ওসমানীনগরে ১০ কিলোমিটার সড়কে ৩২টি গতিরোধক!

উজ্জ্বল ধর, ওসমানীনগর


জুন ২১, ২০২১
১১:১৪ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ২১, ২০২১
১১:১৪ অপরাহ্ন



ওসমানীনগরে ১০ কিলোমিটার সড়কে ৩২টি গতিরোধক!
নেই কোনো রঙ বা সাংকেতিক চিহ্ন, নিয়মিত ঘটছে দুর্ঘটনা

সিলেটের ওসমানীনগরের সিলেট-ঢাকা মহাসড়কের বেগমপুর বাজার থেকে পশ্চিমের পাকা সড়ক দিয়ে প্রতিদিন হাজার হাজার মানুষ চলাচল করেন। এই রাস্তাটি জগন্নাথপুর উপজেলা ছুঁয়ে সুনামগঞ্জ জেলা সদরে পৌঁছেছে। ওসমানীনগর ও জগন্নাথপুরের বেশ কয়েকটি ইউনিয়নের লোকজন এই সড়ক ব্যবহার করে থাকেন।

এলজিইডি'র অর্থায়নে কয়েক কোটি টাকা ব্যয়ে বেগমপুর বাজার হইতে কালনীরচর বাজার পর্যন্ত (ওসমানী সড়ক) ১০ কিলোমিটার সড়কের সংস্কার কাজ শেষ হয় প্রায় দুই মাস আগে। ওই সংস্কার কাজে নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ নানা প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন। পুরাতন কার্পেটিংয়ের মালামাল ও নিম্নমানের ইটের ব্যবহারসহ ৬ ইঞ্চি পুরু ঢালাইয়ের পরিবর্তে মাত্র ২ থেকে ৩ ইঞ্চি ঢালাই দেওয়ার অভিযোগ ওঠে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে। অভিযোগগুলো আমলে না নিয়ে তড়িঘড়ি করে সংস্কার কাজ শেষ হলেও বর্তমানে ‘গোঁদের উপর বিষফোঁড়া’ হয়ে দাঁড়িয়েছে গতিনিয়ন্ত্রক বাঁধ (স্পিড ব্রেকার)। 

সরেজমিনে দেখা যায়, প্রায় ১০ কিলোমিটার সড়কে গুপ্তঘাতকের মতো শুয়ে আছে ৩২টি গতিনিয়ন্ত্রক। স্কুল, মাদরাসা, হাট-বাজার ও ধর্মীয় স্থানের পাশে বাঁধ দেওয়ার কথা থাকলেও এ সড়কের যেখানে-সেখানে তা অপরিকল্পিতভাবে নির্মাণ করা হয়েছে। সড়কের পাশে ২/৩টি দোকান থাকলেই তার দুই প্রান্তে বসিয়ে দেওয়া হয়েছে দুটি বাঁধ। স্কুল, মাদরাসা, হাটবাজার ও ধর্মীয় স্থানের পাশে বাঁধ দেওয়ার কথা থাকলেও এ সড়কের কোথাও ফাঁকা রাস্তায়, প্রভাবশালী কিংবা বিত্তশালীর বাড়ির সামনেও রয়েছে জোড়ায় জোড়ায় গতিরোধক। অবস্থা এমন হয়েছে যে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে যার যেখানে ইচ্ছা সেখানেই বসিয়েছেন বাঁধ।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক স্থানীয় একজন জানান, এলাকার প্রভাবশালীরা ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে ‘ম্যানেজ’ করে ইচ্ছামতো বাঁধ নির্মাণ করিয়েছেন। 

এদিকে বাঁধে আলাদা রঙ বা মার্কিং না থাকায় এ সড়কে ঘটেছে একাধিক দুর্ঘটনা। প্রায়ই সড়কে চলাচলকারী সিএনজিচালিত অটোরিকশা ও ব্যাটারিচালিত রিকশা দুর্ঘটনার শিকার হয়। অন্যদিকে সড়কের দুইধারে জনবসতি কম হওয়ায় ও হাওর থাকায় রাতের বেলা এ অঞ্চলে ডাকাতির ঝুঁকি থাকে। কিন্তু অতিরিক্ত বাঁধের কারণে যানবাহন খুব ধীরে চালাতে হয়। রাতের বেলা যা যাত্রী ও চালকদের জন্য উদ্বেগজনক। 

স্থানীয় অটোরিকশাচালক আবরুছ মিয়া বলেন, এ সড়কে নতুন কোনো চালক গাড়ি নিয়ে ঢুকলেই দুর্ঘটনার আশঙ্কা থাকে। কারণ এসব স্পিড ব্রেকারে নেই কোনো রঙ বা সাংকেতিক চিহ্ন। অপরিকল্পিত বাঁধের কারণে অনেক সময় আমাদের ডাকাতের কবলেও পড়তে হয়। বিপজ্জনক স্পিড ব্রেকারগুলো বসিয়ে শুধু গাড়ির ক্ষতিই করা হচ্ছে না, দুর্ঘটনার আশঙ্কাও বেড়ে গেছে কয়েকগুণ।

এলজিইডির ওসমানীনগর উপজেলার প্রকৌশলী এস এম আব্দুল্লাহ আল-মামুন জানান, এ সড়কে কতগুলো বাঁধ রয়েছে তার সঠিক কোনো তথ্য নেই। ওয়ার্ক প্লানিংয়েও বাঁধের উল্লেখ ছিল না। জনগুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি স্থানে গতিরোধক দেওয়ার জন্য ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে বলা হয়েছিল।

আলাদা রঙ বা সাংকেতিক চিহ্ন না থাকা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এতগুলো বাঁধ কিভাবে চিহ্নিত করা যায় তা গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখা হবে।


ইউডি/আরআর-০২