নিজস্ব প্রতিবেদক
এপ্রিল ২৭, ২০২০
০৬:১১ পূর্বাহ্ন
আপডেট : এপ্রিল ২৭, ২০২০
০৬:১১ পূর্বাহ্ন
নগরের জেল রোড এলাকায় বিচ্ছিন্নভাবে ঠেলাগাড়িতে করে জিলাপি বিক্রি করছেন এক বিক্রেতা। দৃশ্যটি আজ রবিবার বিকেলে ফ্রেমবন্দি করেছেন -এইচএম শহিদুল ইসলাম
পবিত্র রমজান মাস শুরু হলো। রোজাদারেরা দুদিন ইফতারও সেরে ফেললেন। তবে রমজানের প্রথম দুদিন চোখে পড়েনি চিরচেনা সেই ইফতারি বেচাকেনার ধুম। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে সিলেট নগরের কোনো দোকান-রেস্তোরাঁতে ইফতারসামগ্রী বিক্রি হচ্ছে না। এ কারণে ঘরে তৈরি খাবার দিয়েই সিলেটের মানুষজন এবার ইফতার সারছেন।
গত শনি ও রবিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত দুইদিন নগরের বিভিন্ন এলাকায় সরেজমিনে দেখা গেছে, কোথাও ইফতারির বাজার বসেনি। বহুদিনের চেনা রেস্তোরাঁগুলোর সামনে ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় আর বাজারের দোকানগুলোতে মুখরোচক ভাজাপোড়ার পসরা সাজিয়ে বসার চিরচেনা দৃশ্যও উধাও। একেবারেই অচেনা, অন্য রকম পরিবেশে পেরিয়ে গেল মাহে রমজানের প্রথম দুদিন। তবে নগরের তিনটি স্থানে ভ্রাম্যমাণ তিনজন ব্যবসায়ীকে জিলাপি বিক্রি করতে দেখা গেছে। ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, এবার রমজান শুরু হওয়ার কয়েকদিন আগে থেকেই স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ হতে মাইকিং করা হয়েছে, কোথাও ইফতারির বাজার বসানো যাবে না। ব্যবসায়ীরা করোনাভাইরাসের বিস্তার ঠেকাতে প্রশাসনের আহ্বানে সাড়া দিয়ে সহযোগিতা করেছেন, কেউ দোকান বসাননি।
উপশহর এলাকার বাসিন্দা কবির আহমদ বলেন, রমজানে ইফতারসামগ্রী বাসায় যেমন প্রস্তুত করা হতো, তেমনই কিছু পদ আমরা বাইর থেকে কিনে আনতাম। গত বছর ত্রিশেক যাবত এমনটাই আমি পরিবারে দেখে আসছি। অথচ এবার পুরো চিত্র বদলে গেছে। রোজার প্রথম দুইদিন বাসাতেই ইফতারের সব পদ তৈরি করা হয়েছে। এক অর্থে এটা খুবই ভালো হলো যে, শতভাগ ঘরের রান্না খাবার দিয়েই আমরা ইফতারি সেরেছি। আবার এ-ও খারাপ লাগছে, বহুদিনের চেনা দৃশ্য আর ঐতিহ্যে এবার ছেদ পড়ল।
চল্লিশোর্ধ্ব রোকশানা বেগম নামের এক গৃহিণীর বাসা নগরের বিলপাড় এলাকায়। তিনি জানান, ছোলা, বেগুনি, চপ, শাঁকের বড়া, পেঁয়াজু, আখনিসহ ১২ রকম পদের ইফতারি তিনি বাসায় প্রস্তুত করেছেন। অন্যান্য বছর অর্ধেক ইফতারসামগ্রী বাজার থেকে কিনে আনাতেন। এবার ঘরেই সব সামগ্রী তৈরি করছেন। তাঁকে ইফতারসামগ্রী তৈরিতে মেয়ে ও স্বামী সহায়তা করছেন। পরিবারের সবাই মিলে অনেকটা উচ্ছ্বাসের সঙ্গেই ইফতার তৈরি করছেন। এটা এক ভিন্ন অভিজ্ঞতাও। এতে পারিবারিক বন্ধন আরও সুদৃঢ় হচ্ছে।
নগরের একাধিক ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, নগরের প্রায় সবকটি এলাকা ও পাড়া-মহল্লায় শামিয়ানা টাঙিয়ে ইফতারসামগ্রীর পসরা বসাতেন ব্যবসায়ীরা। বেলা তিনটার পর থেকেই ক্রেতাদের ভিড় বাড়ত। হালিম, জিলাপি, তেহারি, আখনি, খিচুরি, চপ, পেঁয়াজু, ছোলা, দইবড়াসহ হরেক রকমের ঝাল-মিষ্টির ইফতারির পদ কিনতে মানুষজনের গিজগিজ থাকত। এবার সবকটি দোকান ফাঁকা, তালাবদ্ধ। কোথাও নেই ইফতারের আয়োজন। রোজা ঘিরে আগে ব্যবসায়ীদের ভালো একটা বেচাকেনা হতো। এবার তা না হওয়ায় ব্যবসায়ীদের চরম আর্থিক ক্ষতির মুখোমুখি হতে হচ্ছে। তবে মানুষের ভালোর স্বার্থেই তাঁরা দোকান না বসিয়ে প্রশাসনের নির্দেশনা মেনে চলছেন।
জিন্দাবাজার এলাকার একজন ব্যবসায়ী জানিয়েছেন, প্রতি বছর রমজানের সময় হোটেল-রেস্তোরাঁগুলোতে বিভিন্ন সংগঠন ইফতার মাহফিলের আয়োজন করত। এবার সেটাও বন্ধ রয়েছে। ফলে ব্যবসায়ীদের প্রচুর আর্থিক ক্ষতিতে পড়তে হবে। পাঠানটুলা এলাকার দুজন বাসিন্দা জানিয়েছেন, বাসার জন্য কিছু বাজার করতে তাঁরা বাইরে গিয়েছিলেন। প্রতি বছর যেসব স্থানে ইফতারি বিক্রি হতো, এবার তারা সেসব স্থানগুলো নির্জন পড়ে থাকতে দেখেছেন। চেনা দৃশ্যের হঠাৎ এমন অপরিচিত রূপ দেখে তাঁদের খারাপ লেগেছে। তবে বর্তমান পরিস্থিতিতে স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্তে রেস্তোরাঁগুলো বন্ধ রাখার বিষয়টি যৌক্তিক বলেই তাঁরা মন্তব্য করেছেন।
সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বলেন, করোনাভাইরাসের বিস্তার রোধে স্থানীয় প্রশাসনের নির্দেশনার কারণে ব্যবসায়ীরা এবার কোথাও ইফতারির দোকান বসাননি। সবাই তাঁদের রেস্তোরাঁ তালাবদ্ধ করে রেখেছেন। ব্যবসায়ীরা এ নির্দেশনা বাস্তবায়নে আন্তরিকতার পরিচয় রাখছেন। তবে পুলিশ পুরো মহানগরে বিষয়টি নিয়মিত পর্যবেক্ষণ ও তদারকি করছে। কোনো অবস্থাতেই যেন কেউ খোলাবাজার, রেস্তোরাঁ কিংবা ফুটপাতে ইফতারসামগ্রী বিক্রি করতে না পারেন, সেটি সার্বক্ষণিক নজরদারিতে রাখা হয়েছে।