অভাবের তাড়নায় আত্মহত্যা : পরিবারের পাশে নেই উপজেলা প্রশাসন

ওসমানীনগর প্রতিনিধি


সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০
০১:২৬ পূর্বাহ্ন


আপডেট : সেপ্টেম্বর ১২, ২০২০
০১:২৬ পূর্বাহ্ন



অভাবের তাড়নায় আত্মহত্যা : পরিবারের পাশে নেই উপজেলা প্রশাসন

সিলেটের ওসমানীনগরে অভাবের তাড়নায় কিশোরী জেবিন বেগম আত্মহত্যার ঘটনার ৬ দিন পেরিয়ে গেলেও ওই পরিবারের খোঁজ নেয়নি উপজেলা প্রশাসন। জেবিনের মৃত্যুর বিষয়টি এলাকার সর্বত্র আলোচিত হলেও এ ব্যাপারে কিছুই জানেন না বলে জানিয়েছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা। 

তবে অসহায় জেবিনের পরিবারের সাহায্যার্থে এগিয়ে এসেছে ওসমানীনগর থানার পুলিশ ও স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদ। তাদের পক্ষ থেকে উক্ত পরিবারকে খাদ্যসহ বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হয়েছে।

জানা যায়, গত শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১১টার দিকে উপজেলার উমরপুর ইউনিয়নের আউশপুর গ্রামের বাবুল মিয়ার মেয়ে জেবিন বেগম (১৭) গলায় ফাঁস লাগিয়ে আত্মহত্যা করে। জেবিনের বাবা বাবুল মিয়া ৭-৮ বছর পূর্বে দ্বিতীয় বিয়ে করে তাদের ছেড়ে চলে যান। পাঁচ ভাই-বোনের মধ্যে জেবিন ২য়। তার বড় বোনের বিয়ে হয়ে গেছে। পরিবারে উপার্জনকারী কেউ না থাকায় অভাব-অনটনের মধ্য দিয়ে কাটছিল তাদের জীবন। অসুস্থ মা আনোয়ারা বেগম অন্যের বাড়িতে কাজ করে কোনোমতে ৫ জনের সংসার চালান। এতে প্রতিবেলা খাবারও তাদের জুটত না। ছোট ছোট ভাই-বোনদের অনাহারে থাকার কষ্ট সইতে পারত না জেবিন। সে এ নিয়ে হতাশায় ভুগতো। এলাকাবাসীর ধারণা, এমন হতাশা থেকেই আত্মঘাতি হয়েছে জেবিন।

জেবিনের মৃত্যুর পর তার পরিবারের অভাবের কথা জেনে ওসমানীনগর থানার পুলিশের পক্ষ থেকে অসহায় পরিবারকে খাদ্যসামগ্রী প্রদান করা হয়। এছাড়া স্থানীয় উমরপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানের পক্ষ থেকে চাল-ডালসহ নিত্যপণ্য ও অভাবী পরিবারকে স্বাবলম্বী করতে দু'টি ছাগল উপহার দেওয়া হয়। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে জেবিনের মায়ের জন্য 'স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা'রও ব্যবস্থা করা হচ্ছে। পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে অভাবের তাড়নায় কিশোরী জেবিনের আত্মহত্যার বিষয়টি ফুটে উঠলেও উপজেলা প্রশাসন থেকে ওই পরিবারের খোঁজ নেওয়া হয়নি।

জেবিনের ফুপা নুনু মিয়া বলেন, 'সাহায্য দূরে থাক, উপজেলা পরিষদ বা প্রশাসন থেকে কোনো প্রকার খোঁজ নেওয়ারও প্রয়োজন মনে করেনি কেউ।'

স্থানীয় ইউপি সদস্য সেলিম আহমদ বলেন, 'এই পরিবারটি খুব অভাবী। অভাবের কারণেই মেয়েটি মারা গেছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা পরিবারটিকে ব্যক্তিগতভাবে সহায়তা করে আসছি।'

উমরপুর ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান গোলাম কিবরিয়া বলেন, 'জেবিনের পরিবারকে মাসে ৩০ কেজি চাল দেয়া হতো এবং স্থানীয়রাও সাহায্য করেন। আমি ব্যক্তিগত পক্ষ থেকে সহায়তা করছি। ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে জেবিনের মাকে স্বামী পরিত্যক্ত ভাতা প্রদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে।'

ওসমানীনগর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শ্যামল বণিক বলেন, 'আমাদের প্রাথমিক তদন্তে অভাবে কারণেই মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে বলে মনে হচ্ছে। আমরা ওই পরিবারকে কিছু খাদ্যসামগ্রী প্রদান করেছি।'

এ প্রসঙ্গে ওসমানীনগর উপজেলার নির্বাহী কর্মকর্তা মোছা. তাহমিনা আক্তার বলেন, 'এ বিষয়ে আমি কিছুই জানি না। কেউ আমায় কিছু জানায়নি।'

 

ইউডি/আরআর-০৭