সিলেট ছাড়ছেন নিম্ন আয়ের লোকজন

নিজস্ব প্রতিবেদক


জুন ২৯, ২০২১
০৬:৩১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : জুন ২৯, ২০২১
০৬:৩১ পূর্বাহ্ন



সিলেট ছাড়ছেন নিম্ন আয়ের লোকজন

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে লকডাউনের ঘোষণার পর সিলেট নগর ছাড়তে শুরু করেছেন লোকজন। এরমধ্যে বেশিরভাগই নিম্ন আয়ের মানুষ।    

সোমবার (২৮ জুন) থেকে সীমিত লকডাউন শুরুর প্রজ্ঞাপন জারির পর থেকেই সিলেট নগর ছাড়তে শুরু করেন লোকজন। গতকাল রবিবার সকাল থেকেই সিলেটের বাসস্ট্যান্ডগুলোতে বাড়ি ফেরা মানুষের ভিড় দেখা যায়। এদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন নিম্ন আয়ের মানুষ। 

গতকাল রবিবার কদমতলী বাসস্ট্যান্ডে গিয়ে দেখা যায়, বাস-কার-মাইক্রোবাস ও সিএনজিচালিত অটোরিকশায় সিলেট ছাড়ছেন সাধারণ মানুষ। অনেকেই ট্রাক-পিকআপের উপরে উঠেও বাড়িতে যাচ্ছেন। অতিরিক্ত ভাড়া দিয়ে গাদাগাদি করে তারা বাড়ি ফিরছেন।

এ সময় চালক-হেল্পার, যাত্রী বেশিরভাগের মুখেই ছিল না মাস্ক। ঘরফেরা মানুষের ভিড়ে যানজটের সৃষ্টি হয় বাসস্ট্যান্ড এলাকার চারদিকের রাস্তায়। বাড়ি ফেরা মানুষের মধ্যে নিম্ন আয়ের লোকজন বলছেন, লকডাউনে তারা কাজ পাবেন না। তাই সিলেটে থাকলে খাবার জুটবে না। তাই তারা সিলেট ছেড়ে যাচ্ছেন। অনেককে বাসার সবকিছু নিয়েও নগর ছাড়তে দেখা গেছে। 

করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে দেওয়া এক প্রজ্ঞাপনে আজ সোমবার থেকে আগামী বৃহস্পতিবার সকাল পর্যন্ত বিধি-নিষেধ আরোপ করা হয়।

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সোমবার সকাল ছয়টা থেকে সারা দেশে গণপরিবহন বন্ধ থাকবে। বন্ধ থাকবে সব ধরনের শপিং মল, মার্কেট, পর্যটন কেন্দ্র, রিসোর্ট, কমিউনিটি সেন্টার ও বিনোদন কেন্দ্র। তবে পণ্যবাহী যানবাহন এবং রিকশা চলাচল করবে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী নিয়মিত টহলের মাধ্যমে গণপরিবহন চলাচল নিয়ন্ত্রণ নিশ্চিত করবে। আগামী বৃহস্পতিবার সকাল ছয়টা পর্যন্ত এই বিধিনিষেধ বলবৎ থাকবে। 

প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, সংক্রমণের বর্তমান পরিস্থিতি বিবেচনায় আগের সব বিধিনিষেধ ও কার্যক্রমের ধারাবাহিকতায় এসব বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, খাবারের দোকান, হোটেল-রেস্তোরাঁ, সকাল আটটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খাবার বিক্রি করতে পারবে। সরকারি-বেসরকারি অফিস বা প্রতিষ্ঠান শুধু প্রয়োজনীয়সংখ্যক কর্মীর উপস্থিতি নিশ্চিত করতে নিজস্ব ব্যবস্থাপনায় কর্মীদের আনা-নেওয়া করতে পারবে। আগামী বৃহস্পতিবার থেকে দেশব্যাপী সাত দিনের সর্বাত্মক লকডাউন শুরু হবে বলেও জানানো হয়েছে সরকারের পক্ষ থেকে। 

সিলেট নগরের বিভিন্ন বাসায় ঘুরে ঘুরে ভাঙ্গারি জিনিষপত্র ক্রয় করে তা বিক্রি করে সংসার চালান হাকিনুর রহমান। লকডাউনের খবর শোনার পর তিনি নগর ছেড়ে বাড়িতে ফেরার সিদ্ধান্ত নেন। রবিবার তিনি মাইক্রোবাসে নগর ছাড়ার সময় সিলেট মিররকে বলেন, ‘শুনেছি এবার খুব কড়া লকডাউন হবে। মানুষের বাসায় বাসায় না যেতে পারলে না খেয়ে থাকতে হবে। তাই বাধ্য হয়ে সিলেট ছাড়ছি।’ 

সিলেট থেকে সরাসরি ঢাকাগামী বাস আগে থেকেই বন্ধ রয়েছে। তবে বাহ্মণবাড়িয়া ও ভৈরবে বাস যাচ্ছে। এসব বাসে করে ঢাকা ও আশপাশের এলাকায় পৌঁছাচ্ছেন মানুষজন। ঢাকা যেতে পরিবারের সদস্যদের নিয়ে বাসস্ট্যান্ডে আসেন রাকিবুল ইসলাম।

তিনি সিলেট মিররকে বলেন, ‘সিলেট থেকে জনপ্রতি ৪০০ টাকা দিয়ে বাসে করে বাহ্মণবাড়িয়া যাব। সেখান থেকে সিএনজিচালিত অটোরিকশা বা অন্যকোনোভাবে ঢাকা গিয়ে পৌঁছাব।’ নগরের একটি মার্কেটে চাকরি করতেন জানিয়ে তিনি বলেন, ‘লকডাউনে মার্কেট বন্ধ থাকবে। এদিকে মাসের শেষদিকে এসে হাতে টাকাও নেই। তাই সিলেট ছেড়ে চলে যাচ্ছি।’

বাসার আসবাবপত্র ও পরিবারের সদস্যদের নিয়ে সিলেট ছাড়তে দেখা যায় মাহিদ হোসেনকে। কারণ জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ছোট একটা ব্যবসা করতাম। কিন্তু বারবার লকডাউনের কারণে গত দেড় বছর ধরে ব্যবস্থায় ক্ষতি হচ্ছে। তাই খুব কষ্টে আছি। ধারদেনা করে এতদিন সংসার চালিয়েছি। তবে এখন আর পারছি না। তাই একেবারে সিলেট ছেড়ে চলে যাচ্ছি। বাড়িতে গিয়ে কিছু করা যায় কি না দেখব।’ 

জেলা বাস মিনিবাস, কোচ, মাইক্রোবাস শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মো. আব্দুল মুহিম সিলেট মিররকে বলেন, ‘রবিবার সকাল থেকেই যাত্রীদের প্রচন্ড ভিড় ছিল বাসস্ট্যান্ডে। মূলত লকডাউনের কারণে একসঙ্গে অনেক লোক সিলেট ছাড়ছেন। তাই এত ভিড়।’ 

আরসি-০৩