কবির আহমদ
মার্চ ১৩, ২০২১
০৫:১০ পূর্বাহ্ন
আপডেট : মার্চ ১৩, ২০২১
১১:২৫ অপরাহ্ন
সিলেটের কোম্পানীগঞ্জে 'বখাটের হুমকির' পর ১০ম শ্রেণির ছাত্রী লিমা বেগম (১৭) আত্মহত্যা করার প্রমাণ থাকার পরেও বখাটেদের বিরুদ্ধে মামলা করার জন্য বার বার থানায় গেলেও পুলিশ মামলা নিচ্ছে না বলে সাংবাদিকদের কাছে অভিযোগ করেছেন তার মা আয়েশা বেগম।
গত রবিবার কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার চাটিবহর পূর্বপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটেছে বলে তিনি জানান। লিমা বেগম চাটিবহর পূর্বপাড়ার প্রবাসী চান্দ আলীর মেয়ে।
থানায় দেওয়া অভিযোগ থেকে জানা গেছে, আত্মহত্যাকারী লিমা ছাতক চন্দ্রনাথ বালিকা উচ্চবিদ্যালয়ে লেখাপড়ার সুবাদে প্রতিদিন নৌকাযোগে নিজ বাড়ি থেকে স্কুলে আসা-যাওয়া করত। নৌকায় আসা-যাওয়ার পথে চাটিবহর টিলাপাড়া গ্রামের নজরুল ইসলামের বখাটে পুত্র তোফায়েল দীর্ঘদিন থেকে লিমাকে কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। বিষয়টি সহ্য করতে না পেরে দীর্ঘদিন পর লিমা তার মাকে জানায়। পরবর্তীতে লিমার মা আয়েশা বেগম তোফায়েলের পিতা-মাতাকে বিষয়টি জানালে তোফায়েল আরও ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে।
ঘটনার দিন গত রবিবার সকাল ১০টার দিকে তোফায়েল লিমাদের বাড়িতে এসে প্রকাশ্যে অকথ্য ভাষায় গালাগাল ও বিভিন্ন প্রকার হুমকি প্রদান করে। তোফায়েল লিমার বাড়ি থেকে চলে যাওয়ার পর লোকলজ্জার ভয়ে নিজ ঘরে ঢুকে কীটনাশক পান করে লিমা।
কীটনাশকের বিষক্রিয়ায় আক্রান্ত লিমাকে তাৎক্ষণিকভাবে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স নিয়ে গেলে ডাক্তাররা প্রাথমিক চিকিৎসা দিয়ে তাকে সিলেটের এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে স্থানান্তর করেন। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বেলা সোয়া ১টায় লিমা মৃত্যুবরণ করে। এ ঘটনার পর পরই বখাটে তোফায়েলসহ তার পরিবারের সদস্যরা গা ঢাকা দিয়েছেন।
লিমার মা আয়েশা বেগম বলেন, 'আমার স্বামী ও ছেলে প্রবাসে থাকার সুযোগে বখাটে তোফায়েল দীর্ঘদিন ধরে আমার মেয়েকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দিয়ে আসছিল। স্কুলে যাওয়ার পথে তাকে প্রায়ই হেনস্তা করত সে। ঘটনার দিন সে আমার বাড়িতে এসে অকথ্যভাবে গালিগালাজ ও হুমকি প্রদান করে। লোকলজ্জায় আমার মেয়ে বিষপান করে আত্মহত্যা করেছে।'
আয়েশা বেগমের বরাত দিয়ে লিমার ভগ্নিপতি মাওলানা ফারুক আহমদ জানান, লিমার লাশ ময়নাতদন্ত শেষে দাফন করার পর কোম্পানীগঞ্জ থানায় অভিযোগ দায়ের করতে গেলে থানার ওসি কে এম নজরুল ইসলাম অভিযোগ নিতে বিভিন্ন অজুহাত দেখিয়ে গড়িমসি করছেন। ঘটনার ৪ দিন পেরিয়ে গেলেও মামলা নিচ্ছে না কোম্পানীগঞ্জ থানার পুলিশ। মেয়ে হারানোর ব্যথা বুকে ধরে অভিযোগপত্র হাতে নিয়ে ইউপি চেয়ারম্যানসহ স্থানীয় বিভিন্ন রাজনৈতিক ব্যক্তির দ্বারস্থ হয়েও নিরাশ হচ্ছেন লিমার মা আয়েশা বেগম।
অভিযোগ গ্রহণ না করার বিষয়ে জানতে কোম্পানীগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কে এম নজরুল ইসলামের সরকারি নম্বরে যোগাযোগ করে কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে গোয়াইনঘাট সার্কেলের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার প্রবাস কুমার সিংহ বলেন, 'যেকোনো বিষয়ে সত্যতা পাওয়া গেলে পুলিশ মামলা নিতে বাধ্য। এ ঘটনায় কেন মামলা নেওয়া হয়নি আমার জানা নেই। ঘটনা জেনে প্রয়োজনীয় আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।'