সিলেট মিরর ডেস্ক
মে ০১, ২০২১
০৯:৫৪ অপরাহ্ন
আপডেট : মে ০১, ২০২১
০৯:৫৬ অপরাহ্ন
বাঁশখালীতে শ্রমিক হত্যার বিচার ও নূন্যতম মজুরি ১৬ হাজার টাকা নির্ধারণসহ বিভিন্ন দাবিকে সামনে রেখে মে দিবসে মিছিলসহ সমাবেশ করেছেন বাংলাদেশ শ্রমিক কর্মচারী ফেডারেশন সিলেট জেলা শাখা। আজ শনিবার (১ মে) সিলেট কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে শুরু হয়ে মিছিলটি নগর চত্বরে গিয়ে সমাবেশে মিলিত হয়।
সংগঠনের আহ্বায়ক মুখলেসুর রহমানের সভাপতিত্বে ও প্রসেনজিৎ রুদ্রের সঞ্চালনায় সমাবেশে বক্তব্য দেন বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার আহ্বায়ক কমরেড উজ্জ্বল রায়, জেলা সদস্য বিরেন সিং। সমাবেশে উপস্থিত ছিলেন বাসদ (মার্কসবাদী) সিলেট জেলার নেতা অ্যাডভোকেট হুমায়ুন রশীদ সোয়েব, চা শ্রমিক নেতা অজিত রায়, জিতু সেন প্রমুখ।
সমাবেশে বক্তারা বলেন, ‘৮ঘন্টা শ্রমের দাবিতে ১৮৮৬ সালের ১ মে শ্রমিকরা রাজপথ রঞ্জিত করে। তবে ১৩৪ বছর পরেও শ্রমিকরা পুঁজিবাদের যাতাকলে পিষ্ট। এই সংগ্রামের ১ শতাব্দীর অধিক সময় পার হলেও আমাদের দেশের গার্মেন্টস শ্রমিক, পরিবহন, হোটেল, দোকান কর্মচারী, গৃহ শ্রমিক, চা শ্রমিক,নির্মাণসহ বিভিন্ন সেক্টরের শ্রমিকরা ৮ ঘন্টা কর্মদিবসের অধিকার কেউ পান না।
বক্তারা বলেন, সম্প্রতি শ্রম আইন এ কর্মঘণ্টা ও ওভারটাইম সম্পর্কিত ধারা বাতিল করে সরকার শ্রমিকদের উপর চাপ তৈরী করে খুশিমত কাজ করিয়ে নেওয়ার অধিকার মালিককে দিয়েছে। বাঁশখালীতে এস আলম গ্রুপ ও চীনা কোম্পানির যৌথভাবে নির্মিত কয়লাবিদ্যুৎ কেন্দ্রে শ্রমিকরা বকেয়া বেতন দাবিসহ ১০ দফার আন্দোলনে পুলিশ গুলি করে ৫ জন শ্রমিককে হত্যা করে ও অনেককে আহত করে।
বক্তারা এই নির্মম হত্যার বিচার দাবি করে বলেন, অর্থনৈতিক সংকটের অজুহাতে শ্রমিকদের ছাঁটাই করছে ও বেতন এখনো ঠিকমত পরিশোধ করছে না মালিকেরা। আবার অন্য দিকে পাটকল ও চিনিকল বন্ধ করে বেসরকারিকরন করে শ্রমিক ও চাষিকে অনিশ্চয়তা ও দুর্বিষহ জীবনের দিকে ঠেলে দিয়েছে সরকার।
মজুরি সময়মতো পরিশোধের দাবি জানিয়ে বলেন, বকেয়া মজুরি পরিশোধের দাবিতে ও শ্রমিক ছাঁটাই, বেতন কর্তনের প্রতিবাদে শ্রমিকরা সংক্রমণের ঝুঁকি নিয়ে স্বতঃস্ফূর্ত বিক্ষোভে নামলে তাদের ওপর পুলিশী হামলা চলেছে। লক্ষ বেকার কাজ না পেলেও চলছে কৌশলী বাধ্যগত ওভারটাইম।কর্মস্থলে নিরাপত্তা তো নেই,তার উপর সরকারের অপরিকল্পিত লডাউনে শ্রমিকরা দিশেহারা।
এ অবস্থায় দেশের শ্রমজীবী মেহনতি মানুষের ঐক্যবদ্ধ চেতনাকে বুকে নিয়ে লড়াই সংগ্রামে সামিল হওয়ার আহ্বান জানান বক্তারা।
সমাবেশে বক্তারা আরও বলেন, ‘লকডাউনের কারণে কর্মহীন অপ্রাতিষ্ঠানিক সেক্টরের ৫ কোটি শ্রমিকদের জন্য সরকারের কোন আয়োজন নেই। কাজের পরিপূর্ণ নিয়োগ প্রক্রিয়া না থাকাসহ বিভিন্ন কারনে নির্মাণ শ্রমিক, হকার, দোকান কর্মচারী, পরিবহন শ্রমিক, দর্জি শ্রমিক, হোটেল শ্রমিক, দিনমজুর, রিক্সাচালক, গৃহপরিচারিকা, পরিচ্ছন্নতা কর্মীরা তাদের বেতন-ভাতা পাচ্ছে না। ফলে তাদের নিত্য প্রয়োজনীয় খাদ্য সামগ্রী কিনতে পারছে না। ছেলে মেয়েদের নিয়ে তাদের না খেয়ে দিনাতিপাত করতে হচ্ছে। সিলেটে চা শ্রমিকদের এই করোনার মধ্যেও কাজ করাচ্ছে চা বাগানের মালিকরা। আবার এই আজুহাত এ পর্যাপ্ত ত্রানও দিচ্ছে না সরকার। আমাদের সরকার শ্রমিকদের জীবন চালানোর মত খাদ্য-অর্থ সহায়তা তাদের বাড়িতে পৌঁছে দেওয়ার ব্যবস্থা না করায় এসব শ্রমিকরা কাজের খোজে বা ত্রাণের সন্ধানে বাইরে ভীড় করছে, ফলে ভাইরাস সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ছে। সারা দুনিয়ায় মানুষ স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বিগ্ন, মানুষকে ঘরে রাখার জন্য নানা আয়োজন করা হচ্ছে। অথচ বাংলাদেশের জিডিপি প্রবৃদ্ধিতে যাদের সর্বাধিক অবদান সেই শ্রমিকদের রক্ষায় সরকার কোন দায়িত্ব পালন করছে না। কিভাবে মালিকদের ক্ষতি পোষানো যায় – সে লক্ষ্যে সরকার তৎপর। এই পরিস্থিতি আরো একবার প্রমাণ করলো – এই সরকার ও রাষ্ট্রব্যবস্থা পুঁজিপতি মালিকশ্রেণীর স্বার্থ রক্ষাকারী, শ্রমিকদের তারা মানুষ বলে গণ্য করে না, মুনাফা উৎপাদনের কল-কব্জা হিসেবে দেখে।’
সমাবেশে বক্তারা দাবি জানান, ঈদের আগে সকল সেক্টরের শ্রমিকদের ১০০% বেতন বোনাস পরিশোধ করতে হবে। লে-অফ, শ্রমিক ছাঁটাই বন্ধ করতে হবে। শ্রমজীবী ও নিম্নবিত্ত মানুষের জন্য খাদ্য-অর্থ ও চিকিৎসা সহযোগিতা নিশ্চিত করতে হবে। আন্দোলনরত শ্রমিকদের ওপর পুলিশী হামলা বন্ধ করতে হবে, তাদের ন্যায্য দাবি মানতে হবে।
আরসি-০৮