বন্ধ ফেঞ্চুগঞ্জ ও মোগলাবাজার রেলস্টেশন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ

শহীদ আহমদ চৌধুরী, ফেঞ্চুগঞ্জ


জুন ২৯, ২০২১
১০:২৩ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ২৯, ২০২১
১০:২৩ অপরাহ্ন



বন্ধ ফেঞ্চুগঞ্জ ও মোগলাবাজার রেলস্টেশন, ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ

ফেঞ্চুগঞ্জ ও মোগলাবাজার রেলওয়ে স্টেশন দুটি লোকবল সংকটের কারণে দীর্ঘদিন থেকে বন্ধ রয়েছে। সিলেট-আখাউড়া সেকশনের এ স্টেশন দুটি বন্ধ থাকায় এতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন যাত্রীসাধারণ। যাতায়াত সংকটের পাশাপাশি ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন এলাকার ব্যবসায়ীরা। রেলওয়ে বিভাগ বঞ্চিত হচ্ছে রাজস্ব আয় থেকে। এসব স্টেশনের যাত্রী টিকিট ও মালামাল পরিবহনের লাখ লাখ টাকার রাজস্ব হারাচ্ছে রেল বিভাগ।

শুধু এ দুই স্টেশন নয়, লোকবলের অভাবে ২০০৯ সালে সিলেট-আখাউড়া রেল সেকশনের আরও কয়েকটি স্টেশন বন্ধ করা হয়। সর্বশেষ ২০২০ সালের শেষের দিকে সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ রেল স্টেশনটি বন্ধ করে দেয় রেল কর্তৃপক্ষ। অথচ স্টেশনগুলো বন্ধ হোক তা চাননি স্থানীয় জনসাধারণ। কারণ এসব স্টেশন ব্যবহার করে সাধারণ যাত্রীরা এক স্থান থেকে অন্য স্থানে সহজে ও সুলভে যাতায়াত করতেন। এই স্টেশনগুলোতে স্টপেজ ছিল লোকাল মেইল, মিস ট্রেন, জালালাবাদ ট্রেন, সুরমা মেইল, কুশিয়ারা ট্রেনগুলোর। তাই যাত্রীসাধারণ ও ব্যবসায়ীরা সহজে এক জেলা থেকে অন্য জেলায় যাতায়াত ও পণ্য পরিবহনে স্টেশনগুলো ব্যবহার করতেন। সেজন্য তারা কখনও চাননি স্টেশনগুলো বন্ধ হোক।

স্টেশনগুলো বন্ধ হওয়ায় সাধারণ যাত্রীরা বিপাকে পড়েছেন। চালু থাকা ট্রেনগুলোতে বিনা টিকেটে চড়ে অনেককেই জরিমানা গুনতে হচ্ছে। ঐতিহ্যের ধারক যে স্টেশনগুলো বন্ধ রয়েছে, তা চালুর দাবিতে এলাকাবাসী সভা-সমাবেশ করেছেন। রেল কর্তৃপক্ষ স্টেশনগুলোতে জনবল নিয়োগ দিয়ে চালুর আশ্বাস দিলেও সেই প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন হয়নি।

বন্ধ থাকা রেলওয়ে স্টেশনের কার্যক্রম পুনরায় চালু করার জন্য রেলমন্ত্রীর কাছে ডিও লেটার পাঠিয়েছিলেন প্রয়াত সংসদ সদস্য মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েছ। ডিও লেটারে তিনি উল্লেখ করেছিলেন, দক্ষিণ সুরমার মোগলাবাজার ও ফেঞ্চুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন দীর্ঘ দিন ধরে অবহেলিত ও ঝুঁকিপূর্ণ। ফেঞ্চুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন ফেঞ্চুগঞ্জের ব্যবসায়ীদের কাছে অতিগুরুত্বপূর্ণ। এই স্টেশন থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে পণ্য পরিবহন করা হয়। তাই স্টেশন পূনঃনির্মাণ জরুরি। সেই সঙ্গে মাইজগাঁও স্টেশন সংস্কার করা জরুরি বলে তিনি মনে করেন।

কিন্তু সেই ডিও লেটারের পরেও আজ পর্যন্ত চালু হয়নি ফেঞ্চুগঞ্জ ও মোগলাবাজার রেলওয়ে স্টেশন। স্টেশনের দায়িত্বে লোকজন না থাকায় ভেঙে পড়ছে ভেতরের বাঁশের খুঁটিগুলো। স্টেশনের পার্শ্ববর্তী এলাকার বাসিন্দা সাহেদ বলেন, স্টেশনটি বন্ধ হওয়ায় আরও বেশি ক্ষতি হচ্ছে। ভয় হয় যে কোনো সময় ঝড়ে ঘরটি উড়ে যায় কি না।

ফেঞ্চুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশন থাকলেও অনেক সময় মালামাল আসে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে- এমনটা জানালেন মাইজগাওঁ রেলওয়ে স্টেশনের সিলম্যান আদাই মিয়া। তিনি বলেন, ফেঞ্চুগঞ্জ রেলওয়ে স্টেশনটি দেড় বছরের মতো সময় ধরে বন্ধ রয়েছে। আমি এখানে বাড়তি দায়িত্বপালন করি। লোকবল না থাকায় বন্ধ আছে স্টেশনটি। বন্ধ থাকায় স্টেশনের গ্লাসগুলো খুলে নেওয়ার চেষ্টায় রয়েছে হেরোইনসেবীরা। রাতে তারা স্টেশনে আড্ডা বসায়। তাদের ভয়ে এখানকার মাজারেও লোকজন আসতে এখন ভয় পায়। তাই এখানে গুরুত্বের সঙ্গে লোক নিয়োগ দিয়ে স্টেশনটি চালু করা দরকার বলে মনে করছি।

মাইজগাঁও রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মো. মনির উদ্দিন জানান, স্টেশনটি লোকবল সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে। কবে চালু হবে তা বলা যাচ্ছে না। গুরুত্বপূর্ণ সম্পদ রক্ষার্থে জরুরিভিত্তিতে লোক নিয়োগ করে স্টেশন চালু করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি। সেই সঙ্গে মাইজগাঁও স্টেশনটিও সংস্কার করা অতি জরুরি বলে জানান তিনি।


এসএ/আরআর-০৩