সুনামগঞ্জে করোনার ভয়াবহ বিস্তার

শামস শামীম, সুনামগঞ্জ


জুন ২৪, ২০২০
১১:০৪ অপরাহ্ন


আপডেট : জুন ২৪, ২০২০
১১:০৪ অপরাহ্ন



সুনামগঞ্জে করোনার ভয়াবহ বিস্তার

চলতি জুন মাসে করোনা রোগের সংক্রমণে রেকর্ড গড়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। গত ৩১ মে যেখানে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ১৪৪ জন, সেখানে আজ ২৪ জুন সেই সংখ্যা এসে দাঁড়িয়েছে ৮৭৫ জনে। মে মাসে কোনো মৃত্যু না থাকলেও জুন মাসে করোনায় মৃত্যুবরণ করেছেন ৫ জন। বর্তমানে ২১৪ জন হাসপাতালে ভর্তি আছেন। অন্যরা হোম আইসোলেশনে আছেন।

জেলায় প্রতিদিনই আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। সিলেট বিভাগে আক্রান্তের দিক দিয়ে দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সুনামগঞ্জ জেলা। সংক্রমণ বৃদ্ধির কারণে প্রশাসন গত ১৬ জুন জেলার ২টি পৌরসভাসহ ১৫টি এলাকাকে রেড জোন ঘোষণা করে লকডাউনের জন্য প্রস্তাব পাঠিয়েছে। সেই প্রস্তাব এখনও অনুমোদন না পাওয়ায় লোকজনের চলাচল ও ভিড় সবখানেই লক্ষ্যণীয়।

সুনামগঞ্জ জেলার সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, মে মাসের ৩১ তারিখ পর্যন্ত জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৪৪ জন। তখন পর্যন্ত কোনো মৃত্যু ছিল না। জুন থেকে আশঙ্কাজনকভাবে বাড়তে থাকে আক্রান্ত ও মৃত্যুর সংখ্যা। গত ঈদে ঢাকা, নারায়ণগঞ্জসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শ্রমিক, ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষের আগমনের কারণে করোনার বিস্তার ঘটেছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এখন সংক্রমণের সামাজিক বিস্তৃতিও ঘটেছে। 

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, লকডাউন তুলে নেওয়ার পর ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, চট্টগ্রামসহ করোনার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল শুরু হয়। এতে ব্যবসায়ী, শ্রমিকসহ নানা পেশার মানুষ অবাধে যাতায়াত করতে থাকেন। ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে ছাতক, সুনামগঞ্জ ও দোয়ারাবাজারে তুলনামূলক সহজ যাতায়াতের কারণে এসব এলাকায় আক্রান্তের হারও বেশি।

পরিসংখ্যান থেকে জানা যায়, গত ১ জুন সুনামগঞ্জ জেলায় করোনায় আক্রান্তের সংখ্যা ছিল ১৬৫ জন, ২ জুন ১৭৪ জন আর ৩ জুন সেই সংখ্যা বেড়ে হয় ২১৩ জন। ওইদিন ১ জনের মৃত্যু হয়। ৪ জুন আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছিল ২১৯ জন, ৫ জুন ২৪৭ জন আর ৬ জুন এ সংখ্যা ছিল ২৭০। ওইদিন মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৩ জনে। ৭ জুন আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭০ জন, ৮ জুন ৩০৪ জন, ৯ জুন ২৩৯ জন, ১০ জুন ৩৫০ জন, ১১ জুন ৩৯৬ জন ও ১২ জুন ৪১৮ জন। ১২ জুন জামালগঞ্জ উপজেলার এক রোগী মারা যান। ১৩ জুন আক্রান্ত বেড়ে দাঁড়ায় ৪৩২ জন, ১৪ জুন ৫১৮ জন, ১৫ জুন ৫৬৩ জন, ১৬ জুন ৬৪১ জন, ১৭ জুন ৬৯৯ জন, ১৮ জুন ৭১১ জন ও ১৯ জুন ৭৮৫ জন। পরদিন কোনো নমুনা সংগৃহিত না হওয়ায় শনাক্ত ছিল না। ২১ জুন রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়ায় ৭৮৮ জন, ২২ জুন ৭৯৫ জন এবং ২৩ জুন ৮২৪ জন। ওইদিন দক্ষিণ সুনামগঞ্জে আরেকজনের মৃত্যুর ঘটনা ঘটে।

সিভিল সার্জন কার্যালয়ের ২২ জুনের পরিসংখ্যান মতে, জেলায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ছাতকে। দ্বিতীয় অবস্থানে রয়েছে সুনামগঞ্জ সদর উপজেলা। আক্রান্তের সংখ্যা ছাতকে ২০৯ জন, সদরে ১৬৭ জন, দোয়ারাবাজারে ৬৮ জন, বিশ্বম্ভরপুরে ২৮ জন, তাহিরপুরে ২৮ জন, জামালগঞ্জে ৬৪ জন, দিরাইয়ে ২৩ জন, ধর্মপাশায় ১৮ জন, জগন্নাথপুরে ৬২ জন, দক্ষিণ সুনামগঞ্জে ৬২ জন এবং শাল্লা উপজেলায় ৩২ জন। গতকাল ২৩ জুন বিভিন্ন উপজেলায় আরও ৩১ জনের শরীরে করোনা শনাক্ত হয়েছে। এভাবে জুন মাসে ব্যাপক হারে বেড়েছে করোনা সংক্রমণের সংখ্যা।

স্বাস্থ্য বিভাগের সঙ্গে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, সংক্রমণের দিক দিয়ে এগিয়ে আছে ছাতক ও সদর উপজেলা। তাদের মতে, এই দুই উপজেলার সঙ্গে সরাসরি ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লাসহ করোনার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকার অবাধে যানবাহন চালু রয়েছে। এ কারণে এসব এলাকায় আক্রান্তের সংখ্যা বেড়েছে। এখন কমিউনিটি পর্যায়ে এর বিস্তৃতি ঘটে গেছে। দুশ্চিন্তায় আছেন সাধারণ মানুষজন।

সুনামগঞ্জ বিএমএ'র সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. সৈকত দাস বলেন, 'সুনামগঞ্জে সামাজিক দূরত্ব মেনে কোনো কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে না। গ্রামে কেউ এসব নিয়ে ভাবছেই না। তাছাড়া ঈদের পর স্রোতের মতো মানুষ সুনামগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করেছে। তাদের মাধ্যমে এখন কমিউনিটি ট্রান্সফরমেশন হয়েছে। এ কারণে বেড়েই চলছে করোনা সংক্রমণের হার। তাই সামাজিক দূরত্ব নিশ্চিত করতে প্রশাসনিক কঠোরতা ছাড়া বিকল্প নেই।'

সুনামগঞ্জ সিভিল সার্জন ডা. শামসুদ্দিন বলেন, 'লকডাউন খোলার পর এবং ঈদের ছুটিতে করোনার ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা থেকে মানুষ জেলায় এসে প্রবেশ করেছেন। সুনামগঞ্জ ও ছাতকের আক্রান্তের সংখ্যার দিকে লক্ষ্য করলেই বোঝা যায় বাইরের লোকদের মাধ্যমেই করোনার বিস্তার ঘটেছে। কারণ ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ থেকে সদর ও ছাতকের সঙ্গে সরাসরি দূরপাল্লার বাসের যাতায়াত রয়েছে। তবে যারা আক্রান্ত হচ্ছেন, তাদের চিকিৎসা নিশ্চিতের পাশাপাশি টেস্টও বাড়ানো হচ্ছে। সবাই মিলেই ভয় তাড়িয়ে করোনাকে মোকাবেলা করতে হবে।'

তিনি বলেন, 'জুন মাসে করোনার উদ্বেগজনক বিস্তারের কারণে আমরা ১৮টি এলাকাকে রেড জোন করে লকডাউনের আবেদন করেছি। এখনও প্রশাসনিক অনুমোদন পাইনি।'

 

এসএস/আরআর-০২