করোনার আতঙ্কে হবিগঞ্জবাসী

নিজস্ব প্রতিবেদক


এপ্রিল ২৬, ২০২০
১০:১৮ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২৬, ২০২০
১০:১৮ পূর্বাহ্ন



করোনার আতঙ্কে হবিগঞ্জবাসী

সিলেট বিভাগের চার জেলায় করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে ৭৯ জনের। এর মধ্যে ৪৭ জনই হবিগঞ্জের বাসিন্দা। গতকাল শনিবার জেলায় প্রথমবারের মতো করোনা আক্রান্ত একজনের মৃত্যুও হয়।

 

সিলেট বিভাগের চার জেলার মধ্যে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে সবচেয়ে বেশি হবিগঞ্জ জেলায়। জেলা প্রশাসনের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা থেকে শুরু করে চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীরা পর্যন্ত আক্রান্ত হয়েছেন। করোনার ঝুঁকিতে গত কয়েকদিন আগে অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে লাখাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স। এসব সার্বিক অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে ভীতি আর আতঙ্কে রয়েছেন হবিগঞ্জবাসী। তাঁরা দ্রুত পুরো জেলা ‘লকডাউন’ (অবরুদ্ধ) ঘোষণার আহ্বান জানিয়েছেন। পাশাপাশি জনসমাগম এড়াতে স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি অনুরোধ করেছেন।

স্বাস্থ্য বিভাগ সিলেটের সর্বশেষ প্রকাশিত তথ্যানুযায়ী, সিলেট বিভাগের চার জেলায় সর্বমোট ৭৯ জন করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৪৭ জনই হবিগঞ্জের বাসিন্দা। সর্বশেষ গতকাল শনিবার বিকেলে করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলার চুনারুঘাট উপজেলার চন্ডিছড়া চা-বাগানের পাঁচ বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়। ওইদিন বিকেলে শিশুটিকে সিলেটের শহীদ শামসুদ্দিন আহমদ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল। ভর্তি হওয়ার কিছুক্ষণ পরই শিশুটির মৃত্যু হয়। এর আগে গত শুক্রবার তার শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছিল। এ শিশুর মৃত্যুর মধ্য দিয়ে জেলায় প্রথমবারের মতো করোনা আক্রান্ত হয়ে কারও মৃত্যুর ঘটনা ঘটল।

হবিগঞ্জের একাধিক বাসিন্দা অভিযোগ করেছেন, বিভাগের মধ্যে হবিগঞ্জে দ্রুততার সঙ্গে করোনাভাইরাসের রোগী বাড়ছে। অথচ জেলাটিকে এখনও ‘লকডাউন’ করা হয়নি। যদিও বেশ আগে স্থানীয় প্রশাসনের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী জেলাটিকে সারা দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ‘বিচ্ছিন্ন’ করে রাখা হয়েছে। কিন্তু এরপরও জেলার বিভিন্ন উপজেলার গ্রামীণ হাটবাজারে মানুষজন সামাজিক দূরত্ব না মেনেই ভিড় করছেন। অযথা মানুষজন বাইরে ঘোরাফেরা করছেন। এসব ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন নারায়ণগঞ্জ ও ঢাকা থেকে আসা গার্মেমেন্ট ও বিভিন্ন শিল্পপ্রতিষ্ঠানের শ্রমিক-কর্মচারীরা। এ বিষয়টিই মূলত হবিগঞ্জে করোনাভাইরাস ছড়াতে বেশি ভূমিকা রাখছে বলে স্থানীয়দের অনেকেই মনে করছেন।

আজমিরীগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দা আবদুর রহমান জানান, কেউ কোনো সামাজিক দূরত্ব মানছেন না। কোথাও এর কোনো বালাই নেই। হাটবাজারেও মানুষজন দেদারসে ভিড় করছেন। গ্রামে গ্রামে দিন-রাতে অবাধে চলছে আড্ডা। সে আড্ডায় যোগ দিচ্ছেন ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ছুটি পেয়ে বাড়িতে আসা চাকুরিজীবী এবং শ্রমিকেরা। এসব কারণে হবিগঞ্জ করোনাভাইরাসের জন্য সবচেয়ে বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বানিয়াচংয়ের এক বাসিন্দা বলেন, ‘হাওরে এখন বোরো ধান কাটার মৌসুম চলছে। বেকার হয়ে পড়ে অনেক মানুষ এখন ধান কাটার শ্রমিক হিসেবে হাওরে কাজ করছেন। এদের মধ্যে নারায়ণগঞ্জ ফেরত ব্যক্তিরাও রয়েছেন। এটি রীতিমতো ভীতি ও আতঙ্কের।’

এদিকে হবিগঞ্জে করোনা সংক্রমণ বিস্তারে সহায়ক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা) হবিগঞ্জ শাখার নেতৃবৃন্দ। গতকাল বিকেলে গণমাধ্যমে পাঠানো এক বিবৃতিতে সংগঠনের হবিগঞ্জ শাখার সভাপতি মো. ইকরামুল ওয়াদুদ ও সাধারণ সম্পাদক তোফাজ্জল সোহেল এ অভিযোগ করেন। তাঁরা যৌথ বিবৃতিতে জানান, করোনাভাইরাসে আক্রান্ত ব্যক্তি ও উপসর্গ নিয়ে মৃত্যুর ঘটনার পরও কঠোরভাবে সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ব্যবস্থা গ্রহণের পরিবর্তে সংক্রমণ বিস্তারে সহায়ক এমন অনাকাঙ্খিত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হচ্ছে। জেলা প্রশাসনকে তা রোধে ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।

বাপা নেতৃবৃন্দ বিবৃতিতে বেশ কয়েকটি দাবি উত্থাপন করেছেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে : জেলায় সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসায় ‘আইসিইউ’ ব্যবস্থা চালু, জেলাকে ‘লকডাউন’ ঘোষণা, পরিকল্পিতভাবে ত্রাণ কার্যক্রম পরিকল্পনা, চিকিৎসকসহ সংশ্লিষ্টদের পর্যাপ্ত পরিমাণে ব্যক্তিগত সুরক্ষা সরঞ্জাম (পিপিই) প্রদান, হাটবাজারে অপ্রয়োজনীয় মানুষের উপস্থিতি রোধ এবং জেলা প্রশাসন কর্তৃক হোটেল-রেস্তোরাঁ-মিষ্টির দোকান খোলা রাখার সিদ্ধান্ত বাতিল।

হবিগঞ্জের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ কামরুল হাসান বলেন, ‘হবিগঞ্জে যেন করোনাভাইরাসের বিস্তার না ঘটে, সে জন্য আন্তরিকভাবে কাজ করছি আমরা। নানামুখী পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এরপরও করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়ছে। তবে সেটা নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রাখতে আমরা সাধ্য অনুযায়ী চেষ্টা করছি। কেউ যেন ভীতি ও আতঙ্কে না থাকেন, সবাই যেন বাসায় থাকেন, আমরা এ আহ্বান জানাই। এই সময়টাতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চললেই কেবল একজন ব্যক্তি করোনাভাইরাস থেকে রক্ষা পেতে পারেন।’