ফারহান মাসউদ আফছর, গোলাপগঞ্জ
জুন ২০, ২০২১
১২:৫১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : জুন ২০, ২০২১
০৩:২৩ পূর্বাহ্ন
'দুই ছেলে-মেয়ে রেখে স্বামী মারা যান। পরে স্বামীর বাড়ি থেকে চলে এসে আত্মীয়-স্বজনদের বাড়িতে থেকেছি। নিজের বলতে কিছুই ছিল না। বাসা-বাড়িতে কাজ করে যা পেতাম, তা দিয়েই কোনোরকমে আমাদের তিনজনের খাওয়া-পরা চলত। বাড়ি করার স্বপ্ন কোনোদিন দেখিনি। মুজিববর্ষে ঘর পেয়ে সেই না দেখা স্বপ্ন পূরণ হয়ে গেছে।' কথাগুলো বলছিলেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার সদর ইউনিয়নের চৌঘরি এলাকার বিধবা সফতেরা বিবির। মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর উপহার ঘর পেয়ে এভাবেই নিজের অনুভূতি প্রকাশ করেন তিনি।
জানা গেছে, মুজিব জন্মশতবর্ষ উপলক্ষে গোলাপগঞ্জের ২০০টি ভূমিহীন ও গৃহহীন পরিবার তাদের স্বপ্নের ঠিকানা পেয়ে নতুন ঘরে পরিবার নিয়ে সংসার শুরু করতে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে ৭৭টি পরিবারকে ঘরের জমির দলিল হস্তান্তর করা হয়েছে। বাকিগুলোর কাজ শেষ হয়েছে। যে কোনো দিন সরকার সেসব ঘর গৃহহীনদের মধ্যে বরাদ্দ দেবেন বলে জানিয়েছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কবির।
সংশ্লিষ্টরা জানান, উপজেলার নির্ধারিত ২০০টি ঘরের মধ্যে ইতোমধ্যে ১৭৭টি ঘরের কাজ সম্পন্ন হয়েছে এবং বাকি ২৩টি ঘরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এর মধ্যে ৭৭টি পরিবারের নিকট ঘরের সঙ্গে জমির কাগজপত্রের মালিকানা হস্তান্তর করা হয়েছে। এই ২০০টি ঘর নির্মাণ করতে ব্যয় হয়েছে ৩ কোটি ৫০ লাখ টাকা।
এদিকে, ঘরের সঙ্গে জমির মালিকানার কাগজপত্র পেয়ে ভীষণ খুশি এসব গৃহহীন ও ভূমিহীন পরিবার। তাদের সবার স্বপ্ন ছিল এরকম একটি ঘরে পরিবার নিয়ে শান্তিতে বসবাস করবেন। অবশেষে তাদের এ স্বপ্ন পূরণ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বসবাসযোগ্য সুন্দর একটি ঘর তৈরি করে দিয়ে নিজেদের মাথা গোঁজার ঠাই করে দেওয়ায় প্রধানমন্ত্রীর জন্য প্রাণ খুলে দোয়া করেছেন তারা।
নতুন ঘর পাওয়া নিয়ে তিন সন্তানের মা রেবেকা বেগমের কাছে অনুভূতি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, অনেক কষ্ট করে অন্যের জায়গায় কোনোরকমে ঝুপড়ি ঘরে বসবাস করে আসছিলাম। বৃষ্টি এলে সে ঘর পানিতে ভরে যেত। শীতের সময় কুয়াশায় ভরে যেত ঘর। স্বপ্নেও কল্পনা করতে পারতাম না ভালো একটি ঘর পাবো। জীবনের এই দুর্যোগময় মূহূর্তে ঘর দেওয়া শেখ হাসিনাকে আল্লাহ অনেক দিন বাঁচিয়ে রাখুন।
গোলাপগঞ্জে প্রথম পর্যায়ে ২০০টি পরিবারের মধ্যে ৭৭টি পরিবারকে ঘর দেওয়া হয়েছে। তাদের সবার জীবনের কষ্টের গল্প মোটামুটি একই রকম। গৃহহীন ও ভূমিহীন এসব পরিবার পেয়েছে নিজেদের ঠিকানা। প্রতিটি পরিবারের জন্য বরাদ্দকৃত দুই কক্ষের ঘরে জ্বলবে বিদ্যুতের আলো। ইতোমধ্যে বেশিরভাগ ঘরে বিদ্যুতের আলো জ্বলছে ও কিছু ঘরে বিদ্যুৎ সংযোগের কাজ চলমান রয়েছে। বাসগৃহ নির্মাণ আশ্রয়ণ-২ প্রকল্পের আওতায় নকশা অনুযায়ী প্রতিটি ঘরের দৈর্ঘ্য সাড়ে ১৯ ফুট, প্রস্থ ২২ ফুট ও উচ্চতা সাড়ে ৮ ফুট। প্রতিটি ঘরে আছে বারান্দা, ৮ ফুট করে দু’টি কক্ষ, একটি রান্নাঘর ও একটি বাথরুম। প্রতিটি ঘর নির্মাণের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। দ্রুততম সময়ের মধ্যে এসব ঘর নির্মাণ সম্পন্ন করার জন্য বিরামহীনভাবে কাজ করে যাচ্ছেন উপজেলা প্রশাসনের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা।
উপজেলা প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তা হাবিবুর রহমান জানান, গোলাপগঞ্জ উপজেলায় আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২০০টি ঘর নির্মাণ করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে ১৭৭টি ঘরের কাজ শেষ হয়ে গেছে ও বাকি ২৩টি ঘরের কাজ শিগগির শেষ হয়ে যাবে।
উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রফিক আহমদ বলেন, ক্ষুধামুক্ত-দারিদ্রমুক্ত বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বিনির্মাণে মুজিববর্ষে ‘বাংলাদেশে একজন মানুষও গৃহহীন থাকবে না’ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার এই নির্দেশনা বাস্তবায়নের লক্ষ্যে দেশের সব ভূমিহীন ও গৃহহীন মানুষের বাসস্থান নিশ্চিতকল্পে আওয়ামী লীগ সরকার কাজ করে যাচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার উন্নয়নের সুফল থেকে কেউ বঞ্চিত হবে না।
গোলাপগঞ্জ উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ গোলাম কবির বলেন, মুজিববর্ষের উপহার হিসেবে প্রধানমন্ত্রীর অগ্রাধিকার প্রকল্পের আওতায় সরকার যারা ভূমিহীন ও গৃহহীন তাদের জন্য ঘর নির্মাণ দিচ্ছে। ইতোমধ্যে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় উপজেলা প্রশাসনের সার্বিক তত্বাবধানে আশ্রয়ণ প্রকল্পের আওতায় ২০০টি ঘরের মধ্যে ১৭৭টি ঘরের কাজ শেষ হয়েছে এবং বাকি ২৩টি ঘরের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। এ বছর জানুয়ারি মাসে ৭৭টি পরিবারের নিকট জমির কাগজপত্র ও ঘর বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে এবং শিগগির বাকি ঘরগুলো হস্তান্তর করা হবে।
উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি অ্যাডভোকেট ইকবাল আহমদ চৌধুরী বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্ন ছিল মহান মুক্তিযুদ্ধে অর্জিত স্বাধীন বাংলাদেশে কেউ যেন গৃহহীন না থাকে, প্রতিটি মানুষ যেন খাদ্য পায়, শিক্ষা পায়, উন্নত জীবনের অধিকারী হয়। মুজিববর্ষ উপলক্ষে পিতার সেই স্বপ্ন পূরণে সারাদেশে গৃহহীন-ভূমিহীন পরিবারের জন্য ঘর নির্মাণ করে দিচ্ছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এই কর্মসূচির অংশ হিসেবে গোলাপগঞ্জ উপজেলায় ২০০টি গৃহহীন পরিবারকে ঘর নির্মাণ করে দেওয়া হচ্ছে। এটা সম্ভব হয়েছে প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সদিচ্ছার কারণে।
এফএম/আরআর-১২