উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর
জুন ২৯, ২০২১
০৯:৪১ অপরাহ্ন
আপডেট : জুন ২৯, ২০২১
০৯:৪১ অপরাহ্ন
দুই সন্তানের জননী শিউলি বেগম (ছদ্মনাম) একটি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে পড়াতেন। চাকরি আর কয়েকটি টিউশনি করে কোনোমতে চালিয়ে নিচ্ছিলেন স্বামীহীন সংসার। কিন্তু করোনার সংক্রমণ প্রতিরোধে সবকিছু বন্ধ হয়ে যাওয়ায় সন্তানদের নিয়ে দিশেহারা হয়ে পড়েন। আয়ের উপায় না পেয়ে তিনি এখন সুপারি কেটে দোকানে দোকানে বিক্রি করছেন।
বৃদ্ধ বাবা-মা আর দুই বোনকে নিয়ে রাহেলা বেগম (ছদ্মনাম) একটি ভাড়া বাসায় থেকে শিক্ষকতা করতেন। করোনাকালে চাকরি ও টিউশনি হারিয়ে তিনি এখন দুই বোনকে সঙ্গে নিয়ে কাঁথা সেলাইয়ের কাজ করেন। ২/৩ দিন কাজ করে একটি কাঁথা সেলাই করে পান ৩ থেকে ৪শ টাকা। মাস শেষে বাসা ভাড়া, বিদ্যুৎ বিল দিয়ে যা থাকে, তাতে নুন আনতে পান্তা ফুরানোর দশা হয়।
শিউলি-রাহেলাদের মতো ওসমানীনগরের ২৯টি কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অসংখ্য শিক্ষক-কর্মচারীর অভাবের গল্প এখন একই রকমের। আর্থিক সংকটে তাদের চোখে-মুখে লেপ্টে আছে উদ্বেগ ও হতাশা। শিক্ষকতার মতো মহান পেশায় থাকায় তারা পারছেন না কারও কাছে হাত পাততে। আত্মসম্মান হারানোর ভয়ে কাউকে নিজের অভাবের কথা বলতে পারছেন না।
এদিকে, অর্থকষ্টে থাকা শিক্ষকদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার জন্য প্রশাসন বরাবর আবেদন করেও কোনো সাড়া পাচ্ছেন না বলে জানিয়েছেন ওসমানীনগর কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি বদরুল আলম চৌধুরী।
জানা যায়, উপজেলায় ২৯টি কিন্ডারগার্টেন স্কুলে কর্মরত রয়েছেন ৩১৫ জন শিক্ষক/কর্মচারী। এই শিক্ষকরা প্রায় সাড়ে ৩ হাজার শিক্ষার্থীকে পাঠদান করে থাকেন। শিক্ষার্থীদের বেতন ও টিউশন ফি দিয়েই চলে তাদের সবকিছু। কিন্তু করোনায় সরকারি আদেশে গত বছরের ১৮ মার্চ থেকে সকল কিন্ডারগার্টেন স্কুল বন্ধ থাকায় কোনো বেতন নেই শিক্ষকদের। টিউশন ফি বন্ধ থাকায় শিক্ষক ও কর্মচারীদের মাসিক বেতনও বন্ধ। এছাড়া করোনা সতর্কতায় শিক্ষকের টিউশনি করারও সুযোগ নেই
উদয়ন কিন্ডারগার্টেন অ্যান্ড জুনিয়র গালর্স স্কুলের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আলী আমজদ চৌধুরী সিজু বলেন, বর্তমান সময়ে কিন্ডারগার্টেনের শিক্ষকরা মানবেতন জীবনযাপন করছেন। সম্মানের কারণে তারা কারও কাছে সাহায্যের জন্য হাত পাততেও পারছেন না। প্রতিটি প্রতিষ্ঠানই শিক্ষক ও কর্মচারীদের ব্যাপারে মানবিক। কিন্তু শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি বন্ধ থাকায় প্রতিষ্ঠানগুলোর উপার্জন বন্ধ। ইচ্ছে থাকা সত্ত্বেও তাদের সহায়তা করা সম্ভব হচ্ছে না। তাই আমরা সরকারের কাছে নগদ অর্থ প্রণোদনার দাবি জানাচ্ছি।
ওসমানীনগর কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি ও চাইল্ড ফেয়ার ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলের পরিচালক বদরুল আলম চৌধুরী বলেন, শিক্ষক ছাড়াও আরও অর্ধশত কর্মচারী এসব স্কুলে নিয়োজিত আছেন। বর্তমান মহামারিতে কেউই শিক্ষকদের আর্থিক অবস্থার খোঁজ রাখছেন না। অন্যদিকে ওসমানীনগরের বেশিরভাগ কিন্ডারগার্টেন পরিচালিত হচ্ছে ভাড়া করা ভবনে। ফলে প্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকলেও ভবনের ভাড়া নিয়মিত দিতে হচ্ছে। এতে প্রতিষ্ঠানগুলো টিকিয়ে রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আর্থিক কারণে ইতোমধ্যে ওসমানীনগরের একটি কিন্ডারগার্টেন স্থায়ীভাবে বন্ধ হয়ে গেছে। আরও কয়েকটি বন্ধ হওয়ার পথে।
তিনি বলেন, শিক্ষক/কর্মচারীদের অবস্থা বিবেচনা করে তাদের আর্থিক প্রণোদনা দেওয়ার জন্য ওসমানীনগর কিন্ডারগার্টেন অ্যাসোসিয়েশনের পক্ষ থেকে ২০২০ সালের অক্টোবরে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও চলতি বছরের মার্চে সিলেটের জেলা প্রশাসক বরাবরে আবেদন করা হয়েছে। যদিও এখন পর্যন্ত কোনো সাড়া পাওয়া যায়নি।
ইউডি/আরআর-০১