কোম্পানীগঞ্জের সেই তরিকুলের বিরুদ্ধে দুই মামলা

কোম্পানীগঞ্জ প্রতিনিধি


এপ্রিল ২৪, ২০২০
০২:৪১ পূর্বাহ্ন


আপডেট : এপ্রিল ২৪, ২০২০
০২:৪১ পূর্বাহ্ন



কোম্পানীগঞ্জের সেই তরিকুলের বিরুদ্ধে দুই মামলা

সিলেটের কোম্পানীগঞ্জের সাংবাদিক নামধারী চাঁদাবাজ ও প্রতারক তরিকুল ইসলামের বিরুদ্ধে এবার চাঁদাবাজি ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে। গতকাল বুধবার (২২ এপ্রিল) এ দু'টি মামলা দায়ের করেন সিলেট পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর কোম্পানীগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম মো. সিরাজুল ইসলাম ও সিলেট জেলা ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের কোম্পানীগঞ্জ শাখার সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ মিয়া (মামলা নং ১৪ ও ১৫)।

মামলা দু'টির বিবরণ থেকে জানা যায়, কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ইসলামপুর গ্রামের শেরউল ইসলামের পুত্র তরিকুল ইসলাম (৩২) ও কালাইরাগ গ্রামের মৃত নূর মিয়ার পুত্র জামাল উদ্দিনসহ (৩২) অজ্ঞাতনামা আরও ৪-৫ জন বিবাদী সংঘবদ্ধ সাইবার অপরাধী ও চাঁদাবাজ চক্রের লোক। বিবাদীরা অন্যায় লাভের আশায় এ বছরের বিভিন্ন তারিখ ও সময়ে তাদের ব্যবহৃত বিভিন্ন ফেসবুক আইডিতে এবং ১ নম্বর আসামি তরিকুল ইসলামের সম্পাদনায় রেজিস্ট্রেশনবিহীন ও কথিত অনলাইন পোর্টাল 'দৈনিক সিলকো সংবাদ ডটকম'-এ এবং তার নিজস্ব ফেসবুক আইডিতে বিভিন্ন সময়ে ২ নম্বর আসামি জামাল উদ্দিনের সঙ্গে মিলে পল্লী বিদ্যুতের ডিজিএম সিরাজুল ইসলাম ও কোম্পানীগঞ্জ জোনাল অফিসের বিরুদ্ধে নানারকম কুৎসা রটনা, বিরক্তিকর, অপমানজনক, আক্রমণাত্মক, ভীতি প্রদর্শন, অপদস্ত ও সামাজিকভাবে হেয়প্রতিপন্ন করার উদ্দেশে বিভিন্নরকম মিথ্যা সংবাদ প্রকাশসহ ফেসবুকে মানহানিকর পোস্ট ও মিথ্যা বানোয়াট সংবাদ প্রচার অব্যাহত রেখে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনের বিভিন্ন ধারায় অপরাধ সংগঠিত করেছে। গত ৭ এপ্রিল ১ নম্বর আসামি তার ফেসবুক আইডি ও অনলাইন পোর্টাল সিলকো সংবাদ ডটকম-এ ডিজিএম এর বিরুদ্ধে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে রাষ্ট্র, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর সুনাম, ভাবমূর্তি, মারাত্মকভাবে ক্ষুণ্ণ করেছে ও নানারকম বিভ্রান্তি ছড়িয়েছে। ডিজিএম সিরাজুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে এর প্রতিবাদ করলে ১ নম্বর আসামি তরিকুল গত ৮ এপ্রিল সকাল ১১টায় তার অফিসে গিয়ে নানারকম হুমকি দিয়ে মাসিক ২০ হাজার টাকা চাঁদা দাবি করে।

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ১ নম্বর আসামি তরিকুলকে মাসিক চাঁদা না দিলে সে নিয়মিত মিথ্যা সংবাদ পর্ব আকারে প্রকাশ করার হুমকি দেয়। পরবর্তীতে ১২ ও ২০ এপ্রিল ১ নম্বর আসামি তরিকুল তার ফেসবুক আইডিতে ডিজিএম এর বিরুদ্ধে মানহানিকর এবং উপজেলাব্যাপী মানুষের মধ্যে পল্লী বিদ্যুতের বিরুদ্ধে শত্রুতা, ঘৃণা বা বিদ্বেষ সৃষ্টি করে আইনশৃঙ্খলার মারাত্মক অবনতি ঘটিয়ে পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির ব্যাপক ক্ষতিসাধন করার উদ্দেশে বিভিন্ন পোস্ট প্রদান করেছে। ফলে ডিজিএম এর মান মর্যাদা পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি-২ এর ভাবমূর্তি চরমভাবে ক্ষুণ্ণ ও ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। এসব অপরাধ অফিসে থাকাবস্থায় মোবাইল ও ইন্টারনেটের মাধ্যমে ডিজিএমের কাছে দৃশ্যমান হয়েছে।

অপরদিকে ট্রাক শ্রমিক নেতা মাহফুজ মিয়ার এজাহারে উল্লেখ করা হয়, গত ২০ এপ্রিল রাত ৮টায় আসামি তরিকুল ইসলাম সোহেলের নেতৃত্বে ৭-৮ জন অজ্ঞাতনামা আসামি সিলেট-ভোলাগঞ্জ সড়কের গ্রামীণ ব্যাংক ইসলামপুর শাখার সামনে জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন থামিয়ে চাঁদা উত্তোলন করেছে। তরিকুল নিজেকে বিভিন্ন সময় পুলিশ ও সাংবাদিক পরিচয় দিয়ে নানারকম অপকর্ম করে আসছে। সে বিভিন্ন সময় বেশ কিছু ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে নানাভাবে হুমকি-ধমকি দিয়ে চাঁদা আদায় করেছে। তার বিরুদ্ধে কেউ টু শব্দ করার সাহস পেতো না। 

এজাহারে আরও উল্লেখ করা হয়, ঘটনার রাতে জরুরি পণ্যবাহী যানবাহন থামিয়ে এমনকি এম্বুলেন্স চালকের কাছ থেকেও ৫০০ টাকা করে  জোরপূর্বক চাঁদা আদায় করেছে তরিকুল। চাঁদা দিতে না চাইলে চালকরা আসামিদের হাতে শারীরিক নির্যাতনের শিকার হন। তাই বাধ্য হয়ে চালকরা চাঁদা দেন। 

অপরদিকে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, প্রতারক চাঁদাবাজ তরিকুল ইসলাম বিভিন্ন সময়ে কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার বিভিন্ন সরকারি দপ্তরে গিয়ে হুমকি-ধমকি দিয়ে মাসিক চাঁদা দাবি করেন। নিয়মিত চাঁদা না দিলে বেশ কয়েকজন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে তার কথিত অনলাইন পোর্টালে মিথ্যা সংবাদ প্রচার করে হয়রানি করেন। শাহ আরেফিন, ভোলাগঞ্জ, দয়ারবাজার, কালাইরাগ ও উৎমা এলাকার বেশ কয়েকজন ব্যবসায়ী অভিযোগ করেন, প্রতারক তরিকুল গংদের যন্ত্রণায় আমরা অতিষ্ঠ।

বিশেষ করে উপজেলার বেশ কয়েকজন ইউপি চেয়ারম্যান, ইউপি সদস্যের বিরুদ্ধে নানা বানোয়াট ও মিথ্যা সংবাদ প্রচারের হুমকি দিয়ে চাঁদা দাবি করেছেন তিনি। স্থানীয় একাধিক চেয়ারম্যান ও ইউপি সদস্য বিষয়টি স্থানীয় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও প্রেসক্লাব নেতৃবৃন্দের নিকট মৌখিকভাবে অভিযোগ দিলে বিষয়টি মাসিক আইনশৃঙ্খলা কমিটির মিটিংয়েও আলোচনা হয়।

আরও জানা যায়, প্রতারক তরিকুল একসময় কোম্পানীগঞ্জ অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি পরিচয় দিয়ে নানা অপকর্মে জড়িয়ে পড়লে তাকে অনলাইন প্রেসক্লাব থেকে বহিষ্কার করা হয়। বিষয়টির সত্যতা নিশ্চিত করেছেন অনলাইন প্রেসক্লাবের সভাপতি রুহুল আমিন বাবুল ও সাধারণ সম্পাদক আব্দুল জলিল।

অন্য একটি সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি র‍্যাবের হাতে আটক হয়েছিলেন তরিকুল। তার বিভিন্ন অপকর্ম নিয়ে মুখ খুলতে শুরু করেছেন বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ। স্থানীয় সাংবাদিকদের কাছে নানাজন গোপনে বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত জানাচ্ছেন। কোম্পানীগঞ্জ প্রেসক্লাবের নেতৃবৃন্দ তার বিরুদ্ধে তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি জানিয়েছেন।

এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত তরিকুল ইসলামের মোবাইলে যোগাযোগ করার চেষ্টা করলে তা বন্ধ পাওয়া যায়।

এ বিষয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সজল কুমার কানুর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি মামলার সত্যতা নিশ্চিত করে বলেন, তরিকুলের বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ উর্ধতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে এবং মামলা দু'টি তদন্তাধীন রয়েছে।

 

এমকে/আরআর