছ শিকার করতে দেখা যায়। তাছড়া স্থানীয় কিছু দর্শনার্থীদেরও সেখানে উপস্থিত হতে দেখা গেছে। তাদের মুখেও ছিল না মাস্ক। কেউ কেউ আবার এক মোটরসাইকেলে চড়ে তিনজনও এসেছিলেন। ঘুরতে আসা কয়েকজন গণমাধ্যমের উপস্থিতি পেয়ে সে জায়গা প্রস্থান করেন।
মাস্ক ব্যবহার করেন না কেন জানতে চাইলে স্থানীয় বাসিন্দা কলেজ ছাত্র ইমদাদুলের সঙ্গে কথা তিনি বলেন, আমার বাড়ি কাছেই। বিকেল বেলা এমনিতে একটু হাওয়া খেতে বেরিয়েছি। একটু পরেই ফিরে যাব। তাই আর মাস্ক নিয়ে আসিনি।
সিলেটের অন্যতম দর্শনীয় স্থানগুলোর ব্যস্ততম জায়গার একটি বিমানবন্দর এলাকার চায়ের স্টলগুলো। ছুটির দিন হলে এসব স্টলগুলোতে মানুষের উপচেপড়া ভীড় লক্ষ্য করা যায়। লকডাউনের জন্য এসব স্টলগুলো বন্ধ রয়েছে। ফলে এসব স্টল ও ধাবাগুলোতে বিরাজ করছিল সুনশান নিরবতা। যেন চেনা জায়গায় নেমে এসেছিল অচেনার গাম্ভীর্য।
আরসি-০১