সজীব দেবরায়, কমলগঞ্জ
আগস্ট ২৪, ২০২০
০১:০২ পূর্বাহ্ন
আপডেট : আগস্ট ২৪, ২০২০
০৭:১৪ পূর্বাহ্ন
দিগন্ত বিস্তৃত মাঠজুড়ে এখন দোলা দিচ্ছে পাকা সোনালি ধান। বিস্তৃত সোনালি ফসলের মাঠ এখন যেন প্রাকৃতিক সৌন্দর্যকে আরও বিকশিত করে তুলেছে। মাঠের পর মাঠ ছড়ানো পাকা ধানের সোনালি আভা ও মন মাতানো গন্ধে বিভোর চারপাশ। মৌলভীবাজার জেলার কমলগঞ্জ উপজেলার প্রতিটি গ্রামে এখন চলছে আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের উৎসব। চলতি বছরে করোনা দুর্যোগকে সঙ্গে নিয়ে আউশের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যেতে সক্ষম হয়েছে কৃষি পরিবারগুলো। করোনার সংকটকালে আউশ ধান কাটা ও মাড়াই এবং আমন ধান রোপণে এখন ব্যস্ত সময় পার করছেন উপজেলার কৃষকরা।
উপজেলার কমলগঞ্জ পৌর এলাকা, মুন্সিবাজার, শমসেরনগর, পতনঊষারসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চলতি মৌসুমে আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন কমলগঞ্জের প্রত্যন্ত এলাকার কৃষকরা। করোনার প্রাদুর্ভাবে শ্রমিক সংকটের কারণে ঘরের নারী-পুরুষ একত্রে যোগ দিয়েছেন কৃষিকাজে। ভালো ফসল উৎপাদন হওয়ায় হাতে হাত মিলিয়ে কাজ করছেন তারা। করোনা পরিস্থিতিতে আউশের ভালো ফলন হওয়ায় কৃষকদের মুখে ফুটেছে হাসি।
এদিকে আউশ ধান কাটা ও মাড়াইয়ের পাশাপাশি চলতি মৌসুমে আমন ধানের চারা রোপণের কাজ করছেন কৃষকরা। জমিতে পানি সেচ দিয়ে জমি প্রস্তুত করে বীজতলা থেকে চারা তুলে রোপণ করছেন তারা। ভালো ফসল উৎপাদনের স্বপ্ন নিয়ে কাজ করছেন তারা। করোনাভাইরাস পরিস্থিতিতে শ্রমিক সংকটের কারণে আউশ ধান কাটা ও আমন ধানের চারা রোপণে কিছুটা বিলম্ব হচ্ছে তাদের। এরপরও থেমে নেই তারা।
উপজেলা কৃষি অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় এবার আউশ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। উপজেলার ৯টি ইউনিয়ন ও ১টি পৌরসভা মিলিয়ে এবার আউশ ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্র ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৮শ ৮৮ হেক্টর। আর অর্জিত হয়েছে ১২ হাজার ৯শ ৪৫ হেক্টর। এ বছর চালের লক্ষ্যমাত্রা ২.৬৩ মেট্রিক টন ধরা হলেও অর্জিত হয়েছে ২.৮৫ মেট্রিক টন, যা বিগত ৩ বছরের তুলনায় বেশি লক্ষ্যমাত্রা অর্জন। কৃষি বিভাগের কর্মকর্তাদের পাশাপাশি মাঠপর্যায়ের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে চলতি মৌসুমে আউশ ধান আবাদে লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে এ উপজেলার কৃষকদের সার্বিক পরামর্শ দেওয়া হয়েছে। অনুকূল আবহাওয়া থাকায় ও সঠিক সময়ে বৃষ্টিপাত হওয়ায় এবার আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। ধানের উৎপাদন ভালো হওয়াতে একদিকে যেমন কৃষক পরিবার খুশি, অন্যদিকে বিভিন্ন এলাকায় দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তারাও আউশ ধান উৎপাদন দেখে বেশ মুগ্ধ।
কৃষক রামানন্দ মালাকার, মনির মিয়া, গৌরাঙ্গ দেব, জাফর আলী, কাজল মল্লিকসহ কয়েকজন কৃষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বিগত কয়েকবছরের তুলনায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে। তাছাড়া বাজারে ধানের দামও ভালো। এবার ৬৪০ টাকা থেকে ৭০০ টাকা দরে ধান বিক্রি হচ্ছে, যা গতবছরের তুলনায় বেশি। তবে করোনাভাইরাসের কারণে প্রয়োজনীয় শ্রমিক সংকট রয়েছে। এছাড়া যে পরিমাণ শ্রমিক রয়েছে, তাদের মজুরির পরিমাণও বেশি। তবে ধানের বাজারদর বাড়তি থাকলে এবারের আউশ আবাদে ক্ষতি হবে না বলে আশাবাদী তারা।
কৃষকরা আরও জানান, আউশ ধান কাটা ও মারাইয়ের পাশাপাশি চলছে আমন ধান রোপণের ব্যস্ততা। বীজতলা থেকে চারা উত্তোলন, বীজ বপনের উপযোগী করে জমি তৈরি ও চারা গাছ রোপণসহ চাষের জন্য প্রয়োজনীয় নানা কাজ চলছে জমিতে। চাষের জন্য তৈরি হওয়া জমিতে দ্রুত চলছে রোপণের কাজ। তাদের প্রত্যাশা, আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে আউশের মতো আমনেরও বাম্পার ফলন হবে। আবার অনেক কৃষক প্রায় সপ্তাহখানেক আগে আমন রোপণের কাজ শেষ করেছেন। সব চাষি ভালো ফলনের আশায় ফসলের যতœ নিতে ক্ষেতের জমিতে সময় দিচ্ছেন। লাগানো চারা ধানগুলোর নানাভাবে পরিচর্যা করছেন তারা।
উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা আশরাফুল আলম জানান, আবহাওয়া অনুকূলে থাকায় এ বছর আউশের বাম্পার ফলন হয়েছে। চলতি বছর আউশের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১২ হাজার ৮শ ৮৮ হেক্টর। আর অর্জিত হয়েছে ১২ হাজার ৯শ ৪৫ হেক্টর, যা গতবছরের তুলনায় বেশি। বাজারে ধানের দাম ভালো। এভাবে ধানের দাম থাকলে কমলগঞ্জের কৃষকগণ লাভবান হবে।
তিনি আরও জানান, কৃষি বিভাগের লোকজন সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করছেন। এ বছর আমন ধান চাষাবাদের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে ১৭ হাজার ৩শ হেক্টর।
এসডি/আরআর-০৫