রাফিদ চৌধুরী
জুলাই ০২, ২০২১
০৬:০৮ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুলাই ০২, ২০২১
০৬:১০ পূর্বাহ্ন
সীমিত পরিসরের লকডাউন শেষে কঠোর লকডাউন শুরু হয়েছে গতকাল থেকে। করোনা সংক্রমণ ঠেকাতে সিলেটেও লকডাউন চলছে কঠোরভাবেই। সকাল থেকেই নগরের সড়কগুলোতে পুলিশের পাশাপাশি টহল দিতে দেখা গেছে সেনাবাহিনী, বিজিবি, র্যাবকে। এতে খুব প্রয়োজন ছাড়া বাইরে বেরুনোর চেষ্টা করেননি কেউ। ফলে সারাদিন অনেকটা জনশূন্য ছিল সিলেট নগর। ভ্রাম্যমাণ ব্যবসায়ীরা সবজিসহ বিভিন্ন খাদ্য দ্রব্যের পশরা নিয়ে রাস্তায় নেমেছিলেন। কিন্তু ক্রেতাশূন্যতায় তাদের মুখজুড়ে ছিল হতাশার ছাপ।
সিলেট নগরের অন্যতম ব্যস্ততম এলাকা চৌহাট্টা। নগরের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষজন নানা কাজে প্রতিদিন এখানে ভিড় জমান। গতকাল বেলা ১২টার দিকে গিয়ে দেখা গেল চৌহাট্টা এলাকা জুড়ে খা খা শূন্যতা। কিছু রিকশা চলাচল করলেও মানুষজনের তেমনটা পদচারণা নেই। ফুটপাত কিংবা টঙ দোকানও অদৃশ্য।
বেলা সাড়ে ১২ টার দিকে চৌহাট্টা পয়েন্টে রিকশার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে ছিলেন মোশাহিদ আলী নামে এক পথচারী। সিলেট মিরর এর সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ‘শরীরটা ভালো যাচ্ছে না। তাই চিকিৎসককে দেখাতে ওসমানী মেডিকেলে যাচ্ছি।’
অনেকটা একই চিত্র নগরের জিন্দাবাজারের। বিপণীবিতানের এলাকা জিন্দাবাজারে দুই একটা নিত্যপণ্যের দোকান কেবল খোলা। তবে ক্রেতাদের সাড়া নেই তেমন। পয়েন্ট দিকে পশ্চিমমুখি জল্লারপাড় এলাকায় সড়কের দু’পাশের ফুটপাতে কয়েকজন ফল বিক্রেতাকে দেখা গেল পসরা সাজিয়ে বসে থাকতে। একই দৃশ্য দেখা গেছে নগরের আম্বরখানা ও বন্দরবাজার এলাকায়। যারা বেরিয়েছেন তারা সবাই নানা জরুরি প্রয়োজনে বেরিয়েছেন। নগরের দরগা গেইট এলাকায় দেখা হয় সৌমেন ধরের সঙ্গে তিনি বলেন, ‘ঔষুধ কিনতে দরগা গেইট এলাকায় মতিন ফার্মেসিতে যাচ্ছি।’
নগরের বন্দরবাজার এলাকায় রিকশা, মোটরসাইকেল ও মানুষের উপস্থিতি অন্য এলাকার তুলনায় একটু বেশি দেখা গেছে। আবার কোর্ট পয়েন্টের সামনে পুলিশের চেকপোস্টেও পুলিশ তৎপর ছিল প্রায় সারাদিনই। এদিকে যারাই চলাচল করেছেন তাদের গতিরোধ করে বের হওয়ার কারণ এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র যাচাই করে দেখছিলেন পুলিশ সদস্যরা। বন্দরবাজার এলাকায় সিলেট জেলা পরিষদ কার্যালয়ের সামনে কয়েকজন ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা এক সারিতে পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন। তবে তাদের চোখে মুখে ছিল হতাশার ছাপ। ভ্রাম্যমাণ সবজি বিক্রেতা রাসেল মিয়ার সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘একদিন আয় না হলেই টান পড়ে যায়। আজকে সারাদিনে চার-পাচজনের বেশি ক্রেতা পাইনি। লোকজন ভয়ে বাসা থেকে বের হচ্ছে না।’
সিলেটের আরেক ব্যস্ততম এলাকা কিনব্রিজ সংলগ্ন সুরমা নদীর তীর। সেখানে প্রায় সারাদিন হরেক রকমের মানুষের আনাগোনা থাকে। বেলা ৪টার পর সৌন্দর্য পিপাসুরা ভিড় করেন সেখানে। আর তাতে চটপটি, ফুচকা, চা, কফিওয়ালাদের জমজমাট ব্যবসা হয়। গতকাল বিকেলে গিয়ে দেখা গেল উল্টো চিত্র। মানুষজন নেই। বরং ফাঁকা জায়গা দখল করে আড্ডা জমিয়েছেন পরিবহন শ্রমিকরা। সেখানে স্বাস্থ্যবিধি ষ্পষ্টত উপেক্ষিত হতে দেখা গেছে। যদিও কঠোর লকডাউনের প্রথম দিনে কাক্সিক্ষত ব্যবসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন বলে জানিয়েছেন সেখানকার চটপটি-ফুচকা, চায়ের টঙ ও আচার বিক্রেতারা।
আশিক আহমেদ নামে চটপটি-ফুঁচকার এক দোকানি বললেন, ‘চটপটি আর ফুচকা বিক্রি করেই পরিবার চালাই। কিন্তু মানুষজন নেই। তাই একটু দুঃশ্চিন্তা হচ্ছে। বাজার খরচার টাকা জোগাড় হবে তো।’